টুকতে বাধা
রাজ্য জুড়েই স্কুলে স্কুলে তাণ্ডব, ভাঙচুর, আগুন, প্রহার শিক্ষককে
টোকাটুকি করতে বাধা দেওয়ায় শুক্রবার সারা রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন স্কুলে তাণ্ডব চালাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। মালদহের চাঁচলের শীতলপুর হাইস্কুলে তিন শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। ডুয়ার্সের ফালাকাটার ডালিমপুরের ক্ষীরেরকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের শৌচাগারে পড়ে থাকা ভাঙা আসবাব, বাজে কাগজ জড়ো করে আগুনও লাগিয়ে দেয় তারা।
উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার সোনাপুকুর বিদ্যাপীঠে চোখের সামনে শ্রেণিকক্ষের আসবাব ভাঙচুর হচ্ছে দেখে রুখে দাঁড়ায় ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির কয়েকজন ছাত্র। শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি। তাতে ওই স্কুলের পাঁচ ছাত্র সহ ছ’জন ছুরি-অ্যাসিডে আহত হয়েছে। স্কুল চত্বরে বোমাও পড়েছে। হাসনাবাদের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাইস্কুলেও পরীক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে ভাঙচুর করছে দেখে বাধা দেয় একাদশ শ্রেণির ছাত্রেরা। নদিয়ার বেথুয়াডহরিতে পরীক্ষার্থীদের ছোড়া ইটে আহত হয়েছে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। সব ক’টি স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরাই দাবি করেছেন, টোকাটুকিতে বাধা দেওয়াতেই গণ্ডগোল করেছে কিছু পরীক্ষার্থী।
এই দিন ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস, রসায়ন এবং হিসাবশাস্ত্রের পরীক্ষা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “যে পরীক্ষার্থীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কোনও ভাবেই পার পাবে না। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকে বলেছি তদন্ত করে বিশদ রিপোর্ট দিতে। যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট স্কুল কর্তৃপক্ষ দায়ী, তা হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি দেখা যায়, অন্য কোনও প্রশাসনিক কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, তা হলে সেক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
চাঁচলের শীতলপুর হাইস্কুলে গোলমাল। ছবি: বাপি মজুমদার
ফালাকাটার ক্ষীরেরকোট উচ্চ বিদ্যালয় ও চাঁচলের শীতলপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কাছে অবশ্য কোনও অভিযোগ করেনি। পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর শীতলপুরের স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল ও থাহাঘাটি স্কুলের ৪২০ জন পরীক্ষার্থী। স্কুল সূত্রের খবর, এই দিন পরীক্ষা শেষ হতেই কয়েকজন পরীক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে ভাঙচুর চালায়। তখন বাধা দিতে গিয়ে প্রহৃত হন ওই তিন শিক্ষক আবদুল্লা, প্রণব চক্রবর্তী এবং ইদ্রিস আলি। প্রণববাবু বলেন, “ওই পরীক্ষার্থীরা চেয়ার টেবিল ভাঙছিল। বাধা দেওয়ায় এক সঙ্গে বেশ কয়েকজন আমার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল চড় মারতে থাকে।”
কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর আগেই পরীক্ষার্থীরা গা ঢাকা দেয়। ঘটনার প্রতিবাদে পরীক্ষার খাতা প্যাকেট না করে ফেলে রাখেন শিক্ষকেরা। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আগামী দু’দিন আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেন শিক্ষকেরা। চাঁচলের সেন্টার ইনচার্জ, সেন্টার সম্পাদক-সহ কাউন্সিলের পরিদর্শক গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত আলোচনার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে কেন পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানানো হল না, সে প্রশ্ন উঠছে। এক পরীক্ষার্থীকে ভাঙচুরের সময় হাতে নাতে ধরে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ না হওয়ায় তাকেও ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, “হামলাকারীদের কাউকেই চিনতে পারিনি। তাই কার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাব?”
