|
এক ঝলকে... |
পৃথিবী
১৭ মার্চ - ২৩ মার্চ |
|
• মেকটিলা • এ এক আশ্চর্য দৃশ্য! মুণ্ডিতমস্তক একবস্ত্রাবৃত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছোরাছুরি হাতে বাগিয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, রক্তে ভাসছে প্রতিপক্ষ। মায়ানমারের মেকটিলা শহরে বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলিমদের প্রবল সংঘর্ষ চলছে, এমন সংঘর্ষ যাকে দাঙ্গা বলাই ভাল। ব্যাপারটা শুরু হয় একটি বৌদ্ধ মেয়ের উপর রোহিঙ্গা মুসলিমরা গণধর্ষণ চালিয়েছে, এই খবর দিয়ে। তার পর দ্রুত ঘটনার ঘনঘটা। জনা কুড়ি মারা গিয়েছেন, বহু ঘরবাড়ি জ্বলছে, বহু মসজিদ ভাঙচুর হয়েছে, অন্তত পাঁচটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি’ যাঁরা বলেন, তাঁরা আসলে শান্তির শরণই নিতে চান, কিন্তু মায়ানমারের বাস্তব অন্য রকম। এখানে আরাকানি বৌদ্ধদের সঙ্গে রোহিঙ্গা মুসলিমদের চিরকাল তীব্র কুসম্পর্ক। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে বেআইনি ভাবে বর্মাদেশে এসে জমিয়ে বসেছেন, অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধে জোগাড় করছেন, সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন, তাঁদের এ দেশ ছাড়তে হবে: এই হল আরাকানি বৌদ্ধদের দাবি। |
সে দেশের সামরিক জুণ্টা সরকার কখনওই আরাকানিদের সাংস্কৃতিক বিশিষ্টতা স্বীকার না করায়, তাদের উপর কথায় কথায় হিংস্র আক্রমণ চালানোর ফলেই তাদের এই নিরাপত্তাবোধের অভাব, যে অভাবের প্রকাশ ঘটে সরকারের বদলে রোহিঙ্গাদের উপর লাগামছাড়া আক্রমণের মাধ্যমে। সম্প্রতি জুণ্টা সরকারের লাগাম আলগা হয়ে সংস্কারের জমানা শুরু হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সংকট চলছে একই তালে। এ দিকে ক’দিনের মধ্যেই মায়ানমারে পা রাখবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। নতুন সংস্কারকামী দেশের মুখরক্ষা হবে কী করে, এই ভয়াবহ দাঙ্গার প্রেক্ষিতে? স্বভাবতই মহা-উদ্বিগ্ন থিন শিন সরকারের নেতারা। আর বিরোধীরা মনে করছেন, এই হল সুবর্ণসুযোগ, এর মধ্যেই বর্মী নাগরিকত্বের বিষয়টি জোরদার ভাবে তুলতে হবে। রোহিঙ্গাদের এত দিনেও নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। এখনই সরকারকে চেপে ধরতে হবে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবিতে। পরিস্থিতি, যাকে বলে, অগ্নিগর্ভ!
|
• শাংহাই • দু’সপ্তাহে নদী থেকে উদ্ধার হল ষোলো হাজারেরও বেশি মৃতদেহ। তবে মানুষের নয়, শুয়োরের। শাংহাইয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, কারণ যে হুয়াংপু নদী থেকে উদ্ধার হচ্ছে এই শবদেহগুলি, সেই নদী থেকেই শহরের পানীয় জল আসে। নদীর জল নাকি এখনও বিষাক্ত হয়নি। সে না হোক, কিন্তু হঠাৎ নদীতে এত মৃত শুয়োর এল কোথা থেকে? সরকারি কর্তাদের মুখে কুলুপ।
অন্য সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, পুলিশ হঠাৎ খুব সক্রিয় হয়ে উঠেছে। মৃত শুয়োর কিনে তার মাংস বিক্রি করে, এমন ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। জিয়াজিং অঞ্চলে তিন জন শুয়োরব্যবসার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তারা নাকি গত দু’বছরে ৭৭,০০০ মৃত শুয়োর কিনে এই ব্যবসা করেছিল। পুলিশের চাপে ব্যবসা গুটোনোর ধূম। নদীতেও তাই মৃত শুয়োরের ঢল!
|
আরও একটি সফর। আরও একটি বক্তৃতা। আরও কিছু ভাল ভাল কথা। তাঁর বক্তৃতাটি ইতিহাসে এই ভাবেই খ্যাত হয়ে থাকবে। বক্তৃতা মানেই যদিও ভাল ভাল কথা, বিশেষ করে তাঁর বক্তৃতা ইতিমধ্যেই বিশিষ্টতা অর্জন করে ফেলেছে তাদের সুললিত সুচর্চিত সুভাষিত চরিত্রের জন্য, তবু এ বারের ইজরায়েল সফরে বক্তৃতাটি যেন সেই তুলনায়ও বড্ড বেশি সুললিত, অর্থাৎ, ভিন্ন ভাবে বলতে গেলে, ফাঁকা আওয়াজে ভরা! সেই ‘দেখতে হবে, বুঝতে হবে’ গোছের অর্থহীন শব্দাবলি। সেই ইজরায়েলের বেআইনি নির্মাকাজের বিরুদ্ধে মিনমিনে সমালোচনা। সেই ইহুদি বঞ্চনা আর ক্ষোভের ইতিহাসে নিমজ্জন। সেই হামাস-হিজবুল্লার ‘অকারণ’ হিংসায় বিস্ময় ও বিরক্তি। সেই সমাধানহীন গোলকধাঁধায় উদ্দেশ্যহীন বিচরণ। এবং সেই হলোকস্ট মিউজিয়ামে গিয়ে বেদনার ইতিহাসের সামনে শির-আচ্ছাদন পরিহিত নতজানু ভঙ্গি। স্বভাবতই ইজরায়েল খুশি, প্যালেস্তাইন তথা সমগ্র আরব ইসলামি পক্ষ বীতশ্রদ্ধ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর সফর মানেই ‘রিপিট পারফরম্যান্স’, সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলার দৃষ্টান্ত, এ সবই ঠিক। তবু প্যালেস্তিনীয়রা আশা করেছিলেন অন্য রকম দুএকটা কথা শুনলেও শোনা যেতে পারে। একে তো ওবামার সম্পর্কে এই ‘ব্যতিক্রমী-হলেও-হতে-পারেন’ ধারণাটি চালু। তার উপর খবর ছিল, ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। কিছু দিন আগেই পেন্টাগনে নিযুক্ত নতুন প্রতিরক্ষা সচিবটিও নাকি ইজরায়েলের প্রতি বেশ বিদ্বিষ্ট। তা হলে কি মার্কিন অবস্থান একটু পাল্টাচ্ছে? ইজরায়েলকে কড়া বার্তা দিতে চাইছে ওয়াশিংটন? আলোচনায় বসার জন্য জোর দিতে চলেছে? এ সব মিলিয়েই প্রেসিডেন্ট ওবামার গত সপ্তাহের সফর নিয়ে চলছিল গুজগুজ ফুসফুস। একটা আশার আবহ যাকে বলে। ঠাণ্ডা জল ঢেলে দিয়ে ওবামা সেই আবহের দফারফা করলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠা-সত্তা এসে ব্যতিক্রমী সত্তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। |