কলকাতা বইমেলা তো কবেই শেষ।
কিন্তু এ বইমেলা খোলা সারা বছর, চব্বিশ ঘণ্টা।
এ হল ই-বইমেলা।
কী, অবাক হলেন? জেন ওয়াই কিন্তু চুটিয়ে বই কিনছে এখানে। শুনুন বছর পঁচিশের শৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা, “আমার তো ই-বুক ফরম্যাটটাই বেশি পছন্দের। আসলে কম্পিউটারে বই পড়াটা আমাদের জেনারেশনের সহজাত অভ্যাস। কলেজে পড়ার সময়ই তো স্ক্যানড্ করা বই পিডিএফ-এ পড়তাম। তবে ই-বুক অনেক ভাল।”
ই-বুক। কম্পিউটারে পড়ার জন্য তৈরি বই। ই-বুকই যে এই সময়ের ট্রেন্ড, সে কথা মেনে নিচ্ছেন জেফ বেজো-ও। তিনিই ‘সব পেয়েছি’ সাইট অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর কথায়, “আমরা বইয়ের জগতে যে ট্র্যানজিশনটা আশা করছিলাম, সেটাই হয়েছে।” তাদের হিসাবে গত বছরের থেকে এ বছর ৭০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে ই-বুকের। |
কাগজ-কালির দাম্পত্যের নস্ট্যালজিয়া নেই। আছে সহজে যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়ার স্বাচ্ছন্দ্য।
নেই হলদে হয়ে যাওয়া পুরোনো বইয়ের রোম্যান্টিকতা। আছে সারাজীবন একই রকম থাকার গ্যারান্টি।
ফরম্যাটের দিক থেকে ই-বুক হতে পারে নিত্য ব্যবহারের পিডিএফ ফাইল বা বিশেষ ভাবে তৈরি ই-পাব ফাইল। বইকে ফ্লপি ডিস্কে করে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তোড়জোড়ের শুরু সেই সত্তরের দশকে।
সব থেকে পুরোনো ই-বুক পাবলিশার হল ‘প্রজেক্ট গুটেনবার্গ’। তার প্রতিষ্ঠাতা মিশেল হার্ট ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন সময়ের ‘পালস’। প্রথম ই-বুক প্রকাশিত হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ‘রাইডিং দ্য বুলেট’য়ের চার লক্ষ কপি ডাউনলোড হয়। যদিও সেটা ছিল ২০০০ সাল।
সমাজতত্ত্বে বলা হয়, ‘জেন ওয়াই হল ট্যাবলেট কম্পিউটারে বড় হয়ে ওঠা প্রজন্ম’। তাই সেই প্রজন্মের কাছে ই-বুকের জনপ্রিয়তা যে আকাশছোঁয়া হবে তা তো বলাই বাহুল্য।
ছাপা বইয়ের নস্ট্যালজিয়াকে বাদ দিলে ই-বুকের ফ্যান না হওয়াটাই কঠিন। ১৬ জিবির একটা ই-বুক রিডার মানে প্রায় হাজার বইয়ের ‘চলমান লাইব্রেরি’। বিনা পয়সায় পুরোনো বইয়ের সংগ্রহ ‘প্রজেক্ট গুটেনবার্গ’য়ের কথা বাদ দিলেও মনে রাখবেন ই-বই কিন্তু ছাপা বইয়ের থেকে সস্তা। পরিবেশবান্ধব তো বটেই।
|
শুধুই বিদেশি লেখক নয়, অ্যামাজনের বেস্ট সেলার তালিকায় ঢুকে গিয়েছে ভারতীয় লেখকদের বইও। তার হিসেবটা কিন্তু চোখে পড়ার মতো। “আমাদের সাইট থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ হাজার ই-বুক ডাউনলোড হয়েছে।’’ জানালেন ফ্লিপকার্টের (অন লাইন শপিং ওয়েবসাইট) কর্পোরেট কমিউনিকেশনের প্রধান পায়েল বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বোঝাই যাচ্ছে ভারতীয় বাজারে ই-বুকের চাহিদা কতটা।
