বামপন্থী রাজনীতির প্রভাবেই এ রাজ্যে ঘটেছে ভূমি সংস্কার। প্রচুর ভূমিহীন মানুষ জমি পেয়েছেন। কিন্তু বামপন্থীরা যা নজরে রাখেননি তা হল, বহু চাষি পরিবারের ভিতরে রয়ে গিয়েছেন ভূমিহীন মানুষ। তাঁরা মহিলা। সম্প্রতি ‘সমর সেন স্মারক বক্তৃতা’ দিতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ প্রণব বর্ধন বলেন, এ দেশে আজও মেয়েরা উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পায় না বলে অধিকাংশ জমির মালিকানা রয়ে গিয়েছে পুরুষদের হাতেই।
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে কত মেয়ের হাতে জমির মালিকানা রয়েছে, সে সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই, বলেন প্রণববাবু। তবে কর্ণাটকে প্রাপ্ত একটি পরিসংখ্যান বলে, সে রাজ্যে ৭১ শতাংশ জমির মালিকানা কেবল পুরুষদের, ১৪ শতাংশ খাতা-কলমে যৌথ মালিকানায়। কেবল ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের মালিকানা রয়েছে। “এই চিত্র দেশের অন্যত্র খুব আলাদা হবে বলে মনে হয় না,” বলেন প্রণববাবু।
মেয়েদের মালিকানার বিষয়টি কেবল মেয়েদের প্রতি ন্যায়ের জন্যই জরুরি, তা নয়। প্রণববাবু বলেন, এখন বহু পুরুষ চাষ থেকে সরে আসছেন, অনেকে বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছেন। তাই মেয়েরাই কৃষি, গরু-ছাগল পালনের মতো কাজে রয়ে যাচ্ছেন। আফ্রিকার দেশগুলিতে প্রধানত মেয়েরাই চাষি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে থাকে বহু দিন ধরেই। এ দেশে এখনও মেয়েরা ‘কৃষক’ বলে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন (২০০৫) যদিও মেয়েদের জমির মালিকানার অধিকার দিয়েছে, তবু বাস্তব দেখিয়ে দিয়েছে যে কেবল আইন দিয়ে পরিস্থিতি বদলাবে না, বলেন প্রণববাবু। “পঞ্চায়েতে এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করা যায়। পঞ্চায়েত যদি অনুষ্ঠান করে জমির নথিপত্র তুলে দেয় মেয়েদের হাতে, টিভিতে যদি তেমন অনুষ্ঠান দেখানো হয়, তা হলে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়বে,” বলেন তিনি।
বক্তৃতার পরে প্রণব বর্ধনের সঙ্গে তাঁর বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করেন নৃতত্ত্ববিদ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি প্রশ্ন করেন, সন্তানদের মধ্যে জমি ভাগ হওয়ার পরে জমি ক্রমশ এত ছোট হয়ে যাচ্ছে যে তা আর চাষির জন্য লাভজনক থাকছে না। মেয়েদের মালিকানা দিলে জমি আরও ছোট হয়ে যাবে না কি? এই সমস্যা স্বীকার করে প্রণববাবু বলেন, ভাগ হওয়ার কারণে জমি ছোট হতে হতে যখন অর্ধেক একর হয়, তখন জমি চাষ করে আর জীবিকা নির্বাহ করা যায় না। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যৌথ চাষের প্রস্তাবও চলে না, কারণ এখানে জমি ছোট এবং ছড়ানো। তাই সমবায় পদ্ধতিতে উৎপাদন ও বিপণনই কৃষিকে লাভজনক করে তোলার একমাত্র উপায়। তিনি জানান, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে সমবায় প্রথায় উৎপাদন ও বিপণনের নানা কাজ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারাও কৃষি সমবায়ে অংশ নিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাঙ্কের একটি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বর্গাদারদের পুরো মালিকানা দিলে এবং বর্গার ভিত্তিতে কৃষিঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করা গেলে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে, কৃষি আরও লাভজনক হবে। |