রাজ্য সরকার ‘ভাড়া বাড়াব না’ বলে গোঁ ধরার ফলেই পরিবহণে যাবতীয় জটিলতা। তবে অন্তত একটি ক্ষেত্রে জেদ থেকে সরে এসেছে তারা। এসি (ভলভো) বাসের ভাড়া প্রথম ধাপ ছাড়া প্রতিটি স্তরে পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের পরিবহণ দফতর।
এতে অবশ্য অন্য সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাধারণ বাসের মালিকদের অভিযোগ, তাঁরা সরকারের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, ভলভোর ভাড়া এক দফায় পাঁচ টাকা বাড়ানো হল। অথচ দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও সাধারণ বাসের ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না। এতে রাজ্য পরিবহণের সঙ্কট আরও বাড়বে। কয়েক দিন আগেই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বিধানসভায় স্বীকার করেছিলেন, রাজ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে। মালিকেরা জানান, অবিলম্বে ভাড়া না-বাড়ালে অচিরেই আরও বাস বসে যাবে। দুর্ভোগ বাড়বে যাত্রীদের। |
তবে ভলভোর ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন বাস-মালিকদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটসের নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এসি বাসের ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু আমাদেরও খরচ যে-হারে বেড়েছে, তাতে আর বাস চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রী নিজেই বলছেন, বাস বসে যাচ্ছে।” এই অবস্থায় পরিবহণমন্ত্রীর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভাড়া বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছেন তপনবাবুরা। তিনি জানান, বিমা থেকে শুরু করে জ্বালানির খরচ যে-হারে বেড়েছে, তাতে অবিলম্বে ভাড়া না-বাড়ালে রাস্তা থেকে আরও বাস উঠে যাবে।
একই বক্তব্য মিনিবাস কো-অপারেটিভ কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ-এর। তিনি বলেন, “সরকার সহজ অঙ্কটা না-বুঝে একগুঁয়ে মনোভাব দেখিয়ে চলেছে। অবিলম্বে ভাড়া না-বাড়ালে রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে।”
পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য সোমবার রাত পর্যন্ত সাধারণ বাস ও মিনিবাসের মালিকদের দাবি মানার কোনও ইঙ্গিত দেননি। শুধু ভলভো বাসের ভাড়া বাড়ানো হল কেন? মন্ত্রী বলেন, “ভলভো বাসের দাম অনেক বেশি। খরচও অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি পরিষেবাও দেয়। লাক্সারি বাসের সঙ্গে সাধারণ বাসের কোনও তুলনা হয় নাকি!” পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, অক্টোবরে যখন সব বাসের ভাড়া বেড়েছিল, তখন ভলভোর ভাড়া বাড়েনি। তা ছাড়া সাধারণ বাসের যাত্রী আর ভলভো বাসের যাত্রীও এক নয়। তাই দু’টি ক্ষেত্রের কোনও তুলনা হয় না।
মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বাস-মালিকেরা বলেন, “আমরা এক ধাপে পাঁচ টাকা ভাড়া বাড়ানোর কথা বলছি না। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যে-হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তো ভাড়া বাড়ানো হবে। সরকার তো সেটাও বাড়াতে চাইছে না।”
বাম আমলেই বিমানবন্দর থেকে বেশ কয়েকটি রুটে এসি (ভলভো) বাস চালু হয়েছিল। বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুরু হয়েছিল এই পরিবহণ পরিষেবা। প্রথম দু’কিলোমিটার পর্যন্ত ন্যূনতম ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২০ টাকা। তার পর থেকে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে ভাড়া ১০ টাকা করে বেড়ে যেত। নতুন ভাড়া বিন্যাসে ন্যূনতম ভাড়া ১৫ টাকাই আছে। তার পর থেকে প্রতি ধাপে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা করে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি বাসের অভাব দূর করতে কর্পোরেট সংস্থাকে দিয়ে শহরে বাস চালাতে মরিয়া রাজ্য সরকার। কিন্তু এসি বাসের যা ভাড়া, তাতে কর্পোরেট সংস্থাগুলি বাস চালাতে রাজি হচ্ছে না। সেটা মাথায় রেখেই এসি (ভলভো)-সহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব বাসের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহণ দফতর। |