শিলিগুড়ি পুরসভায় সমর্থন প্রত্যাহার তৃণমূলের
বাজেট অধিবেশনের মুখে শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র কংগ্রেসের গঙ্গোত্রী দত্তের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল তৃণমূল। তবে তারপরেও ধ্বনিভোটে বাজেট পাশ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন গঙ্গোত্রীদেবী। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ওই অধিবেশনে ধ্বনিভোটের পরে ফের ভোটাভুটি হয়েছে। তাতে তাঁরা বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় বাজেট অনুমোদিত হয়নি। বামেরা এই অধিবেশনে ছিলেনই না। বাজেট নিয়ে এই বিভ্রান্তিতে আগামী আর্থিক বছরে (২০১৩-১৪) শিলিগুড়ি শহরের উন্নয়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন পুর বাসিন্দারা।
এই পুরসভায় মোট কাউন্সিলর ৪৭ জন। তার মধ্যে এক জন পদত্যাগ করায় এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৪৬। এর মধ্যে কংগ্রেসের ১৪ জন। ‘বিতর্কিত’ চেয়ারম্যান নান্টু পালকে নিয়ে তৃণমূলের কাউন্সিলর ১৫ জন এবং বামেদের ১৭ জন। কংগ্রেসের দাবি, এই অবস্থায় তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলেও পুরবোর্ড ভাঙবে না। কারণ মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে অন্তত ১৬ কাউন্সিলরের সমর্থন তাঁদের পেতেই হবে। গঙ্গোত্রীদেবীর বক্তব্য, “বাজেট প্রস্তাবও আমরা ধ্বনি ভোট করিয়ে নিয়েছি। তাই ভবিষ্যতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।” কিন্তু উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের দাবি, “চেয়ারম্যান ধ্বনিভোট নয়, ভোটাভুটিই চেয়েছিলেন। সেই মতো ভোটাভুটি হয়েছে। আমাদের ১৪ জন বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় বাজেট আটকে গিয়েছে।” চেয়ারম্যান নান্টুবাবুও বলেন, “বাজেট পাশ হয়নি।” পুরসভা সূত্রে খবর, চেয়ারম্যান ও কমিশনার নগর উন্নয়ন দফতরকে এই বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টও পাঠাতে পারেন। সেক্ষেত্রে নগর উন্নয়ন দফতর পুরসভার আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে।

শিলিগুড়ি পুরসভার বাজেট বিতর্ক সভায় ভোটাভুটির দাবিতে
বিক্ষোভ তৃণমূল কাউন্সিলরদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

এই দিন বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার পরেই কার্যত হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেস ও তৃণমূল কাউন্সিলরেরা একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করতে থাকেন। এক সময়ে গৌতমবাবু সহ তৃণমূলের নেতারা অধিবেশন কক্ষ ছেড়েই বেরিয়ে যান। কংগ্রেসের দাবি তারপরেই ধ্বনিভোট হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান ভোটাভুটি চাওয়ায় তৃণমূল কাউন্সিলরেরা ফের অধিবেশন কক্ষে আসেন। তখন কংগ্রেসের কাউন্সিলেরা ধ্বনিভোটে বাজেট পাশ হয়ে গিয়েছে দাবি করে অধিবেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান। সেই সময়ে তৃণমূলের ১৪ কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাজেটের বিপক্ষে ভোট দেন।
পুরবাসিন্দাদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে এখন পুরসভা কার্যত অচলই হয়ে পড়ল। তবে মেয়রের বক্তব্য, “পুরসভার দৈনন্দিন কাজকর্ম কিছুই আটকে থাকবে না। যেমন চলার তেমনই চলবে।” মন্ত্রী গৌতমবাবুর জবাব, “উন্নয়ন হচ্ছে না বলেই আমরা মেয়রের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) এলাকার মধ্যে পড়ে শিলিগুড়ি পুরসভা। এসজেডিএ এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মাধ্যমেই পুর এলাকার উন্নয়নের কাজ আমাদের সরকার চালিয়ে যাবে।” গৌতমবাবু এখন এসডেজিএ-র চেয়ারম্যানও।
তবে তাতে পুর বাসিন্দাদের আশঙ্কা পুরো কাটছে না। তার কারণ, সেই ২০০৯ সালে এই পুরবোর্ড গঠনের সময় থেকেই কংগ্রেস-তৃণমূল এবং বামেদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনে সমস্যা তৈরি হয়। পুরসভায় সেই নির্বাচনে কংগ্রেস-তৃণমূল ১৫টি করে আসন জেতার পরে মেয়র পদের দখল নিয়ে যুযুধান হয়। তৃণমূলের মেয়র পদপ্রার্থী গৌতমবাবুকে হারিয়ে বামেদের সমর্থনে জেতেন কংগ্রেসের গঙ্গোত্রীদেবী। প্রায় ২০ মাস ওই বোর্ড চলেছে। পরে তৃণমূলের শর্তে রাজি হয়ে মেয়র পদত্যাগ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তৃণমূলের সমর্থনে তিনি আবার মেয়র হন। ডেপুটি মেয়র সহ ৫টি মেয়র পারিষদ তৃণমূল পায়। এ যাত্রায় ২০ মাস চলার পরে নান্টুবাবুর দলত্যাগ নিয়ে ফের কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তারই জেরে এ বার বাজেট নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।
সাড়ে ৩ বছরের পুরবোর্ডের এই দশা দেখে বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি ভুলে গিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কাজেই ব্যস্ত। এমনকী, ‘দায়িত্বশীল’ হিসেবে নিজেদের দাবি করলেও পুরসভার বিরোধী দল বামেরাও ‘নিরাপদ দূরত্বে’ থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনে সারা দিন ব্যস্ত ছিলেন নকল বাজেট অধিবেশনে। পুরসভার বিরোধী দলনেতা নুরুল ইসলামের সাফাই, “কংগ্রেস-তৃণমূল বোর্ড চালানোর নামে কী করছে মানুষ দেখছেন। নান্টুবাবুকে নিয়ে আদালতে ওঁরা কুস্তি করছেন, তাঁকেই চেয়ারম্যান মেনে বাজেট পেশ করে দোস্তি দেখাচ্ছেন। উন্নয়ন হচ্ছে না।” মন্ত্রী গৌতমবাবুর কথায়, “গোড়া থেকেই মেয়র দিশাহীন। তাই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারিনি। ব্যর্থতার দায়িত্ব ওঁকেই নিতে হবে। পুর এলাকার উন্নয়নও যাতে ঠিকঠাক চলে তা আমরা দেখছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.