আস্থা সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যেই
বাকস্বাধীনতায় লাগাম পরানোর বিরুদ্ধে কমিশন
শাসক সাধারণত সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক অতীতের প্রক্ষিতে এমনটাই মত রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের। তিনি মনে করেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত চিন্তার অধিকার খর্ব করা উচিত নয় রাষ্ট্রের। অথচ পরাধীন ভারতে তো বটেই, স্বাধীনতার পরেও রাষ্ট্র বা শাসক সর্বদাই বাকসাধীনতার উপরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে তত্‌পর।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অশোকবাবুর বক্তৃতার বিষয় ছিল ‘বাকস্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা’। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সাম্প্রতিক কালে তিনি বারবার বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বলে অনেকেই মনে করেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এ দিনের বক্তৃতা নিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে কৌতূহল ছিল।
অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়
বাকস্বাধীনতার রাশ টানার চেষ্টা চলে কী ভাবে? অশোকবাবু এ দিন ছত্তীসগঢ়ের চিকিত্‌সক বিনায়ক রায়ের গ্রেফতারির কথা উল্লেখ করেন। এ রাজ্যে বাম আমলে তসলিমা নাসরিনের উপন্যাস ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিষিদ্ধ করার প্রসঙ্গ আনেন। কমলহাসনের ‘বিশ্বরূপম’ ছবির মুক্তির ক্ষেত্রে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বলেন। সম্প্রতি মুম্বইয়ে রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে কার্টুন আঁকার দায়ে এক কার্টুনিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ২৯ দিন হাজতবাসের পরে ক্ষমা চেয়ে নেওয়ায় তিনি মুক্তি পান। এই ধরনের নানা প্রসঙ্গ তুলে অসহিষ্ণুতার সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কমিশন-প্রধান। সেই সঙ্গেই মনে করিয়ে দেন, এ দেশে সহিষ্ণুতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। সেই ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না তিনি।
এ রাজ্যে বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা মানবাধিকার কমিশনের বিচার্য হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি একটি কার্টুন অন্যদের কাছে পাঠিয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরাগভাজন হন। তাঁকে এবং তাঁর প্রতিবেশী সুব্রত সেনগুপ্তকে গ্রেফতার করা হয়। জঙ্গলমহলের এক জনসভায় সারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করায় মাওবাদী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় শিলাদিত্য চৌধুরী নামে বিনপুরের এক প্রান্তিক চাষিকে। দু’টি ঘটনাতেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় অশোকবাবুর কমিশন। তদন্তের পরে অম্বিকেশবাবু ও সুব্রতবাবুকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে সুপারিশ পাঠায় কমিশন। আর শিলাদিত্যবাবুর বিরুদ্ধে তদন্ত এখনও চলছে। ভিন্‌ রাজ্যে বাকস্বাধীনতা হরণের দৃষ্টান্ত দিলেও অশোকবাবু তাঁর লিখিত বক্তৃতায় পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালের অনুরূপ ঘটনার উল্লেখ করেননি। শ্রোতাদের অনেকেরই প্রশ্ন, নিজের রাজ্যের ঘটনা নিয়ে কমিশন-প্রধান নীরব কেন? অশোকবাবুর ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ মনে করেন, রাজ্যে বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের সাম্প্রতিক প্রায় কোনও ঘটনাই তাঁর নজর এড়ায়নি। বহু ক্ষেত্রে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করিয়েছে, রাজ্যের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছে। বহু ক্ষেত্রেই সেই সুপারিশ প্রশাসনের পক্ষে সুখকর হয়নি। তার জন্য প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের কেউ কেউ তাঁকে কটাক্ষও করেছেন। কিন্তু কমিশন-প্রধান হিসেবে ওই সব ঘটনায় তাঁর নাম জড়িয়েছে, তাই অশোকবাবু সৌজন্যবশত সেগুলির উল্লেখ করেননি। তবে বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা হলে এর পরেও যে তিনি নীরব দর্শক হয়ে থাকবেন না, অন্য রাজ্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.