‘মনে পড়ে আইপিটিএ-র কথা’
সমুদ্যত শাহবাগ
শান্ত নদী আর পটে আঁকা ছবির মতো বাংলাদেশ যাঁর কবিতায় বার বার উঠে এসেছে সেই জসিমুদ্দিনের খোঁজে গত মাসে বাংলাদেশ গিয়েছিলেন পুলক চন্দ। উদ্দেশ্য ছিল জসিমুদ্দিনের প্রকাশিতব্য কবিতাসমগ্র সম্পাদনার জন্য তথ্য সংগ্রহ। গন্তব্য ছিল ঢাকায় বাংলা একাডেমী লাইব্রেরি, ফরিদপুরে কবির বাড়ি। “এয়ারপোর্টে নেমে গাড়িতে উঠতেই চালক বললেন শাহবাগ দিয়ে যাওয়া যাবে না, ঘুরে যেতে হবে,” নিজের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন পুলকবাবু, “তার পরে আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বাংলা একাডেমী যাওয়ার পথেও শাহবাগের ভিতর দিয়ে হেঁটে যেতাম রোজ। আমার বার বার মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই গণনাট্য যুগের আইপিটিএ-র কথা। সুশৃঙ্খল ভাবে মানুষ জমায়েত হয়েছেন। ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নানা অনুষ্ঠান চলছে।
গান ভেসে আসছে। বেশির ভাগ গানই সলিল চৌধুরীর। বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, হেই সামালো ধান হো-র সঙ্গে উই শ্যাল ওভারকাম। আর সবচেয়ে যেটা ভাল লাগল, স্লোগানে এই বাংলা কাদের সেটা বলতে গিয়ে উঠে আসছে প্রীতিলতা, সূর্য সেন এমনকী সিদো কানহোর নামও।” হাজার হাজার মানুষের সেই ছন্দোবদ্ধ জমায়েতের দর্শক হয়েই শুধু থাকেননি পুলকবাবু, ছবি তুলেছেন কয়েকশো (সঙ্গে তারই একটি)। ১০-২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছিলেন তিনি, সেই সময়ে তোলা ছবি থেকে প্রায় সত্তরটি বেছে কফি হাউসের তিনতলায় বই-চিত্র গ্যালারিতে আগামিকাল শুরু হচ্ছে একটি প্রদর্শনী, ‘সমুদ্যত শাহবাগ’। বিকেল পাঁচটায় প্রদর্শনীর সূচনা করবেন শঙ্খ ঘোষ। শাহবাগ আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করবেন অরুণ সেন। প্রদর্শনী ১৩ পর্যন্ত, রবি ও ছুটির দিন বাদে (৩-৭.৩০)। পাশাপাশি, শাহবাগের পাশে থাকার বার্তা দিতে ফেসবুক-মারফত পশ্চিমবঙ্গের নাট্যকর্মীবৃন্দ মঙ্গলবারই বিকেল চারটেয় অ্যাকাডেমি চত্বরে একটি সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। তাঁদের তরফে শেখর সমাদ্দার জানালেন, শাহবাগ আন্দোলনের তরুণ প্রজন্মের সহমর্মী আমরা, একই সঙ্গে আমরা সব ধরনের মৌলবাদ ও হিংসার বিরুদ্ধে থাকার বার্তা দিতে চাই ওই সমাবেশে।