ফালাকাটার ক্ষীরেরকোট উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীদের হামলায় বেঁকে গিয়েছে পাখা। ছবি: রাজকুমার মোদক
একই কথা বলেছেন ফালাকাটায় ওই ক্ষীরেরকোট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব করও। ওই স্কুলে আসন পড়েছিল জটেশ্বর হাই স্কুলের ৩৬৮ জন পরীক্ষার্থীর। পরীক্ষার্থীদের কয়েক জন প্রথম দিন থেকে টোকাটুকির চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গালিগালাজ করা হয়। শৌচাগার ফেলে রাখা ভাঙা আসবাব ও কাগজে আগুন ধরিয়ে দেয় কয়েক জন। পরীক্ষা শেষ হবার পর এক ছাত্র উত্তরপত্র জমা না দিয়ে পালিয়ে গেলে পরে তার খাতা উদ্ধার হয়।
নাকাশিপাড়ার জেসিএম স্কুল কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্কুলে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে থানায় লিখিত নালিশ করেছেন। সুধাকরপুর, তেঁতুলবেড়িয়া ও পাটপুকুর হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল জেসিএম স্কুল। সুধাকর হাইস্কুলের ছাত্র সুজয় ঘোষ ইতিহাস পরীক্ষায় টুকতে না পেরে গণ্ডগোল শুরু করে দেয় বলে অভিযোগ।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষে স্কুলের পড়ুয়াদের একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ছিল। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ছোড়া ইটে জখম হয় মহেশ্বর ঘোষ নামে ওই স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র। মাথায় চোট পেয়েছে সে। মাথায় ৩টি সেলাই নিয়ে পরীক্ষায় বসে সে।
বনগাঁ হাইস্কুলের ছাত্রদের আসন পড়েছিল কেশবলাল বিদ্যাপীঠে। পরীক্ষার পরে কেশবলাল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কয়েক জন বহিরাগত মিলে তাদের মারধর করেছে অভিযোগে বনগাঁ হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীরা যশোর রোড অবরোধ করে। তবে কেশবলাল স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, টোকাটুকি করতে না দেওয়ায় বনগাঁ স্কুলের পরীক্ষার্থীরাই ভাঙচুর শুরু করায় তার প্রতিবাদ করা হয়েছে।

উত্তরপত্র নিয়ে উধাও, ছিনতাইয়ের চেষ্টাও
উচ্চ মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার খাতা নিয়ে পালাল কাটোয়ার এক ছাত্র। আবার শিক্ষকদের তাড়া করে খাতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর স্টেশনে। দু’টি ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানায়। কাটোয়ার ভারতীভবন স্কুলে আসন পড়েছিল আজিবুদ্দিন শেখ নামে এক পরীক্ষার্থীর। শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে ইতিহাসের খাতা নিয়ে পালায় সে। কাটোয়ার সহকারী স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গোলাম মর্তুজা বলেন, “থানায় জানানো হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদকেও জানানো হবে।’’ শুক্রবার রাত পর্যন্ত আজিবুদ্দিনের খোঁজ মেলেনি। অন্য দিকে, মথুরাপুর আর্য বিদ্যাপীঠ স্কুলের ছাত্রদের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছিল মথুরাপুর হাইস্কুলে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবনী পাত্র ও পার্থপ্রতিম বৈদ্য নামে এক সহ শিক্ষক তিন বান্ডিল উত্তরপত্র নিয়ে অটোয় ফিরছিলেন। রাস্তায় সেই অটো থামিয়ে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। অটোচালক দ্রুত মথুরাপুর স্টেশনে পৌঁছে দেন ওই দুই শিক্ষককে। সেখানেও খাতা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। পার্থবাবু বলেন, “পরীক্ষার সময়ে অসৎ উপায়ে অবলম্বন করতে দিইনি। এতেই খেপে গিয়ে মারধর করে উত্তরপত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল কয়েক জন পরীক্ষার্থী। তা আটকে উত্তরপত্র স্টেশনের পার্সেলে ঢোকাতে পেরেছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.