খেলাধুলা...
অজি আকাশে সচিন-বংশ
ত দিন বিশ্বকাপে তাঁকে ছাড়া ভাবা যেত না ভারতীয় ক্রিকেট। তাঁর সংহার দেখতে দেখতে একটা গোটা প্রজন্মের বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ খুঁজে পাওয়া। কিন্তু এই প্রথম বিশ্বকাপ যুদ্ধে সচিন-হীন বাইশ গজে ভারতীয় ক্রিকেট। বিশাল বনস্পতির ছায়া আর নেই। দু’যুগ পর বিশ্বকাপে ভারতকে আর তেন্ডুলকর নামে ডাকবে না ক্রিকেট বিশ্ব। সচিন-হীন টিম ইন্ডিয়ার আকাশ কেমন হতে পারে?


অধিনায়ক
নামটা পড়লে অনেকে আঁতকে উঠবেন। ঝাঁঝালো প্রশ্ন করবেন, যে লোকটা দেশে-বিদেশে এত লাঞ্ছিত হল, ০-৮ বিপর্যস্ত হল, কৃতিত্ব বলতে অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ মার্কা একটা টিমকে হারানো, তাকে আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপে অধিনায়ক করে পাঠানোর কী মানে? তার চেয়ে বিরাট কোহলিকে ট্রাই করা হোক।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে হবে। টেস্ট আর ওয়ান ডে এক জিনিস নয়। আবেগ বাদ দিয়ে বিচার করলে ওয়ান ডে-তে এমএসডির বিকল্প এখনও খুঁজে পাবেন না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ও শুধু ভাল নয়, অসাধারণ। ধোনিকে এক বার বলতে শুনেছি, ২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত টানতে পারবে কি না জানে না। টিমের স্বার্থেই ওর ‘ওয়ার্কলোড’ কমাতে হবে। মাঝেমধ্যে ওকে বিশ্রাম দেওয়া হোক। আর লোয়ার অর্ডারে এমএসের মতো ফিনিশার বিশ্ব ক্রিকেটে খুব কম আছে। আমাদের দেশে তো নেই-ই।

ওপেনিং
সরি, বীরুর নামটা প্রথমেই কেটে ফেলতে হচ্ছে। ইদানীং ওর যা ফর্ম- ফিটনেস, দু’বছর টানতে পারবে না। ওর হ্যান্ড-আই কো-অর্ডিনেশন আগের মতো নেই।
তাই বলে রাহানে?
বলতে পারেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্ধর্ষ ফর্মে থাকার পরেও ছেলেটাকে কেন টিমের সঙ্গে দু’বছর ধরে শুধু ঘোরানো হবে?
যতটুকু যা ক্রিকেট খেলেছি, খেলাটার সম্পর্কে যতটুকু বুঝি, তাতে বলব ওর মতো টেকনিক্যালি সাউন্ড ব্যাটসম্যান খুব কম দেখেছি। সব চেয়ে বড় কথা, ও বিশ্বের কোনও বোলারকে ভয় পায় না। দেখতে ছোটখাটো হলে কী হবে, ওর টেকনিক এত ভাল যে, বাউন্সার সামলাতে অসুবিধা হয় না। পুল, হুক অনায়াসে করে।
শুধু ওর প্রতি টিম ম্যানেজমেন্টের মনোভাবটা পাল্টানো দরকার। মাঝে আমাকে এক দিন দুঃখ করে টেক্সট করল, গত দু’বছরে মাঠে এত জল বয়েছে যে, কোনও এনডোর্সমেন্ট এলে সেটা মিনারেল ওয়াটার কোম্পানিই হবে! শুনে খুব খারাপ লেগেছিল। এক জন তরুণ ক্রিকেটারের মনোবল এ ভাবে দুমড়ে দেওয়ার কোনও যুক্তি নেই।
আমার বিশ্বকাপ টিমে একটা ওপেনার তাই অজিঙ্ক।
পার্টনার হিসেবে আপাতত দু’জনকে রাখছি। গোতি আর শিখর। গম্ভীরের ফর্ম ভাল চলছে না। কিন্তু ওকে বেশি দিন আটকে রাখা মুশকিল।
শিখরকে নিয়ে এখনই আলটপকা মন্তব্যে যাব না। শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বোঝা যাবে, ওর ব্যাকফুটটা কী রকম। শর্ট বল কী ভাবে খেলে।

