কংগ্রেস প্রভাবিত তিন জেলায় এক দিনে পঞ্চায়েত ভোট করানোর যে সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিয়েছে, তাকেই রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগাতে সক্রিয় হলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, তৃণমূল সরকারের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে বামফ্রন্ট নয়, তারা আসলে ভয় পাচ্ছে কংগ্রেসকেই। তা রুখে দাঁড়িয়ে প্রচারে নামার পাশাপাশি প্রদেশ নেতৃত্বকে রাজ্যপাল এবং নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি নেতা শাকিল আহমেদের কথায়, “এটা পরিষ্কার যে, অসৎ উপায়ে পুলিশ, প্রশাসন-সহ যাবতীয় সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওই তিন জেলার পঞ্চায়েত দখল করতে মরিয়া তৃণমূল।”
রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করে সরকারকে ভোটের ঘোষিত দিন প্রত্যাহারের পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ জানায় প্রদেশ কংগ্রেসের দল। কোন দিন কোন জেলার ভোট হবে, তা ঠিক করার অধিকার রাজ্য সরকারের নেই বলেও জানায় তারা। পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “কমিশনের সঙ্গে সংঘাতের জেরে ভোট পিছিয়ে সরকার পঞ্চায়েতগুলির ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চাইছে।” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট করানোর দাবি জানায়।
এ দিনই খড়্গপুরে রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবিধান মেনে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তাই কমিশনকে পছন্দ হোক বা না-হোক, ওঁকে সংবিধান মেনেই চলতে হবে।” অধীরবাবুর কথায়, “ওরা (তৃণমূল) মনে করছে, কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে একক ভাবে ক্ষমতা রাখা যাবে। তাই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। পঞ্চায়েত ভোটেও করবে। পঞ্চায়েতের পর কংগ্রেসের সঙ্গে লাইন করতে দিল্লি দৌড়বে!”
সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হাইকম্যান্ডকে জানান যে, তৃণমূল সম্পর্কে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাতে ইন্ধন জুগিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে কেন্দ্রের দুই মন্ত্রী কমল নাথ ও জয়রাম রমেশের ফোন। অনেকেই মনে করতে শুরু করেছেন যে তৃণমূলের ব্যাপারে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব নরম মনোভাব নিচ্ছেন। শাকিল অবশ্য বলেন, “তৃণমূলের প্রতি নরম হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ স্থির করা নিয়ে রাজ্যের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে দিল্লি থেকেই প্রদেশ নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে যোগাযোগও রাখছে দিল্লি।” রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের অনেকেরই অভিযোগ, কেন্দ্রের টাকায় উন্নয়ন প্রকল্প করে এই ভোটের আগে নাম কুড়োতে চাইছে তৃণমূল। দিল্লির নেতারা তাঁদের বলেছেন, রাজ্যের যে ভাঁড়ে মা ভবানী, অধিকাংশ উন্নয়নই কেন্দ্রের টাকায় হচ্ছে, সে কথা জোর দিয়ে প্রচার করার জন্য। |