দিল্লিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার আঁচ ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে শেয়ার বাজার। এ বার সেই ডামাডোল থাবা বসানো শুরু করতে পারে টাকার দামের উপরেও। অন্তত অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা তেমনই। তাঁদের ধারণা, এই মুহূর্তে দেশের আর্থিক অবস্থা হয়তো ডলারের সাপেক্ষে টাকার দর বাড়ার ক্ষেত্রে তেমন প্রতিকূল নয়। কিন্তু মনমোহন-সরকারের উপর থেকে ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহার ঘিরে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা অদূর ভবিষ্যতেই বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে টাকার দামে। ঠিক যে ভাবে তা ছোবল বসিয়েছে শেয়ার বাজারে।
এ কথা ঠিকই যে, সোমবার লেনদেনের শেষে টাকার দাম কিছুটা বেড়েছে। যার মূল কারণ, ঋণপত্রের বাজারে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি টানার পথ আরও মসৃণ করতে গত শনিবার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের করা ঘোষণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকটা তার জোরেই এ দিন শুরুটা বেশ ভাল করেছিল টাকা। পরে তাতে ইন্ধন জুগিয়েছিল সাইপ্রাস ত্রাণ-প্রকল্প পাওয়া নিশ্চিত করায় চাঙ্গা হয়ে ওঠা ইউরো। কিন্তু এই সব কিছুর দৌলতে যতটা ওঠার কথা ছিল, দিনের শেষে তার তুলনায় অনেকটাই ম্রিয়মান দেখিয়েছে টাকাকে। ডলারের সাপেক্ষে দাম বেড়েছে মাত্র ১৬ পয়সা। এক ডলারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৫৪.১৭ টাকা। ভারতীয় মুদ্রার এই তুলনায় নিষ্প্রভ দৌড়ের জন্য কেন্দ্রে লাগাতার লেগে থাকা গণ্ডগোলকেই (প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেস আর সম্প্রতি ডিএমকে-র সমর্থন ফেরানো) দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। |
মাথায় হাত। টানা ৭ দিন পড়েই চলেছে সেনসেক্স। |
দিল্লির মসনদে অস্থিরতার কাঁপুনির জের প্রায় রোজই নিয়ম করে টের পাচ্ছে এ দেশের শেয়ার বাজারও। এ দিনও ফের ৫৪.১৮ পয়েন্ট পড়েছে সেনসেক্স। বাজার বন্ধের সময় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ১৮৬৮১.৪২ অঙ্কে। গত চার মাসে যা সর্বনিম্ন। শুধু তা-ই নয়। এই নিয়ে টানা সাতটি লেনদেনের দিনে পড়ল শেয়ার বাজার। শেষ ছ’দিনেই সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৮৩৫ অঙ্ক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে তৈরি হওয়া ঘোর অনিশ্চয়তা এখন অনিশ্চিত করে তুলেছে শেয়ার বাজারকেও। আর সাধারণত যখনই বাজারে অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন লগ্নিকারীরা হাতের শেয়ার বেশি দিন ধরে রাখতে ভরসা পান না। সুযোগ পেলেই প্রয়োজনে অল্প মুনাফাতেও হাতের শেয়ার বেচে বেরোতে চান। এমনকী অনেক ক্ষেত্রে পিছপা হন না সামান্য লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতেও। তাঁদের মতে, বর্তমানে সেই প্রবণতাই দেখা দিয়েছে লগ্নিকারীদের মধ্যে।
বাজার সূত্রে খবর, এ দিন দিনের শুরুতে বেশ কিছুটা উঠেই যাত্রা শুরু করেছিল সেনসেক্স। কিন্তু তার পরই লগ্নিকারীদের মুনাফা ঘরে তোলার জন্য শেয়ার বিক্রির ধুম পড়ে। ফলে দ্রুত নেমে আসে সূচকের পারাও।
সাধারণত বিশ্ব-বাজার চাঙ্গা থাকলে, তার ভাল প্রভাব পড়ে এ দেশের বাজারেও। অথচ এ দিন ইউরোপ-সহ সারা বিশ্বে অনেক দেশেরই শেয়ার বাজারের মুখ ছিল উপরের দিকে। কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেয়ার বাজারের মন এতটাই তেতো করে দিয়েছিল যে, বিদেশি দাওয়াইয়েও কাজ হয়নি। |