এক নামে দুই স্কুল, ধন্দে অভিভাবকেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
একই নামের দু’টি স্কুল। দু’টিতেই জোরকদমে চলছে ভর্তি প্রক্রিয়া। দুই স্কুলই দাবি করছে, তারাই আসল। কিন্তু ঠিক কোন স্কুলটির অনুমোদন নেই, তা জানতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন দুর্গাপুরের অভিভাবকরা। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা জানান, অননুমোদিত স্কুল নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বহু অভিযোগ রয়েছে। মার্চের পরে আর এমন কোনও স্কুল যাতে চালু না থাকে, সংশ্লিষ্ট দফতর ইতিমধ্যেই সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
মাস চারেক আগে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের পলাশডিহায় গড়ে ওঠে একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ বিদ্যালয়। ভুবনেশ্বরের একটি ট্রাস্টের সঙ্গে চুক্তি করে স্কুলটি গড়েছে দুর্গাপুরের এক বেসরকারি সংস্থা। ভুবনেশ্বরের ওই সংস্থা দেশ-বিদেশে ওই নামে একাধিক স্কুল চালায়। তারই মাসখানেকের মধ্যে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙায় একই নামে আর একটি স্কুল চালু হয়। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা ছাত্র ভর্তি শুরু করতেই নড়েচড়ে বসেন পলাশডিহা স্কুলের কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল, তাঁদের স্কুলের ১১ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন কোনও স্কুল খুলবে না ভুবনেশ্বরের ওই সংস্থা। কিন্তু পলাশডিহার ৯ কিলোমিটারের মধ্যে সগড়ভাঙায় আর একটি স্কুল কী ভাবে খুলল? পলাশডিহার স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে সংস্থার কার্যনির্বাহী সভাপতি সুনীল মণ্ডল জানান, অভিভাবকেরা এই প্রশ্নের জবাব চেয়ে ইতিমধ্যেই এক বার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁদের স্কুলে। বিষয়টি তাঁরা ভুবনেশ্বরের সংস্থাকে জানিয়েছেন। সংস্থার ডিরেক্টর প্রভু মহান্তি জানান, অভিযোগ পেয়ে দুই স্কুল কর্তৃপক্ষকেই কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য ডাকা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, পলাশডিহার স্কুলটির ঠিক মতো অনুমোদন রয়েছে। সগড়ভাঙার স্কুলটি যে সংস্থা চালায়, তার সভাপতি রঞ্জিত সিংহ বলেন, “আমরা সরাসরি সরকারি বোর্ডের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন জানাব। আশা করি, দ্রুত অনুমোদন পেয়ে যাব।”
ভূবনেশ্বরের ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার পোয়াবাগানে বছর দুয়েক ধরে তাদের অনুমোদিত একটি স্কুল চলছে। সেই স্কুলের অনুমোদন দেখিয়েই সগড়ভাঙার স্কুলটি খোলা হয়েছে। ডিরেক্টর প্রভু মহান্তি বলেন, “বাঁকুড়ায় আমাদের অনুমোদিত একটি স্কুলের শাখা (ফিডার ব্র্যাঞ্চ) হিসেবে কাজ করছে সগড়ভাঙার স্কুলটি। কিন্তু তা করা যায় না।” ম্যানেজিং ডিরেক্টর জিএস পট্টনায়ক বলেন, “দুর্গাপুরে যা হয়েছে, তা মোটেই কাঙ্খিত নয়।”
অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। জেলাশাসক বলেন, “নিজস্ব অনুমোদন ছাড়া অন্য কারও শাখা হিসেবে কোনও স্কুল চালানোও বেআইনি।” রঞ্জিতবাবু এ নিয়ে অবশ্য কোনও কথা বলতে চাননি।
একই নামের দু’টি স্কুলের কোনটির অনুমোদন রয়েছে আর কোনটির নেই, তা জানতে হিমসিম খাচ্ছেন অভিভাবকেরা। শহরের বি-জোনের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বসু সরকার বলেন, “শিক্ষার নামে এ ভাবে ছেলেখেলা উচিত নয়। প্রশাসনের উচিত, দ্রুত বেআইনি স্কুলগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা।” জেলাশাসক জানান, যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা স্কুল নিয়ে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। স্কুল শিক্ষা অধিকর্তার দফতর থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের অনুমোদনহীন স্কুলগুলির ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। মার্চের পরে আর এমন স্কুল চলতে দেওয়া হবে না।
|