ওয়ান ডাউন
বিরাট ছাড়া আর কাউকে তিনে ভাবা যাচ্ছে না। ভাবা উচিতও নয়। ওকে আরও একটা কথা ভারতীয় বোর্ডের বলে দেওয়া উচিত বিশ্বকাপের পর তুমিই ক্যাপ্টেন হচ্ছ। নিজেকে তৈরি করো। বিরাটের মানসিকতা যে রকম, বাড়তি দায়িত্বে ওর খেলা আরও খুলবে। সামনের দু’বছর ভারতীয় টিমের প্রচুর বিদেশ সফর আছে। ছোটখাটো ম্যাচে বিরাটকে ব্যাটন দিয়ে দেখা যেতে পারে। এতে দু’টো সুবিধা। এক, এমএসের উপর একটানা খেলে যাওয়ার চাপটা কমবে। দুই, ক্যাপ্টেন কোহলি কেমন, দেখে নেওয়া যাবে।

মিডল অর্ডার
তিন-চারটে নাম মাথায় আসছে। উন্মুক্ত চন্দ। যুবরাজ সিংহ। রোহিত শর্মা বা চেতেশ্বর পূজারা। আর মনোজ তিওয়ারি।
উন্মুক্ত এখনও সিনিয়র টিম লিস্টে নাম লেখায়নি। কিন্তু গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ওর কয়েকটা ইনিংস দেখেছি। ভাবতে পারিনি ও রকম ফাস্ট, বাউন্সি ট্র্যাকে ও রকম অবলীলায় কোনও ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে খেলতে দেখব।
যে ছেলে সাউথ আফ্রিকার পিচে সাহস দেখাতে পারে, সে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পিচেও পারবে। উন্মুক্ত বিগ ম্যাচ প্লেয়ার।
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি, এ বার বিজয় হাজারের ফাইনালে সেঞ্চুরি। উন্মুক্তর শো হিট হয় একদম মোক্ষম মুহূর্তে। ছেলেটা সাফল্যের সঙ্গে মানিয়ে চলতে জানে। ভাল পরিবারের শিক্ষিত ছেলে বলেই টাকার মোহ কাটাতে জানে উন্মুক্ত।
আমার মিডল অর্ডারে থাকবে মনোজও। অস্ট্রেলিয়ায় টেকনিক যতটা দরকার, ঠিক ততটা প্রয়োজন বুকের খাঁচার। মনোজের যেটা আছে। ভাল ফর্মেও আছে মনোজ। যদি চোট না পায়, ওর ক্ষমতা আছে বাউন্সি ট্র্যাকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার।
ঠিক তেমনই চাইব, বিশ্বকাপের আগে রোহিত ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠুক। রোহিতের মতো অসামান্য প্রতিভা যেমন খুব কম এসেছে, ওর মতো নিজের হাতে নিজের প্রতিভা নষ্ট করতেও খুব কম দেখেছি। বিশ্বকাপ টিমে যদি ও শেষ পর্যন্ত থাকে, লাভ দেশের হবে। ওর মতো ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার খুব কমই এসেছে।
পূজারাও ঠিক আছে। টিমে দ্রাবিড় ঘরানার ক্রিকেটারও তো দরকার। তবে শিখরের ব্যাপারে আমার যা মতামত, পূজারার ক্ষেত্রেও তাই। বিদেশে যত ক্ষণ না সফল হচ্ছে, বাজি ধরতে পারব না।
পড়ে রইল যুবরাজ। যুবি ওয়ান ডে অভিষেকের দিন যে রকম আগ্রাসী ছিল, আজও তাই। দু’বছর পরেও একই থাকবে। ২০১৫ বিশ্বকাপে টিমে যুবির ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
২০১১ বিশ্বকাপে টিমের হৃদযন্ত্র ছিল এক জনই সচিন তেন্ডুলকর। বাকি টিমটা ওকে ঘিরে চলত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে টিম কোনও নির্দিষ্ট এক জনকে সামনে রেখে এগোবে না। বরং মন বলছে, একটা ‘কোর’ টিম থাকবে। যার সক্রিয় সদস্য অবশ্যই যুবি। বাকিরা? এমএসডি। বিরাট। অশ্বিন।



লোয়ার মিডল অর্ডার
বিদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ যখন, ভাল অলরাউন্ডার লাগবেই। দু’টো বিকল্প আছে। রবীন্দ্র জাডেজা। নইলে ইরফান পাঠান।
জাডেজা দেশের মাটিতে যতটা ভাল, বিদেশেও ততটা হবে কি না সন্দেহ। সে দিক থেকে ইরফান ভাল হবে। ওর বাঁ হাতি সুইং সামলাতে অসুবিধায় পড়তে পারে ব্যাটসম্যানরা। ব্যাটের হাতটাও ভাল।
অলরাউন্ডার স্লটটা বাদ দিলে যে দু’টো নাম পড়ে থাকে, তারা অটোমেটিক চয়েস। ধোনি কী পারে না পারে, আগেই বলেছি। সুরেশ রায়নাকেও রেখে দিতে হবে ও শর্ট বলে দুর্বল জেনেও। ওয়ান ডে-তে ও ভাল ফিনিশার। অফস্পিনটাও করে দেবে। পারফেক্ট প্যাকেজ।