সুরের জন্য
চল্লিশ চাঁদের আয়ু দিয়ে কবিতাযাত্রা শুরু করেছিলেন মল্লিকা সেনগুপ্ত। তার পরে তাঁর কলম বাংলা কবিতার ভুবনকে নাড়িয়ে দিয়েছে বার বার। কিন্তু ২০১১-র ২৮ মে ছন্দপতন। চলে গেলেন মল্লিকা। রয়ে গেলেন তিনি, এ শহরের কবিতাযাপনে। সেই থেকে যাওয়াটাকেই উদযাপন করতে তাঁর মৃত্যুর পরে সপ্তর্ষি প্রকাশন ও ভাষানগর চালু করেছিল মল্লিকা সেনগুপ্ত স্মারক বক্তৃতা। ২০১২-র ২৭ মার্চ, তাঁর জন্মদিনেই নতুন করে জন্ম নিয়েছিল প্রথম কবিতার বই চল্লিশ চাঁদের আয়ু। আনন্দ পাবলিশার্স প্রকাশ করেছে তাঁর কবিতাসমগ্রও। তাঁর রাগ-দুঃখ-অভিমান, আগুনঝরা কবিতাপ্রেম আরও একবার, বেজে উঠবে সুরে, ৮ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। দ্বিতীয় বার্ষিক মল্লিকা সেনগুপ্ত স্মারক বক্তৃতায় বলবেন কবীর সুমন, বিষয় ‘সুরের জন্য’। এ শহর তাঁকে ভোলেনি।

তরুণ
পাড়ার বিজয়া সম্মিলনীর নাটক দেখা দিয়ে যাত্রাটা শুরু। ১৯৫৬-য় কলকাতায় উচ্চশিক্ষার সূত্রে তাঁর সামনে খুলে যায় নাট্যচর্চার বড় ক্ষেত্র। দশ বছর পর পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে ফিরে যান বালুরঘাটে। সেই অবিখ্যাত হৃদয়পুরটিতেও ‘মাধবদা’, হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের নাট্যচর্চা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাঁর হাত ধরেই বালুরঘাটের ‘ত্রিতীর্থ’ বেশ কয়েক বার ভেঙে দিয়েছে কলকাতার রাজধানী-গর্ব। তরুণতীর্থ, ত্রিশূল আর নাট্যমন্দির তিন দলকে জড়িয়ে নিয়ে ত্রিতীর্থ গড়েছিলেন হরিমাধব। নাটকে, তার মঞ্চায়নে বরাবরই তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশ্বাসী। এই বাহাত্তরেও মাধবদা তাই তরুণ। সম্প্রতি এলেন এই শহরে, আর এক নিরীক্ষা নিয়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রক্তকরবী’কে তিনি রাজবংশী ভাষায় রূপান্তরিত করেছেন প্রযোজনা করবেন বলে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের আমন্ত্রণে গত শুক্রবার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু সভাঘরে নাটকটির রাজবংশী ভাষায় একক পাঠ-অভিনয় করলেন হরিমাধব।

প্রাণের ওপারে
ভূতেরা আজকাল মাঝেমধ্যেই ক্যামেরায় ধরা দিচ্ছে বলে বাঙালির কাছে ভূতেরা হঠাৎ প্রিয় হয়ে উঠেছে, ভূত ইদানীং তত ভয়ানক নয়, বরং যেন আপনজন। দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় যেমন একটি বই-ই লিখে ফেলেছেন, প্রাণের ওপারে (আগামী, ২৬০.০০), ভূতকে প্রায় আত্মীয় মনে করে। এমন স্বাদু গদ্যে লেখা সে-বই যে অবিশ্বাসীরাও মজে যাবেন। সিনেমা-সাহিত্য-সংগীত নিয়ে নিয়মিত লেখালেখি করেন দীপঙ্কর, কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রকের চলচ্চিত্রোৎসব থেকে জাতীয় চলচ্চিত্র উন্নয়ন নিগমে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘকাল, মৃণাল সেনকে নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে একমাত্র প্রামাণিক বইটি তাঁরই লেখা। সেই মানুষটিই লিখেছেন: ‘ভূত’ হল মৃত মানুষের রেখে যাওয়া স্মৃতি, যে মানুষ জানে না যে সে আর পৃথিবীতে নেই।

