|
|
|
|
|
১৪ মাসে মামলার নিষ্পত্তি,
বধূ খুনে স্বামীর যাবজ্জীবন
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
১৪ মাসের মাথায় বধূ হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হল আদালতে। অভিযুক্ত স্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিলেন বিচারক। সোমবার মেদিনীপুরের ফাস্ট ট্র্যাক চতুর্থ আদালতে রায় শোনার পরে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না মৃতার বৃদ্ধ বাবা। নিজেকে সামলে কেশিয়াড়ির কৃষ্ণপ্রসাদ মাইতি বলেন, “মেয়ে ফিরে আসবে না জানি। তবে সান্ত্বনা পেয়েছি। দোষীর সাজা হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত থেকে কিছু মানুষও যদি শিক্ষা নেয়, সেটাই হবে প্রাপ্তি।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার এমএ পাশ পাত্র তারক জানার সঙ্গে কেশিয়াড়ির সগড়গেড়িয়া গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ চন্দনার বিয়ে হয়েছিল ২০০৯ সালে। বিয়ের কিছুদিন পরই টিউশন ছেড়ে ব্যবসা করার ঝোঁক চাপে তারকের। শ্বশুরের কাছে টাকা চাওয়া শুরু হয়। কৃষ্ণপ্রসাদবাবু বলেন, “বিয়ের পর ছ’মাসও পেরোয়নি। ব্যবসার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পরে চাকরির জন্য আরও ৬০ দিতে হাজার টাকা দিতে হয়েছিল।” গত বছর জানুয়ারিতে ফের টাকা চায় তারক। কৃষ্ণপ্রসাদবাবুর কথায়, “চাষ করে সংসার চলে। আরও এক মেয়ে ও ছেলে রয়েছে। সব যদি এক মেয়ের জন্যই চলে যায় আমরা খাব কী? টাকা দিতে পারিনি। তাই মেয়েটাকে মেরেই ফেলল।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারি চন্দনাকে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে তারক। পুলিশ চার্জশিট দেয় ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল। ছ’মাসের মধ্যে বিচার শুরু হয়ে যায়। সোমবার মেদিনীপুরের ফাস্ট ট্র্যাক চতুর্থ আদালতের বিচারক রাজা চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্ত তারক জানাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দেন। সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
কী ভাবে এত দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি হল? পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি জেলায় একাধিক ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু ও শূন্য বিচারক পদে নিয়োগই এর কারণ বলে জানিয়েছে আইনজীবী মহল।
বছর কয়েক আগেও ঝাড়গ্রাম ও ঘাটালে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট ছিল না। এখন তা হয়েছে। ফলে মেদিনীপুর জেলা আদালতে মামলার চাপ কমে গিয়েছে। সে জন্য দ্রুত মামলা মিটে যাচ্ছে। মামলার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি দেবাশিস মাইতি বলেন, “ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে এখন বিচার দ্রুতই হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশও তিন মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে দিয়েছিল। ফলে সাজা ঘোষণায় দেরি হয়নি।” এ ছাড়া আগে প্রায়ই বিভিন্ন কোর্টে বিচারকের পদ শূন্য থাকত। দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকরা জামিন দেওয়া বা সাজা ঘোষণা এড়িয়ে চলতেন। এখন প্রতিটি আদালতে বিচারক থাকায় সেই সমস্যা নেই।
বধূ হত্যার মামলায় এত দ্রুত সাজা ঘোষণা ‘ব্যতিক্রমী’ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ফৌজদারি মামলার বিশিষ্ট আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এর ফলে মানুষের বিচার ব্যবস্থার উপরে আস্থা বাড়বে। এই প্রবণতাকে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা।” |
|
|
|
|
|