লগ্নিবিমুখ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পমহলকে তাঁর কৌশল ও ভাবনার কথা জানাতে রাজ্যে আসছেন লগ্নিমুখর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর হাতে গুজরাত কী ভাবে শিল্পমহলে আলাদা জায়গা করে নিল, আগামী ৯ এপ্রিল সেই কৌশল শুনবে পশ্চিমবঙ্গ।
প্রথমে ঠিক হয়েছিল ৩ এপ্রিল হবে ওই বৈঠক। কিন্তু সে দিন আইপিএল-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকায় বৈঠকটি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার এ কথা জানিয়েছেন আয়োজকরা। তাঁদের প্রত্যাশা, মোদী নিজের মুখেই জানাবেন ব্র্যান্ড-গুজরাত গড়ে তোলার পিছনে তাঁর ভাবনা ও কৌশলের কথা। বিনিয়োগ টানার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের কৌশলগত খামতিগুলি বুঝে নেওয়ার সুযোগ এনে দেবে এই বৈঠক।
তবে শিল্পমহলের সবাই অবশ্য সরাসরি দুই রাজ্যের মধ্যে তুলনায় যেতে নারাজ। আয়োজক তিন বণিক সভা এমসিসি চেম্বার (আগেকার মার্চেন্টস চেম্বার), ইন্ডিয়ান চেম্বার ও ভারত চেম্বারও এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাতের তুলনার প্রসঙ্গ এক কথায় উড়িয়ে দিয়েছে। আয়োজকদের দাবি, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে তাঁদের শিল্প-ভাবনা জেনে নেন তাঁরা। মোদীকে আমন্ত্রণ করাটা সেই অর্থে কোনও ব্যতিক্রম নয়।
মার্চেন্টস চেম্বারের প্রেসিডেন্ট দীপক জালানের কথায়, “হরিয়ানা বা গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা যখন আমন্ত্রণ জানিয়েছি তখন কিন্তু এমন প্রশ্ন ওঠেনি।” দীপকবাবু এই অনুষ্ঠানগুলিকে বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা আদানপ্রদানের মঞ্চ বলেই মনে করেন। তবে দীপকবাবু ও আয়োজকরা আনুষ্ঠানিক ভাবে যা-ই বলুন না কেন, শিল্পমহল কিন্তু এই অনুষ্ঠানকে আরও বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখছেন। এই মুহূর্তে, নরেন্দ্র মোদী জাতীয় রাজনীতিতে দ্রুত নিজের জায়গা করে নিচ্ছেন। রাজনৈতিক মঞ্চে দ্রুত গুরুত্ব বাড়ছে, এমন কারও মুখ থেকে শিল্পের কথা শোনা বা লগ্নি টানার অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়ার গুরুত্বই আলাদা। হরিয়ানা বা গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের সঙ্গে কোনও তুলনাতেই আসে না তা। শিল্পমহলের অনেকে এমনও মনে করছেন যে, মোদীর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ও তাঁর কাছে চাহিদা জানানোর এই সুযোগ আসলে ভবিষ্যতের নিরিখে এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগও বটে।
অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ভারত চেম্বারও এই যুক্তি মেনে নিয়েছে। এই বণিকসভার প্রেসিডেন্ট অশোক আইকত মনে করেন, এক নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আসছেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার যিনি কলকাতায় পা রাখবেন, তিনি শুধু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বা ব্র্যান্ড-গুজরাতের জনক নন, এই নরেন্দ্র মোদী জাতীয় রাজনীতির বর্তমান সন্ধিক্ষণে এক উদীয়মান তারকা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বিনিয়োগকারীরা জানতে চাইবেন, দিল্লিতে ক্ষমতা বদল ঘটলে জাতীয় অর্থনীতির মঞ্চে ব্র্যান্ড-ভারত নিয়ে তাঁর কী ভাবনা। কারণ একটাই, বিনিয়োগের ছক নিয়ে আগে থেকেই ভাবতে হয় ভাবী নীতি নির্ধারকদের।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যে এসে মোদী কি বলবেন সে কথা?
অপেক্ষা ৯ এপ্রিলের। |