শততম
সময়টা ১৯৩৩। ইলিয়ট শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হল কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (আজকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়)। সাফল্যের অন্যতম নায়ক অমিয়কুমার চট্টোপাধ্যায় সেই টুর্নামেন্ট-এ দিয়েছিলেন ১০টি গোল। তাঁকে দলে পেতে আগ্রহী ছিল মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দুই শিবিরই। কিন্তু অমিয়বাবু হলেন শিক্ষাবিদ। ১৯৩৫-এ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের হাত থেকে সোনার মেডেল পান। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষা। শিক্ষকতা যাদবপুর ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অধ্যক্ষ ছিলেন রাঁচির বিআইটি (মিসরা)-তে। জন্ম ১৯২৪-এর ২৯ মার্চ, এ বছর পড়বেন একশোয়। স্মৃতি আজও অটুট। স্পষ্ট মনে আছে নেহরু, রবীন্দ্রনাথ, রাধাকৃষ্ণন, ত্রিগুণা সেন সহ বহু জনের সঙ্গে যোগাযোগের কথা। এখনও স্বচ্ছন্দে অটোয় যাতায়াত করেন। ইন্দুমতী সভাগৃহে ২৯ মার্চ বিকেল ৪ টেয় তাঁর শততম জন্মদিন পালন করবে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন, বেঙ্গল।

আশি পেরিয়ে
কবি, সমালোচক, গদ্যকার, প্রাবন্ধিক... না, এ সব বহু ব্যবহারে জীর্ণ বিশেষণে বিরক্ত হন অরুণকুমার বসু। নিজেকে নিছক অধ্যাপক আর, জনান্তিকে গীতিকার এটুকু পরিচয়েই ভাবতে পছন্দ তাঁর। পঞ্চান্ন বছর বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষকতা বঙ্গবাসী কলেজ থেকে রবীন্দ্রভারতী, কলকাতা, যাদবপুর, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বহু লেখা রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে, লিখেছেন একটি নজরুল-জীবনীও। আর, ভাস্কর বসু ছদ্মনামে বহু জনপ্রিয় গান লিখেছেন। পড়ানো আর গানের টানে অরুণবাবু পেরিয়ে গেলেন আশি বছর। সেই উপলক্ষে তাঁকে ঘিরে অনুষ্ঠান আজ সন্ধ্যায়, বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। উদ্যোগ ‘অধ্যাপক অরুণকুমার বসু অশীতিবর্ষপূর্তি সংবর্ধনা সমিতি’-র।

দ্বিভাষিক
‘কালো মেঘের ফিটন চড়ে
কালীঘাটের বস্তিতেও আষাঢ় এল।
সেখানে যত ছন্নছাড়া গলিরা ভিড় করে
খিদের জ্বালায় হুগলি-গঙ্গাকেই
রোগা মায়ের স্তনের মতো কামড়ে ধরে
বেহুঁশ পড়ে আছে।’

কলকাতা এ ভাবেই এসেছিল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায়। প্রতিবাদের কবি তিনি, তীব্র, সুস্পষ্ট প্রতিবাদের। তবু, ‘জামা কাপড়ের রং বদলায়... দিন বদলায় না’র মতো পংক্তি কেবল উদ্ধৃতির মতো ঘুরে ঘুরে আসে অধিকাংশ বাঙালির বীরেন্দ্র-পাঠ এইটুকুই। আর অনুবাদের অভাবে বাংলার বাইরে তাঁর কবিতা প্রায় পৌঁছয়নি বললেই চলে। শনিবার সন্ধেয় থীমা-র সভাঘরে প্রকাশিত হল বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার দ্বিভাষিক সংকলন সিলেক্টেড পোয়েমস। ইংরেজি অনুবাদ রবার্ট হ্যাম্পসন ও শিবানী রায়চৌধুরীর। এ বইয়ের অলংকরণ করেছিলেন বিজন চৌধুরী। মৃত্যুর মাসখানেক আগে এটাই ছিল তাঁর শেষ অলংকরণের কাজ। তাঁর প্রতিও এই অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা নিবেদন করল থীমা। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা এবং তার অনুবাদ প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন নবারুণ ভট্টাচার্য।

