তিনটি রুগ্ণ সংস্থার জমি বেচে দিচ্ছে রাজ্য
ক্ষমতায় এসে নতুন সরকার ঘোষণা করেছিল, রাজ্যের বন্ধ ও রুগ্ণ কারখানার অব্যবহৃত জমিকে কাজে লাগানো হবে। এরই প্রথম ধাপে সরকারের হাতে থাকা তিনটি রুগ্ণ সংস্থার ১১৫ একর জমিকে চিহ্নিত করেছে রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন দফতর। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, নিলামে ওই জমি বিক্রি করে তা শিল্পের কাজেই লাগানো হবে।
তাঁর কথায়, “এটি পাইলট প্রকল্প।
যদি সফল হই, তবে অন্য রুগ্ণ সংস্থার জমির ক্ষেত্রেও একই পথ নেওয়া হবে।”
রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি বন্ধ ও রুগ্ণ সংস্থার হাতে কত জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে সমীক্ষা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। তবে এই ক্ষেত্র থেকে অব্যবহৃত জমির হিসেব পেলেও তা বড় শিল্পের কাজে যে লাগবে না, তা নিয়ে শিল্প মহলের সংশয় নেই। তা ছাড়া রাজ্য প্রশাসনের একটি অংশের ধারণা, বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকা বন্ধ ও রুগ্ণ কারখানার অব্যবহৃত জমি হাতে পাওয়াও সরকারের পক্ষে মোটেই খুব সহজ কাজ হবে না।
শিল্প পুনর্গঠন দফতর সূত্রের খবর, নিলামে জমি বিক্রি করে নতুন শিল্প স্থাপনের আশায় প্রথম ধাপে ন্যাশনাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (নিসকো), নিও পাইপস এবং ইলেকট্রো মেডিক্যালের ব্লাড ব্যাঙ্কের অব্যবহৃত জমি বাছাই করা হয়েছে। সরকারের খাতায় এই তিনটি সংস্থাই রুগ্ণ বলে পরিচিত। ঠিক হয়েছে, নিসকো, নিও পাইপস এবং ইলেকট্রো মেডিক্যালের কর্মীদের আপাতত আর এক রুগ্ণ সংস্থা লিলি বিস্কুট কারখানায় বদলি করা হবে। প্রত্যেক কর্মীকে নতুন ধরনের কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেবে সরকার। এর পরের ধাপে বিভিন্ন চালু সংস্থায় ওই কর্মীদের নিয়োগ করা হবে। সব মিলিয়ে তিনটি সংস্থার কর্মীসংখ্যা ২৯০ জন। শিল্পমন্ত্রীর দাবি, “আমরা কাউকে ছাঁটাই করব না।”
এক মুখপাত্র জানান, বেলুড়ে নিসকো-এর ১০৬ একর, নিও পাইপস-এর ৭.১ একর, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে ইলেকট্রো মেডিক্যাল-এর ২.৩ একর অব্যবহৃত জমি রয়েছে। সব মিলিয়ে ১১৫ একরের সামান্য বেশি। এই জমি বিক্রি করা হবে। লিলি বিস্কুট কারখানার জমি লিজে নিয়েছিল সরকার। ওই জমি বিক্রি করা যাবে না। তাই রুগ্ণ হলেও লিলি বিস্কুট কারখানাতেই আপাতত সব কর্মীকে পুনর্বহাল করা হবে।
শিল্পমন্ত্রী জানান, যে সব সংস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বাঁচানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাদের জমিই বিক্রি করা হবে। তবে আবাসন বা অন্য কোনও প্রকল্প করার জন্য এই জমি বিক্রি করা হবে না। শিল্পের জমিতে শিল্পই গড়তে হবে এই শর্তেই সরকার জমি বিক্রি করবে। তাঁর কথায়, “অধিকাংশ বিনিয়োগকারী কলকাতা ও তার আশপাশে জমি চান। এ ক্ষেত্রে বন্ধ বা রুগ্ণ কারখানার জমি উদ্ধার করে তা বিক্রি করা যেতে পারে। এতে কলকাতার আশপাশে যেমন শিল্পের জন্য কিছু জমি পাওয়া যাবে, তেমনই নিলামে জমি বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে মোটা টাকা আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।”
কিন্তু রুগ্ণ শিল্পের জমিতে কি বড় শিল্প সম্ভব? পার্থবাবুর সংক্ষিপ্ত উত্তর, “আধুনিক শিল্পের জন্য কম জমি লাগে।” তাঁর দাবি, “যেখানে জমির আকাল রয়েছে, সেখানে বন্ধ-রুগ্ণ কারখানা থেকেই কয়েক হাজার একর জমি মিলতে পারে। এবং সেই কাজই শুরু হল।”
শিল্পমন্ত্রী এই বন্দোবস্তকে মুস্কিল আসান মনে করলেও, শিল্প মহলের একটি বড় অংশের মতে, বন্ধ ও রুগ্ণ কারখানার এই সব টুকরো টুকরো ফাঁকা জমি দিয়ে আর যাই হোক রাজ্যে শিল্পায়ন আনা সম্ভব নয়। কারণ উৎপাদনভিত্তিক বৃহৎ শিল্পের জন্য এক লপ্তে কয়েকশো একর জমির প্রয়োজন। কোনও কোনও শিল্পে তা হাজার একরও ছাড়াতে পারে। যেমনটা হয়েছিল সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য। আবার শালবনীতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত কারখানা বা কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ জমি প্রয়োজন, বন্ধ-রুগ্ণ কারখানা থেকে সেই পরিমাণ অব্যবহৃত জমি পাওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই এই সব জমিতে বড় জোর কিছু মাঝারি ও ছোট শিল্প হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পও হতে পারে। কিন্তু বৃহৎ শিল্প তৈরির সম্ভাবনা কোথায়?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.