স্পিনার
আইপিএল ফাইভের রেভ পার্টি মনে পড়ে যাচ্ছে? মাদক নিয়ে যেখান থেকে ধরা পড়ল রাহুল?
কিন্তু আমি ওকে খুব কাছ থেকে দেখেছি পুণে ওয়ারিয়র্সে। কোনও দিন নেশা করতে দেখিনি। বরং বিশ্বাস করি, চূড়ান্ত ভুলবোঝাবুঝি থেকে ব্যাপারটা ঘটেছিল। মিটেও যাবে। দেশে ভাল লেগস্পিনার বিশেষ নেই। রাহুল পিচ থেকে বাউন্স তুলতে জানে।
মনে হচ্ছে, হরভজন বিশ্বকাপটা খেলবে না। কারণ আগামী দু’বছর নিজেকে নাগাড়ে টপ ফর্মে রেখে যেতে হলে যে রগড়ানি দরকার, সেটা ভাজ্জি আর পারবে না।
স্পিনারদের টিম-লিডার অবশ্যই অশ্বিন। ও বলের সঙ্গে এখন বুদ্ধি মেশায়। অশ্বিন এখন শুধু এগোতেই পারে।

পেস-অ্যাটাক
উমেশ যাদব। সামি আহমেদ। অশোক দিন্দা। ভুবনেশ্বর কুমার। এবং একটা নতুন মুখ।
মন বলছে বিশ্বকাপে ভারতীয় পেসারদের টিমে নতুন মুখ দেখব। তিনটে নাম আমার পছন্দের। মধ্যপ্রদেশের ঈশ্বর পাণ্ডে। কেরলের ওয়ারিয়র। দিল্লির পরবিন্দর আওয়ানা।
তবে পেসারদের টিমে আমার এক্স ফ্যাক্টর সামি আহমেদ। ওর রান আপ, অ্যাকশন দেখে বোঝার উপায় নেই কতটা জোরে বল করতে পারে। আউটসুইংটাও আছে। দিন্দা, উমেশএরা বল উইকেটে ‘হিট’ করতে ভালবাসে। সামি আলাদা ধাঁচের।
ভুবির গতি নিয়ে যাঁরা খুঁতখুঁত করেন, তাঁদের বলি অস্ট্রেলিয়ার পিচে পেসারদের গতি এমনিই কিছুটা বেড়ে যায়। মোটামুটি একটা গতির সঙ্গে ওর দুর্দান্ত সুইংব্যাটসম্যান ঝামেলায় না পড়লেই অবাক হব। তবে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংটা নিয়েও ওর একটু খাটাখাটনি করা উচিত।
মোটামুটি এটাই আমার ২০১৫ বিশ্বকাপ টিম। সব হয়তো মিলবে না, কিন্তু ‘শেপ’-টা মনে হচ্ছে এ রকমই থাকবে। আর হ্যাঁ, ডানকান ফ্লেচারের মেয়াদ যখন এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ওকে বিশ্বকাপ পর্যন্তও রেখে দেওয়া হোক। বিশ্বকাপের ছ’মাস আগে যদি কোচ পাল্টানো হয়, তা হলে ক্ষতিই হবে।
তবে জো ডসকে বোলিং কোচ রেখে দেওয়ার কোনও মানে নেই। কী করেছে ও ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য?
ডসের বদলে আসুক জাহির খান। বোলিং কোচ না হোক, বোলিং মেন্টর হিসেবে। নিজের চোখে দেখেছি, অন্যান্য পেসাররা মুশকিলে পড়লেই জাহিরের কাছে ছোটে। সত্যি বলতে, ক্রিকেটটা জাহিরের মতো খুব কম লোকই বোঝে। কোনও দিন কাউকে ফেরাতে দেখিনি।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ খেলতে পারবে না জাহির। কিন্তু একেবারে নতুন ভূমিকায়, নতুন আঙ্গিকে পেশ করে জাককে যদি অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইটে তোলা যায়, মন্দ কী?

সচিন-বংশ
অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
ওপেনিং অজিঙ্ক রাহানে + গৌতম গম্ভীর/ শিখর ধবন
তিন নম্বর বিরাট কোহলি
মিডল অর্ডার উন্মুক্ত চন্দ, যুবরাজ সিংহ, সুরেশ রায়না, মনোজ তিওয়ারি, রোহিত শর্মা/ চেতেশ্বর পূজারা
অলরাউন্ডার ইরফান পাঠান
স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রাহুল শর্মা
পেস অ্যাটাক উমেশ যাদব, সামি আহমেদ, অশোক দিন্দা, ভুবনেশ্বর কুমার, ঈশ্বর পাণ্ডে/ ওয়ারিয়র/ পরবিন্দর আওয়ানা
কোচ ডানকান ফ্লেচার
বোলিং কোচ/ মেন্টর জাহির খান


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.