আত্মশক্তি
নিছক আলোচনা আর বইপ্রকাশ নয়, স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশতজন্মবর্ষ উদ্যাপন হয়ে চলেছে কাজের মধ্য দিয়েই। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৩২০টি সেবাকেন্দ্রে পিছিয়ে পড়া মানুষকে আত্মশক্তিতে জাগানোর যে কাজ করে চলেছে রামকৃষ্ণ মিশন তারই চিত্রকাহিনি প্রকাশিত হল এ বার। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় বেলুড় মঠ প্রকাশিত ‘রাইজিং ইন্ডিয়া’ নামের সেই ডিভিডি-তে নিছক তথ্য আর চিত্র জুড়ে করে দেওয়া হয়নি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে সেখানকার মানুষের জীবনকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে অর্ণব দাস পরিচালিত এই চিত্রকাহিনিতে। ছবিটি তৈরি করেছে ‘ই ফ্রেম ইনফোমিডিয়া’।

বই নিয়ে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসন্ত দিয়ে ৯০ বছর আগে শুরু হয় বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের যাত্রা। তারই ভূত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হল সম্প্রতি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনীতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক সভাঘরে। যাদবপুর ও বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ আয়োজিত দু’দিনের সেমিনারের বিষয় ছিল ‘উনিশ-বিশ শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনা’। শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, বাজার-মূল্য আর প্রকাশনার ঐতিহ্য দুটো একসঙ্গে বজায় রাখা আজ আর সম্ভব কি না সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা উচিত। জয়দীপ ঘোষ ও অনাথনাথ দাস প্রাক-গ্রন্থন বিভাগ ও উত্তর-গ্রন্থন বিভাগ রবীন্দ্র-প্রকাশনা নিয়ে আলোচনা করলেন। আর আশিস খাস্তগিরের বিষয় ছিল শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে শুরু করে উনিশ শতকের ছাপাছাপি। প্রাসঙ্গিক নানা দিক তুলে ধরেন শুভেন্দু দাশমুন্সী, বরেন্দু মণ্ডল, পলাশবরণ পাল ও অভিজিৎ গুপ্ত।

মুখোশ
যে কোনও চরিত্রের ভিতরের ভাব ফুটিয়ে তুলতেই শুরু হয়েছিল মুখোশের ব্যবহার। সারা পৃথিবীতেই ছড়ানো এই শিল্পমাধ্যমে ব্যবহৃত কত না উপাদান-- কাঠ ধাতু কাপড় কাগজ তন্তু পালক। এই মুখোশ নিয়েই বালিগঞ্জ প্লেসের ডিজাইন স্টুডিয়ো-য় হয়ে গেল এক প্রদর্শনী। জানা গেল, উৎসাহীরা পরেও দেখতে পাবেন এই সব নিদর্শন। সঙ্গে বাংলার মুখোশ, প্রদর্শনী থেকে।

প্রয়াণ
স্কুল-কলেজের শিক্ষা গ্রাম-মফস্বলে, তবে উচ্চশিক্ষা কলকাতা ও লন্ডনে। ১৯৬০-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন, ’৭৬-এ সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান। সে সময় জাপানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের লোভনীয় আমন্ত্রণও উপেক্ষা করেন বেলা দত্তগুপ্ত। পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রথম সভানেত্রী হিসেবে তাঁর ভূমিকা স্মরণীয়। দশটি বই ও অজস্র প্রবন্ধ লিখেছেন। প্রায় ৯২ বছরেও প্রজ্ঞা ও স্মৃতি ছিল বিস্ময়কর। টিভি দেখতেন না, মোবাইল রাখেননি। ব্যস্ত ছিলেন বাংলায় সমাজতত্ত্বের প্রথম অভিধান রচনায়। গত ১৫ মার্চ নীরবে চলে গেলেন প্রচারবিমুখ এই সমাজবিজ্ঞানী। সম্মিলিত উদ্যোগে তাঁর অভিধানের কাজ শেষ করার কথা ভাবছেন বেলা-অনুরাগীরা। ৩০ মার্চ তিনটেয় দারভাঙ্গা হল-এ তাঁর স্মরণ অনুষ্ঠান।