কিন্তু বাংলা ই-বুক? ছাপানো বই স্ক্যান করে পিডিএফ বছর পাঁচ হল চালু হয়েছে। অবশ্যই সেটাকে ই-বুক বলা যাবে না। কিন্তু অনেকেই দিব্যি পড়ছিলেন ওগুলোই।
বাংলা বইয়ের ইলেকট্রনিক ভার্সান নিয়ে উৎসাহ কতটা, সেটা সহজেই ধরা পড়বে এই ধরনের কোনও ব্লগে ঢুঁ মারলে। এ রকম এক একটা ব্লগের মেম্বার প্রায় ৫০-৬০ হাজার। এঁরা প্রত্যেকেই নিজেদের ভিতর বাংলা বইয়ের স্ক্যানড কপি আদানপ্রদান করেন।
প্রথম বাংলা ই-বুক ‘জয় হে’। “অসম্ভব সাড়া পেয়েছি বইটা পাবলিশড্ হওয়ার পর। স্ক্যানড্ কপির বই পাওয়া গেলেও, সঠিক অর্থে ই-বুক তো ছিল না। আমরা বাংলা ব্লগগুলো থেকে জানতাম চাহিদা আছে বাংলা ই-বুকের। তাই কিন্ডেল আর আই প্যাড ফরম্যাটে রিলিজ করা ‘জয় হে’। এখন তো আমরা প্রতিদিন ফোন পাই বাংলা ই-বুক পাবলিশ করা নিয়ে,” বলছিলেন ডেটাবাজার-এর টেকনিকাল হেড মৌটুসি মিত্র।
পাঠকদের উৎসাহ কতটা তার প্রমাণ সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো। অ্যামাজনের সাইটে ‘জয় হে’কে রাখা হয়েছিল হিন্দি ভাষার বইয়ের মধ্যে। তাতে ফেসবুক টুইটারে কম কথা শুনতে হয়নি অ্যামাজনকে।
আর কিছু না হোক, ঘটনাটা একটা ব্যাপার প্রমাণ করেই ছাড়ল। কাগজ-কালির সেই মাতাল-করা গন্ধটা না থাক, ই-বুক কিন্তু রীতিমতো প্রেম বিলোতে শুরু করেছে। তাতেই বা মাদকতা কম কী!
|
পড়ব কী ভাবে |
|
• প্রথমেই দরকার কোনও ই-বুক রিডার অ্যামাজন কিন্ডল, সোনি রিডার বা নুক রিডার। টাচ বেসড্ এই ট্যাবলেটগুলোর দাম পড়বে সাত হাজারের কাছাকাছি।
• ই-বুক রিডার না কিনতে চাইলে আই প্যাড বা অন্য কোনও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসও কিনতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দাম একটু বেশি পড়বে। তবে এগুলো আরও অনেক কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
• ই-বুক রিডার না হলে ইন্সটল করে নিতে হবে ক্যালিব্রি, ই-পাব রিডার বা ওয়াই বুকের মতো কোনও সফ্টওয়্যার। বিনা পয়সাতেই পাবেন এগুলো।
• যন্ত্রটার পরে দরকার কোনও অনলাইন ই-বুক সাইটে রেজিস্টার করা। অ্যামাজন বা কোবো-র মতো সাইটে ছাপানো বইয়ের থেকে অনেক কম দামে পাবেন ই-বুক।
• তবে বেশ কিছু ওয়েবসাইট (www.gutenberg.org বা www.bookyards.com)-এ বিনা পয়সাতেই পেয়ে যাবেন ই-বুক। চিন্তার কিছু নেই। ওগুলো কপিরাইট পার হয়ে যাওয়া। |
|