মুখেই হুমকি,
অকালে ভোট চায় না কেউই

রাজীব গাঁধী তখন প্রধানমন্ত্রী। বফর্স-কাণ্ড ঘিরে সংসদ উত্তাল। বিজেপি-র সব সাংসদ গণ-ইস্তফা দিয়েছেন। দাবি উঠেছে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের। এমন একটা সময়ে সংসদের আড্ডায় কংগ্রেস মুখপাত্র ভি এন গ্যাডগিল রসিকতা করে বলেছিলেন, বিরোধীরা যতই হুঙ্কার দিক না কেন, ব্যক্তিগত ভাবে কোনও সাংসদই অকাল ভোট চান না। তাই কংগ্রেস যদি এমন বিল আনে যে, দেশে আর ভোট হবে না, এখন যাঁরা সাংসদ আছেন, তাঁরাই স্থায়ী। তা হলে সব দলের সবাই মিলে সেই বিল পাশ করে দেবেন। অর্থাৎ, এত পয়সা খরচা করে, এত ঘাম ঝরিয়ে সাংসদ হয়েছি। পাঁচ বছরের আগেই আবার ভোট কেন বাবা! এটাই সব সাংসদের মনের কথা।
ডিএমকে ইউপিএ ছাড়ার পরে চলতি বছরেই লোকসভা ভোট হয়ে যাবে কিনা, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। সংসদের সেন্ট্রাল হলে আসর জমাচ্ছেন প্রাক্তন সাংসদরা। তাঁদের মুখে আশার আলো ভোট হলে আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা! তাঁদের দেখে এক বর্তমান সাংসদের তির্যক মন্তব্য, ‘ভোটের গন্ধ পেয়ে আকাশে চিল উড়তে শুরু করেছে!’
তবে দিল্লির অনেক রাজনীতিকেরই বক্তব্য, কংগ্রেস দুর্বল হয়ে পড়েছে, মূল্যবৃদ্ধি-দুর্নীতি-সহ বহু বিষয়ে দেশ জুড়ে কংগ্রেস সম্পর্কে একটা বিরূপতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এ সবই সত্যি। কিন্তু তা-ই বলে এখনই লোকসভা নির্বাচন হয়ে যাবে, এমনটা নয়। সমাজবাদী পার্টির লোকসভার সদস্য, মিথিলেশ কুমার যেমন বলছেন, “ভোটের হুঙ্কারটা অনেকটাই বলার জন্য বলা। আসলে কেউই এখন ভোট চান না। তা ছাড়া, আমাকে মানুষ যে ভোট দেন, সেটা পাঁচ বছরের জন্য। কাজেই খারাপ কাজ করলেও তার বিচার পাঁচ বছর পরেই হওয়া উচিত।” সিপিআই নেতা অতুল আঞ্জানের বক্তব্য, “এটা একটা প্রতিবন্ধী সরকার। এদের যা করার, করা হয়ে গিয়েছে। ভাল-খারাপ সব কাজ শেষ। এখন এই অবস্থাতেই সরকার চলুক। তার পর ভোট হোক।” এমনকী বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকরও বলেন, “২০১৪-র মে মাসে এই সরকার যে আর আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। কিন্তু তার আগেই ভোট হবে কি না, সেই ভবিষ্যৎবাণী করতে রাজি নই।”
অনেকের ধারণা, আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে মুলায়ম সিংহ যাদব ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচন এগিয়ে আনার পক্ষে। কিন্তু মমতা এ-ও বলেছেন যে, তিনি যেনতেন প্রকারে সরকার ফেলে দিতে চান না। কংগ্রেস নেতারা কেউ কেউ মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে যে হেতু তৃণমূল একটা প্রতিকূল রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সে হেতু মমতা আরও একটু সময় নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে লোকসভা ভোটে যেতে চাইবেন। কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাবের ইঙ্গিত তিনি ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। যদিও তাঁদের সঙ্গেও মমতা যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
অন্য দিকে, উত্তরপ্রদেশে মুলায়মের অবস্থাও বিশেষ ভাল নয়। সেখানে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে। তাতে মুলায়ম-পুত্র মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব যথেষ্ট বিব্রত। পরিস্থিতি সামলাতে ছেলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হচ্ছে বাবাকে। ফলে ভোট নিয়ে প্রকাশ্যে মুলায়ম যা-ই বলুন, আসলে তিনিও আরেকটু সময় চান বলেই মনে করা হচ্ছে।
দুই বড় দল কংগ্রেস এবং বিজেপি কী ভাবছে?
তারা কড়া নজর রাখছে পরস্পরের দিকে। কংগ্রেস দেখতে চাইছে, বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী, বা নিদেনপক্ষে নির্বাচনী প্রচার কমিটির প্রধান করে কি না। এবং সে ক্ষেত্রে রাজনীতির মেরুকরণ কতটা হয়। তখন সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তুলে মমতা, মুলায়ম, মায়াবতী থেকে শুরু করে নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়কদের কাছে টানার চেষ্টা করবে কংগ্রেস। মে মাসে কর্নাটকে বিধানসভা নির্বাচন। সেখানে বিজেপি-কে হারানো যাবে বলেই মনে করছে কংগ্রেস। তার পর নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় ও দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের ফল কী হয়, সেটা দেখে নিয়ে তারা যা করার করবে বলে অনেকের মত। কংগ্রেস মুখপাত্র রশিদ আলভি অবশ্য বলেন, “কংগ্রেস খামোকা কেন তাড়াহুড়ো করে ভোট করতে যাবে? ভোট যখন হওয়ার কথা, তখনই হবে।” যদিও নগদ ভর্তুকি ও একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে সামনে রেখে কংগ্রেসের আচমকা ভোটে চলে যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা আছে কি না, তা বুঝতে চাইছে বিজেপি।
একাত্তরের যুদ্ধের পর ইন্দিরা গাঁধী ভোট এগিয়ে এনেছিলেন। তাতে সুফলও পেয়েছিলেন। কিন্তু ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’-র কথা ভেবে লালকৃষ্ণ আডবাণীর চাপে ভোট এগিয়ে এনে হেরে গিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। আডবাণী নিজেই এখন বলেছেন, “আমাদের দেশে পশ্চিমী ধাঁচে পাঁচ বছর পর লোকসভা ভোট হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তা সে সরকার সংখ্যালঘু হোক, বা সংখ্যাগুরু।
তা হলে ভোট কেনাবেচা বন্ধ হতে পারে।”
সুতরাং এখন যা পরিস্থিতি, তাতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে। কিন্তু বড় কোনও দুর্যোগ না-হলে ভোট আগামী বছর যথাসময়েই হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.