সেরা
অভিধানে কথাটা না থাকলেও ফিল্মের অভিধানে আছে। foley artist— যাঁরা শব্দ তৈরি করেন। ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ, দৌড়নো বা হাঁটার শব্দ, জল পড়া, পাতার মর্মর... এমন নানা শব্দ তৈরি করেন যাঁরা, সিনেমার সেই নেপথ্যজনদের কথা কতটুকু জানি আমরা? নিজের নতুন ছবি ‘শব্দ’ নিয়ে এক আড্ডায় বলছিলেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর এ-ছবির নায়কও এক foley artist, নাম তারক। ‘এফেক্ট সাউন্ড’ বা ‘ইনসিডেন্টাল সাউন্ড’ দিয়ে সে ফিল্মের আবহ বা পরিবেশ তৈরি করে। শব্দ নিয়ে তার এই ‘অবসেশন’ কেউ বুঝতে পারে না, এমনকী তার বউও শব্দ-এর সঙ্গে যে তার পরকীয়া তা ধরতে পারে না। ‘সিনেমা নিয়েই এ-সিনেমা। ভারতীয় সিনেমার শতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘও বলতে পারেন। তা ছাড়া ভারতীয় সিনেমায় আজকাল কাহিনি-টা প্রায় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, গল্পের গলিঘুঁজি খুঁজতেই সকলে ব্যস্ত। সিনেমা-টা যে আদতে ‘দেখা’ আর ‘শোনা’র ভিতর দিয়ে সূক্ষ্ম কিছু অনুভূতি আবিষ্কার, সে প্রবণতা কমে আসছে।’ জাতীয় স্তরে কৌশিকের ‘শব্দ’ এ বার সেরা বাংলা ছবি হয়েছে। কেমন লাগছে-র উত্তরে বললেন ‘আমার এ-ছবির সাউন্ড ডিজাইনিংয়ের জন্যে অনির্বাণ সেনগুপ্ত আর দীপঙ্কর চাকী এ বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের।’ এপ্রিলে মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।

শেষ আলোকচিত্রী
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
আড়াই টাকা দিয়ে বাংলা অভিধান কিনেছিলেন তিনি, রবীন্দ্রনাথের লেখা গুজরাতিতে অনুবাদ করবেন বলে। তিনি, বিনোদ কোঠারি, এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে। উদ্দেশ্য ‘গুরুদেব’কে দেখা। ২২ জুলাই ১৯৪১, আঠেরো বছরের বিনোদ যখন শান্তিনিকেতনে নামলেন তখনই খবর ছড়িয়ে পড়েছে, রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ, তাঁকে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে। ২৫ জুলাই তাঁকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বোলপুর স্টেশনের দিকে তখন নিজের রিফ্লেক্স ক্যামেরাটা নিয়ে অনুসরণ করেছিলেন বিনোদ। তখনই তাতে ধরা পড়েছিল তিনটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনকালের শেষ তিনটি ছবি তুলেছেন তিনিই। সত্যজিৎ রায়, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সহপাঠী বিশ্বভারতীর সংস্কৃতিকে ক্রমে আপন করে নিয়েছিলেন। ১৯৪১-এর শেষ দিকে পরিবারের সঙ্গে তাঁকে চলে যেতে হয় জামনগরে। সেখানে গিয়েও রবীন্দ্রনাথকে রেখেছিলেন জীবনের কেন্দ্রে। মুম্বইয়ের টেগোর সোসাইটি-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিনোদ কোঠারির বয়স এখন নব্বই পেরিয়েছে। তবু রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে অনুষ্ঠান শুনেই এক ডাকে রাজি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকে সম্প্রতি কলকাতা ঘুরে গেলেন তিনি। উপলক্ষ ছিল ‘রবীন্দ্রনাথ: ভাষান্তরে’ শীর্ষক একটি জাতীয় আলোচনাসভা। সেখানে মরাঠি, হিন্দি ও সাঁওতালি ভাষায় রবীন্দ্রচর্চা নিয়ে আলোচনা করেন শর্মিলা মজুমদার, দাউলাল কোঠারি, সুবোধ হাঁসদা। প্রধান অতিথি বিনোদ বললেন তাঁর রবীন্দ্রস্মৃতি। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের অধ্যক্ষ রামকুমার মুখোপাধ্যায়। ভারতীয় ভাষায় রবীন্দ্রচর্চার এই ধারাবাহিকতা আশার কথা।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.