অসম-ভুটান সীমান্তের চিরাঙে অজানা প্রাণীর কঙ্কাল ঘিরে আতঙ্ক
জুরাসিক যুগ ফিরে এসেছে চিরাং-এ!
অন্তত মাত্রা গ্রামের বাসিন্দাদের রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে। আশপাশের গ্রামে যাঁরা জুরাসিক পার্ক সিনেমাটি দেখেছেন তাঁরা আরও রং চড়িয়ে বাকিদের বলছেন, ‘টিরানোসোরাস রেক্স’ গ্রামে হানা দিলে কেমন কাণ্ড হতে পারে। বাচ্চা যদি থাকে, তবে বাবা-মা নিশ্চয়ই থাকবে। আর ডাইনোসরের বাচ্চা যদি ছয় ফুট উঁচু হয়, তবে বাবা ডাইনো ও মা ডাইনো না জানি কত বড় হতে পারে! রোজ একটা মানুষে কী তাদের পেট ভরবে? সকলেই মত দিচ্ছেন, ডাইনোর দল কোথায় লুকিয়ে বাসা করেছে সন্ধান করা দরকার? কিন্তু বেড়ালের গলায়, থুড়ি, খোদ ডাইনোসরের গলায় ঘণ্টা কে বাঁধবেন?
এই একবিংশ শতাব্দীতে হঠাৎ করেই ‘ডাইনোসর-আতঙ্ক’-এর শিকার অসম! হাজার বছরের পুরনো জীবাশ্ম নয়। আতঙ্কের মূলে এক তাজা ডাইনো-সদৃশ কঙ্কাল! এমনই এক কঙ্কালকে ঘিরে বনকর্তা, শিক্ষক, গ্রামবাসী-সহ সকলেই চিন্তিত। বনকর্তাদের মতে, উদ্ধার হওয়া কঙ্কালের সঙ্গে প্রাগৈতিহাসির প্রাণীটির মিল রয়েছে। চেনা কোনও প্রাণীর কঙ্কাল এমনটা হতেই পারে না।

অজানা প্রাণীর কঙ্কাল নিয়ে ফণীন্দ্র নার্জারি। —নিজস্ব চিত্র
ঘটনার শুরু মাসখানেক আগে। অসম-ভুটান সীমান্তে, কুকলুং-এর জঙ্গলের ভিতরে ভাঙাপাহাড়ের মাথায় রয়েছে বাথৌ মন্দির। স্থানীয় মাটকা পাটকিগুড়ি গ্রামের মানুষ মাঝেমধ্যে মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি এমনই একদল পুণ্যার্থী পাহাড়ের গা-ঘেঁষে যাওয়া কুকলুং নদীর পাশে এক অদ্ভুত দর্শন কঙ্কালের দেখা পান। প্রথমে গরুর কঙ্কাল মনে হলেও, পরে কাছে গিয়ে দেখা যায়, বালিতে অর্ধেক ঢুকে থাকা কঙ্কালটির আকৃতি ডাইনোসরের মতো। সামনে ঝোঁকা মেরুদণ্ড। পিছনের লম্বা পা। সামনে পা নেই। পিঠের দিকে কাঁটা থাকার চিহ্নও স্পষ্ট। সাবধানে বালি ও পাথর সরিয়ে কঙ্কালটি বের করা হয়। বাকি শরীর মিললেও মাথাটি ভেঙে গিয়েছিল।
এমন অশুভ কঙ্কাল ঘরে নিয়ে যেতে কেউ রাজি নন। আবার এমন জিনিস সকলকে না দেখিয়ে পারাও যায় না। মাটকা হাইস্কুলের প্রধান করণিক ফণীন্দ্র নার্জারি কঙ্কালটি নিয়ে বাড়ি আসেন। সেদিন থেকেই তাঁর বাড়িতে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে রয়েছে। বন বিভাগের কানে যায় কঙ্কালের গল্প। আজ চিরাং-এর ফরেস্টার ও রক্ষীরা স্থানীয় একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ফণীন্দ্রের বাড়িতে হাজির হন। তাঁকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে কঙ্কালটি কাজলগাঁও দফতরে নিয়ে আসা হয়।
বিজনি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা অনিন্দিতা চক্রবর্তী ফনীন্দ্রের বাড়িতেই কঙ্কালটি দেখেন। তাঁর মতে, এখনই এটিকে ‘ডাইনোসর’ বলা যাবে না। পরিচিত সব প্রাণীর চেয়ে এটি চরিত্রে অন্যরকম। তবে সম্ভবত এটি স্তন্যপায়ী শ্রেণির। চিরাং-এর ডিএফও ব্রহ্মানন্দ পাতিরি বলেন, “এমন প্রাণী কখনও দেখিনি। আদলে ডাইনোসর জাতীয় প্রাণীর ছাপ স্পষ্ট। পিছনের শক্তিশালী পা দেখা যাচ্ছে। সামনের দিকে ছোট্ট পা ছিল। মুখের সামনের অংশটি ভেঙে গিয়েছে। পিঠের দিকে শিরদাঁড়া বরাবর কাঁটার সারি স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের খবর দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এসে, প্রাণীটিকে শনাক্ত করবেন।”
তবে গ্রামবাসীরা বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য থোড়াই অপেক্ষা করবেন? তাঁর নিশ্চিত, ভারত-ভুটান সীমান্তের জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছে এমন আরও ডাইনোর পাল। আপাতত দিন গোনা, কবে মেদিনী কাঁপিয়ে বিরাট তিন আঙুলের থাবা ঘাড়ে এসে পড়ে!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.