এ যেন ভারতের অস্কার পিস্টোরিয়াস! অলিম্পিকে নকল পা নিয়ে দৌড়ে ইতিহাস ঢুকে পড়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পিস্টোরিয়াস। আর ভারতের এক তরুণী নকল পা লাগিয়ে চললেন এভারেস্ট অভিযানে। লক্ষ্য এভারেস্ট জয়ের পাশাপাশি বুঝিয়ে দেওয়া, কোনও প্রতিবন্ধকতাই মানুষকে থামিয়ে রাখতে পারে না।
চলন্ত ট্রেন থেকে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ভাগ্য ভাল থাকায় মৃত্যু হয়নি। কিন্তু কোমর ও পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল। একটা পা তো কেটে বাদ দিতে হয়। অন্যটিতে বসানো একটি রড। আর কোমরে হয়েছিল বিরাট অস্ত্রোপচার। আর পাঁচটা মানুষ হলে কাহিনি সেখানেই শেষ হত। কিন্তু অরুণিমা সিংহ যে অন্য ধাতু দিয়ে তৈরি। যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা ছুড়ে ফেলে এই মৃত্যুঞ্জয়ী আজ রওনা দিলেন এভারেস্ট জয়ের লক্ষ্যে। প্রথমে কাঠমাণ্ডু। এভারেস্টজয়ী বাচেন্দ্রি পাল কাঠমাণ্ডু পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন। সফল হলে অরুণিমা হবেন বিশ্বের প্রথম প্রতিবন্ধী এভারেস্ট শৃঙ্গজয়ী মহিলা।
২৬ বছরের মেয়ের সাহস দেখে অবাক বাচেন্দ্রি বললেন, “এই অবস্থায় কোনও মেয়ের কথা তো ছেড়ে দিন, পুরুষরাও এ রকম দুঃসাহসী কাজ করার আগে দশ বার ভাববে। এই মেয়ে তো হাসপাতালে শুয়ে শুয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। একে থামানো খুব মুশকিল।”
কোথা থেকে এই সাহস পেলেন অরুণিমা? জবাবে আনন্দবাজারকে বললেন, “যখন দেখলাম যুবরাজ ক্যানসার সারিয়ে ক্রিকেটে ফিরে এল, তখনই নিজেকে বলতে থাকলাম, ও পারলে আমি নই কেন? ওর সাহসই আমাকে সাহসী করে তুলেছে।”
ভলিবলে জাতীয় স্তরে খেলেছেন। বছরদু’য়েক আগে লখনউ থেকে দিল্লি আসছিলেন সিআরপিএফের চাকরিতে যোগ দিতে। মাঝপথে ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীরা অরুণিমাকে চলন্ত ট্রেন থেকেই ছুড়ে ফেলে দেয়। চিকিৎসা চলার সময় হাসপাতালে এভারেস্ট অভিযানের বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায়। লড়াই শুরু সেখানেই। নকল বাঁ পা নিয়ে প্রথমে বেশ কষ্টই হত। ট্রেনিং শুরু করেন বাচেন্দ্রির সঙ্গে। প্রথমে তিনি দুই সঙ্গীর সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে জয় করেন ২১,১১০ ফিটের চামসের কাংগ্রি পাহাড়। নকল পা নিয়ে অসুবিধে হলেও কোনও কিছুই আটকাতে পারেনি তাঁকে।
সব ঠিকঠাক চললে মে-র মাঝামাঝি ইতিহাসে ঢুকে পড়ছেন অরুণিমা। |