রফা সূত্রের খোঁজ জোরকদমে চললেও শিলিগুড়ি পুরবোর্ড নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূল উভয় পক্ষই পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখে চলতে চাইছে। অন্তত, বাজেট পেশ নিয়ে দুই তরফের অবস্থান থেকে সে কথাই স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আজ, শনিবার পুরসভায় আগামী আর্থিক বছরের বাজেট পেশ হবে। ‘বিতর্কিত’ চেয়ারম্যান নান্টু পালের উপস্থিতিতেই ওই বাজেট পেশ করবেন পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত। ঘটনাচক্রে, মেয়র সহ কংগ্রেসের অন্যান্য কাউন্সিলররা মিলে নান্টুবাবুর চেয়ারম্যান পদে বসার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে উচ্চ আদালতের মামলা করেছেন। কিন্তু, মেয়র জানিয়েছেন, ‘জনস্বার্থে’র কথা মাথায় রেখে নান্টুবাবুকে আপাতত চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে ওই বাজেট পেশ করা হবে। তাই পুরসভার অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, যাঁর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করা হয়েছে, তাঁকে মেনে নিয়ে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নানা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ থাকবে। কংগ্রেস-তৃণমূলের জেলা স্তরের অনেক নেতা জানান, বাইরে চাপ বজায় রাখা হলেও দু-দলের অনেকেই রফা সূত্রের যে খোঁজ করছেন তা বাজেট পেশের সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “আমাদের কাউন্সিলররা বাজেটের সময়ে উপস্থিত থাকবেন। জনবিরোধী কিছু হলে আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করব।’’ পক্ষান্তরে, কংগ্রেসের তরফে পাল্টা চাপ বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকর। তিনি বলেন, “আমরা ২৫ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার মধ্যে নান্টুবাবুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে অন্য কাউকে বসানোর প্রক্রিয়া তৃণমূলকে শুরু করতে হবে। না হলে ২৬ মার্চ আমরা ডেপুটি মেয়র সহ সব মেয়র পারিষদ পদের দায়িত্ব আমাদের কাউন্সিলরদের দেওয়া হবে। একক ভাবে বোর্ড চালাব।” ৪৭ আসন বিশিষ্ট পুরবোর্ডে কংগ্রেস কাউন্সিলর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বোর্ড চালানো সম্ভব হবে না বুঝে কংগ্রেসের একাংশ বোর্ড ভেঙে পুর নির্বাচনের জন্য দাবি জানানোর কথাও ভাবছে।
তবে নিজেদের অবস্থানে অনড় তৃণমূল। তাঁদের ডেপুটি মেয়র ও মেয়র পারিষদ পদে বহাল না করা হলে কোনরকম আলোচনায় যেতে রাজি নন তাঁরা। দার্জিলিং জেলার তৃণমূলের মহাসচিব কৃষ্ণ পাল বলেন, “কংগ্রেসের তরফে নতুন করে ভোট গ্রহণের আবেদন করা হয়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।” আজকের বাজেট সভায় বামেদের অবস্থান কি হবে তা নিয়ে সকালেই সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান পুরসভার বিরোধী দলনেতা মুন্সি নুরুল ইসলাম। তবে বাজেট সভায় যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে বামেদের তরফে। কিন্তু চেয়ারম্যানকে তাঁরা মানবেন কি না এ দিনের বোর্ড সভায় তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “২৬ মার্চ নান্টু পালের চেয়ারম্যান পদে বসার বৈধতা বিষয়ক মামলা উচ্চ আদালতে উঠবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বামেরা।” মেয়রের ভূমিকা নিয়ে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী বলেন, “মেয়র যেখানে নিজেই মামলাটি করেছেন, সেখানে কি করে ওই চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করবেন? এ থেকেই অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যায়। কংগ্রেস-তৃণমূলের বোর্ডের পরিষেবা তলানিতে ঠেকায় মানুষ ফুঁসছেন।” |