সকাল দশটা। রবিবারের ছুটির পরে সোমবার সবে এজলাসের তালা খোলা হয়েছে। কাজকর্ম শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন কর্মীরা। আচমকাই এজলাসে ঢোকার দরজার উপরে বিকট শব্দ। কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে— কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হুড়মুড়িয়ে সিলিং ভেঙে দর্শকদের বসার বেঞ্চে লাফিয়ে পড়ল একটি ভাম। নিমেষে ছোটাছুটি শুরু চারপাশে। খবর গেল বিচারপতি প্রসেনজিৎ মণ্ডলের কাছে, তিনি যেন এজলাসে না আসেন। কারণ ঘর জুড়ে তখন খেলে বেড়াচ্ছে সেই ভাম। কলকাতা হাইকোর্টের ১৪ নম্বর এজলাসে প্রায় এক ঘণ্টা এ ভাবেই দাপিয়ে বেড়ায় সে।
পরে বন দফতরের কর্মীরা এসে ভামটিকে নিয়ে যান। বন দফতর জানিয়েছে, সেটি ‘যুবতী’ ভাম, গর্ভিণীও হতে পারে। ভাম গ্রেফতার হওয়ার পরে এজলাসে আসেন বিচারপতি প্রসেনজিৎ মণ্ডল। শুরু হয় বিচারের কাজ। বছর কয়েক আগে বিচার চলাকালীন বিচারপতি অমিতাভ লালার এজলাসেও ঢুকে পড়েছিল একটি ভাম। নানা কসরত দেখিয়ে শেষমেশ নিজেই কিছুক্ষণ পরে পিঠটান দেয় সে। |
এ দিনও ভাম দেখতে ১৪ নম্বর এজলাসে ভিড় করেন অনেকেই। কেউ বলেন, “এটা ভাম নয়, গন্ধগোকুল।” এক বয়স্ক কর্মী উত্তর দেন, “আমাকে আর ভাম চিনিও না। হাইকোর্টে ভাম দেখে দেখে চোখ পচে গেল! ও পায়রা খেতে এসেছিল। তার পরে কোনও ভাবে সিলিংয়ে আটকা পড়ে।” যাকে নিয়ে এত কাণ্ড, ইতিমধ্যে চকিতে এক বার মুখ বার করে আশপাশের হাল বুঝে নিয়ে ফের মুখ লুকিয়েছে সে।
খবর পেয়ে আধ ঘণ্টার মধ্যেই সল্টলেক থেকে এসে পড়েন বন দফতরের কর্মীরা। সঙ্গে দু’টি সার্চলাইট, সাঁড়াশি, দড়ির জাল এবং লোহার খাঁচা। ভাম কোথায়, তা বুঝে নিয়েই কর্মীরা সার্চলাইট জ্বাললেন। জোরালো আলোয় ভামের চোখ ঝলসে গেল। তখন তার নড়াচড়া বন্ধ। তাক বুঝে তার গায়ে জাল ফেলে দেওয়া হল। জালে জড়িয়ে আটকে ফেলা হল খাঁচায়। ভাম পাকড়াও করে ফিরে গেলেন বনকর্মীরা। বিচারের কাজ এর পরে নিয়ম-মাফিক শুরু হল ঠিকই, তবে দিনভরই মুখে-মুখে ফিরল ভাম ধরার গল্প। |