কাঁকসায় ছাত্রীর মৃত্যুতে অভিযোগ স্কুলের বিরুদ্ধে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
হস্টেলে অসুস্থ হয়ে ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কাঁকসা থানায় অভিযোগ করলেন অভিভাবকেরা। ঘটনার জন্য যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুলটি চালায় তার সম্পাদক পারশ তিওয়ারি, অন্যতম কর্মকর্তা কবিলাল মাড্ডি, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুস্মিতা পাঠক এবং তিন রাঁধুনিকে দায়ী করেছেন অভিভাবকেরা। পুলিশ জানায়, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, পড়ুয়া ও অভিভাবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনায় স্কুলের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শনিবার অসুস্থ হওয়া ২৫ জন পড়ুয়াকে ভর্তি না রেখে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে কেন কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হল, সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা জানান, প্রাথমিক তদন্তে স্বাস্থ্য দফতর জেনেছে, পড়ুয়াদের বাসি তরকারি পরিবেশন করা হয়েছিল। সকালে টিফিনে যে গুড় দেওয়া হয়েছিল, তা থেকেও সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। কারণ, বাসি তরকারি যারা খেয়েছিল তাদের অধিকাংশই অসুস্থ হয়। বাকিরা সম্ভবত অসুস্থ হয় গুড় খেয়ে। কারণ দুপুরের খাবার খাওয়ার অনেক আগে থেকেই অসুস্থতার লক্ষ্মণ দেখা গিয়েছিল পড়ুয়াদের মধ্যে।
শনিবার দুপুরে কাঁকসার ডাঙাল এলাকায় পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদিবাসী আবাসিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ২৫ জন ছাত্রী। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে যান পানাগড়ের কাঁকসা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রাতে নতুন করে অসুস্থ হয় ৪২ জন। প্রথমে বীরভূমের ইলামবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয় তাদের। সকালে মৃত্যু হয় স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার কেয়াকানালি গ্রামের বাসিন্দা অর্চনা হেমব্রম।
২০০২ সালে রাজ্যের ৫টি আদিবাসী অধ্যুসিত অঞ্চলে আবাসিক একলব্য স্কুল গড়া হয়। সেগুলি তৈরি হয় জলপাইগুড়ির নাগরাকাটা, বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম ও বর্ধমানের রঘুনাথপুরে। ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু একেবারে ষষ্ঠ শ্রেণিতে গিয়ে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়াদের পক্ষে মানিয়ে নেওয়া মুশকিল, সে কথা মাথায় রেখে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রাথমিক স্কুল চালুর উদ্যোগ হয় নানা জেলায়। সে ভাবেই ২০০৪ সালে ডাঙালে গড়ে ওঠে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আদিবাসী আবাসিক প্রাথমিক স্কুলটি। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া অর্থে স্কুলটি চালায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ১৩৬ এবং ছাত্রী রয়েছে ১২৪ জন। রাজ্য অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অর্থ অনুদান হিসেবে দেওয়া হয় স্কুলগুলিতে। পড়ুয়া পিছু মাসিক বরাদ্দ হাজার টাকা।
পুরো ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসন। হস্টেল কর্তৃপক্ষের তরফে শনিবার ঘটনার কথা জানানো হয়নি প্রশাসনকে। রবিবার ছাত্রীর মৃত্যুর প্রায় চার ঘণ্টা পরে খবর পায় প্রশাসন। স্কুল কর্তৃপক্ষ কেন ঘটনার কথা প্রশাসনকে জানায়নি বা অসুস্থ পড়ুয়াদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তৎপরতা দেখিয়েছিলেন কিনা, তার তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, খাদ্যে বিষক্রিয়াতেই এমন ঘটেছে। মৃত ছাত্রীর ভিসেরা-সহ অন্য নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।
ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ২৫ জন পড়ুয়াকে অসুস্থ অবস্থায় আনা হয়েছিল, তাদের প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, ওষুধ, ওআরএস দেওয়া হয়েছিল। কাউকেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ‘ডিসচার্জ’ করা হয়নি। কয়েক ঘণ্টা রাখার পরে তাদের নিয়ে যান স্কুল কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে ওষুধ এবং ওআরএস দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তা রাতে ঠিক মতো খাওয়ানো হয়েছিল কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ইলামবাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার আগেই অর্চনার মৃত্যু হয়েছিল কি না, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর জানায়। পারশ তিওয়ারির অবশ্য দাবি, পড়ুয়াদের ওষুধপত্র খাওয়ানোয় কোনও গাফিলতি হয়নি। অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করায় ব্যস্ত থাকায় প্রশাসনকে খবর দিতে কিছুটা দেরি হয়।
|