রাজ্যের ঘোষণা না মানার পথেই কমিশন
ঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের একতরফা ঘোষণা মানবে না রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ ব্যাপারে তারা আইন মেনে বিরোধিতার পথে এগোতে পারে বলে শনিবার মহাকরণ সূত্রে খবর মিলেছে। কমিশনের এক মুখপাত্র অবশ্য এ দিন বলেছেন, “আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। দু’এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কী করবে কমিশন?
কমিশন সূত্রে বলা হচ্ছে, আদালতে গিয়ে সমাধান চাওয়ার আগে সংবিধান এবং রাজ্য পঞ্চায়েত আইন মেনে পদ্ধতিগত দিকগুলি সম্পূর্ণ করা হবে। যার প্রথম ধাপ, সরকারকে চিঠি দিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলা। সম্ভব হলে সোমবারই এই চিঠি দেওয়া হবে। এর পর সংবিধানের ২৪৩-কে (৩) ধারা মেনে রাজ্যপালের সহায়তা চাইতে পারে কমিশন। সে ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধিদের ডেকে মতভেদ মেটাতে উদ্যোগী হতে পারেন রাজ্যপাল। এমনকী, সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে তিনি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়ে বলতে পারেন, ক’দফায় এবং কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পঞ্চায়েত ভোট করতে হবে। রাজ্যপাল এমন নির্দেশ দিলে তার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারবে না রাজ্য। কারণ, সংবিধানে এর সংস্থান নেই। এর বাইরে কমিশন নিজেই আদালতে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
সিপিএমের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে আছেন দলের রাজ্য কমিটির দুই সদস্য রবীন দেব ও সুখেন্দু পাণিগ্রাহী। তাঁরা দু’জনে বহু বার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই নেতাই ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, সরকারের কথা মেনে নেওয়ার পরিবর্তে কমিশনার কড়া মনোভাব নিতে পারে।
রাজ্য সরকার ভোটের দিন ঘোষণা করে দেওয়ার পরে কমিশনের কর্তারা এ দিন আইনজ্ঞ-সহ নানা পর্যায়ে কথাবার্তা চালিয়েছেন। ছুটির দিন হলেও মীরা পাণ্ডে, কমিশনের সচিব তাপস রায় অফিসে এসে প্রয়োজনীয় নথিপত্র তৈরি করেছেন।
মহাকরণের কর্তাদের একাংশের ধারণা, রাজ্যের দাবিমতো দু’দফায় ভোট করতে হয়তো আপত্তি করবে না কমিশন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় কেন মাত্র তিনটি জেলাতে ভোট হবে, সেই প্রশ্ন তারা তুলবে। কমিশন বলতে পারে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিলে তাদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হবে। বিশেষ করে বিরোধীরা যখন এ নিয়ে আপত্তি তুলতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রেখে ভোট করানোর পক্ষেও কমিশন সরব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট
“...পঞ্চায়েত ও পুর নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মতোই। সংবিধানের ৩২৪ ধারায় জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, ২৪৩ কে ও ২৪৩ জেডএ (১) ধারায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেও সেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ...পঞ্চায়েত ও পুরভোট পরিচালনা, ভোটার তালিকা তৈরি ও ভোটের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের আওতার সম্পূর্ণ বাইরে থেকে কাজ করবে। ২৪৩ কে (৩) ধারাতেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ওই ধারা অনুযায়ী, রাজ্যপালকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে ন্যস্ত দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী সরবরাহ করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সাহায্য করতে রাজ্য সরকার বাধ্য। অবাধ ও মুক্ত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন তা নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে।”

* কৃষ্ণ সিংহ তোমর বনাম আমদাবাদ পুরসভা মামলায় (২০০৬) সুপ্রিম কোর্টের
পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়ের অংশবিশেষ
এই সংঘর্ষের বাতাবরণে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে রীতিমতো ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, সরকার এখন ভোট করতে চাইছে না। তাই কমিশনের সঙ্গে সংঘর্ষে গিয়ে অকারণ বিতর্ক তৈরি করছে। গোটা বিষয়টি আইনের দরজায় ঠেলে দিয়ে ভোট পিছিয়ে দিতে চায় তারা।
সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “কমিশন বারবার তিন দিনে ভোট করার কথা বলা সত্ত্বেও সরকার যে ভাবে দু’দিনে ভোট ঘোষণা করে দিল, তাতে স্পষ্ট, তারা সংঘাতে যেতে চাইছে। যাতে পঞ্চায়েত ভোট পিছিয়ে যায়।” তবে প্রকাশ্যে কোনও নেতা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “সোমবার নির্বাচন কমিশন কী করে, তা দেখেই মতামত জানাব।”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “সরকারের এই পদক্ষেপের পিছনে ভোটে না-যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রশাসক বসিয়ে পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। এটা করতে পারলে ব্লক স্তরে তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তের কাজ অনেকটাই সেরে ফেলা যাবে।”
বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ দিন বলেন, “সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের নিজস্ব ক্ষমতা ও এক্তিয়ার রয়েছে। সেখানে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা রাজ্য করতেই পারে। কিন্তু আলোচনা মানেই সহমত বা কমিশনের নির্দেশ মানতে হবে, এমনটা নয়।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও শনিবার ফের বলেছেন, ২৬ ও ৩০ এপ্রিল ভোটের দিন ঘোষণা করে দিয়ে তাঁরা কোনও ভুল করেননি। ভোট স্থগিতের কোনও অভিপ্রায় সরকারের নেই দাবি করে তাঁর বক্তব্য, “আমরা সুষ্ঠু ভাবে ভোট করতে চাই বলেই ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকা দিয়েছি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। অন্যান্য সহায়তাও করা হয়েছে।”
নির্বাচন কমিশন কী করতে পারে
• রাজ্যকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলতে পারে
• মধ্যস্থতার জন্য রাজ্যপালের কাছে যেতে পারে
• সমস্যা না মিটলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে
কী বলছে
‘‘আমরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছি। এখনও কিছু চূড়ান্ত করিনি। দু’এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
এক কমিশন কর্তা
কী বলছে সরকার
‘‘২০০৮ সালে নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল, পাহাড়ে আগুন জ্বলছিল। সেই সময় পঞ্চায়েত ভোটে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে এক কোম্পানিও পাওয়া যায়নি। এখন রাজ্য শান্ত। তা হলে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার অর্থ কী?’’
সুব্রত মুখোপাধ্যায। পঞ্চায়েতমন্ত্রী
ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে সুব্রতবাবুর যুক্তি, “২০০৮ সালে নন্দীগ্রাম, জঙ্গলমহল, পাহাড়ে আগুন জ্বলছিল। সেই সময় পঞ্চায়েত ভোটে ১০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে এক কোম্পানিও পাওয়া যায়নি। এখন রাজ্য শান্ত। তা হলে ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়ার অর্থ কী?” তাঁর প্রশ্ন, “আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। কোথায় কত বাহিনী দেওয়া হবে, তা নিয়ে কমিশনের এত চিন্তা কেন?”
বিরোধীরা অবশ্য সুব্রতবাবুর এই যুক্তি মানতে নারাজ। সিপিএম নেতাদের একাংশ মনে করেন, রাজ্যে এখন আইনশৃঙ্খলার বেহাল অবস্থা। রাজ্য সরকারের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ভোট করা কঠিন। রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ কমিশনকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে তিন দফায় ভোট করার অবস্থান থেকে কমিশন যেন সরে না আসে। তৃণমূলের বিদ্রোহী সাংসদ কবীর সুমনও কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বাম আমলে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছি। এখন চাইব না কেন?”
রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুলাই মাসে। পঞ্চায়েত আইন বলছে, মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন না-হলে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে। তখন আদেশনামা জারি করে তিন মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করে ক্ষমতা হাতে রাখতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরে কী হবে, পঞ্চায়েত আইনে স্পষ্ট করে তার কোনও নির্দেশ নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.