ভারতে চার টেস্টের সিরিজের দরজা খুলে দেওয়ার জন্য প্রথমেই আলাদা করে ভারতীয় বোর্ডের তারিফ করতে চাই। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দু’টো বড় টিম ভারতে এসে এমনই দু’টো বড় সিরিজ খেলল। এই দলগুলো এ বার টের পাবে অচেনা পরিবেশ আর অনভ্যস্ত পিচে লম্বা সিরিজ খেলতে গেলে ঠিক কত বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। ঠিক যে ভাবে ওরা নিজেদের দেশে, পছন্দের পিচ আর পরিবেশে ভারতকে পরীক্ষার মুখে ফেলে। এই দুই সিরিজে ধুলো ওড়া ঘূর্ণি পিচ বানানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ভারতীয়রাও উপমহাদেশের বাইরে পা রাখলে অবধারিত ভাবে সবুজ, শক্ত আর বাউন্সি উইকেটের সামনে পড়ে।
অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে ৪-০ হারানোয় ভারতীয় দলের পিঠ চাপড়ে দিতেই হচ্ছে। বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতের খারাপ সময় শুরু হয়েছিল। যেটা চলে ইংল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে ছোট দলগুলোর বিরুদ্ধে কিছু সাফল্য এসেছিল। কিন্তু সেগুলো বলার মতো নয়। তাই অস্ট্রেলিয়াকে দুরমুশ করা মানসিক ভাবে ভারতীয় দলকে এক ঝটকায় অনেকটা এগিয়ে দেবে। যে জিনিসটা এই সিরিজে আমার সবথেকে ভাল লেগেছে, সেটা হল গোটা দলের মানসিকতা আর শরীরী ভাষা। সাধারণত চার টেস্টের সিরিজে কোনও দল দু’টো কি তিনটে টেস্ট জিতে ফেললে তাদের মধ্যে আত্মতুষ্টি এসে যায়। ভারত কিন্তু শেষ টেস্টে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ার বদলে বাড়তি তাগিদ নিয়ে ঝাঁপাল। সিরিজের সবথেকে কঠিন পিচে নেমে মাত্র তিন দিনে জয় ছিনিয়ে নিল। সবথেকে ভাল লাগল দেখে যে, গাড্ডায় পড়া অস্ট্রেলিয়া কোটলার ঘূর্ণি পিচে গাড্ডা থেকে বেরিয়ে আসার সামান্যতম সুযোগও যাতে না পায়, সেটা নিশ্চিত করল ধোনিরা।
সিরিজ থেকে ভারতের প্রাপ্তি অনেক। বিজয়, জাডেজা, অশ্বিন, ভুবনেশ্বর। কিন্তু আমার মতে সবথেকে বড় পাওনা পূজারা। ছেলেটাকে আমি তিনটে সিরিজ ধরে খুব মন দিয়ে লক্ষ করেছি। প্রতিটা সিরিজে ও আগের বারের তুলনায় উন্নতি করেছে। এ ভাবেই যদি এগোতে থাকে তা হলে ভবিষ্যতে ও ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠবে। কোটলায় পূজারার ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, বাকিরা যে পিচে খেলছে, ও যেন তার থেকে আলাদা কোনও পিচে নেমেছে। ওর লাইন-লেংথের জাজমেন্ট নিখুঁত ছিল। এই বোধটাই একজন ভাল ব্যাটসম্যানকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয়।
আলাদা করে বলব জাডেজার কথাও। ওর সাফল্যে ধোনির হাতে বিকল্প বাড়ল। এখন থেকে বিদেশ সফরে তিন পেসার দুই স্পিনার মিলিয়ে পাঁচ বোলারের কম্বিনেশন খেলানোর সুযোগ থাকবে ধোনির হাতে। জাডেজার সাফল্যের চাবিকাঠি হল, ও প্রাথমিক ব্যাপারগুলো খুব সহজ রাখে। জাডেজাকে এখন রান করায় মন দিতে হবে। একটু খেটে ও সাত নম্বরে ধারাবাহিকতা দেখাতে পারলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে আরও গভীরতা আসবে।
কয়েক মাস পর বিদেশ সফরে যাবে ভারত। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সাফল্যটা খুব জরুরি ছিল। এতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ছেলেদের আত্মবিশ্বাস মজবুত হয়ে উঠবে। তবে কথায় কথায় দলকে প্রশংসা করে আকাশে তোলা বা সমালোচনায় দুমড়ে দেওয়া, দু’টোই বন্ধ হওয়া দরকার। ভারতের এই টিমটা এখনও অপরিণত। ওদের অন্তত দু’টো বছর সময় দিন। তার পরেই কিন্তু এই দলটার প্রকৃত যোগ্যতা বিচার করার মতো জায়গায় পৌঁছতে পারব আমরা। |