মমতাকে ফোন জমি বিল নিয়ে
তৃণমূল প্রতিপক্ষই, দীপাদের গোঁসায় ঘোষণা জয়রামের
রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষণা করে দেওয়ার মাত্র দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। এবং সেই ক্ষোভ প্রশমণে এ দিন রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হল তাঁকে। এমনকী প্রকাশ্যেও জয়রাম এ দিন ঘোষণা করেছেন, “তৃণমূল এখনও কংগ্রেসের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস সর্বশক্তি দিয়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।”
মমতাকে ফোন করা নিয়ে জয়রাম সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও, সূত্রের খবর কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছেও সেই ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন দীপা দাশমুন্সি, অধীর চৌধুরীরা। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে রাজ্য স্তরে যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে কংগ্রেস, তখন মমতাকে জয়রামের ফোন করার ঘটনা বিভ্রান্তি তৈরি করছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে শেষ পর্যন্ত দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ এই নেতা রাজ্য নেতৃত্বকে বোঝান যে, কেন্দ্রের মন্ত্রী হিসেবেও তাঁকে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে তিনি সব রাজ্যের সঙ্গেই কথা বলছেন। এবং সেই অনুযায়ীই তিনি তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকের জন্য সময় চেয়েছেন।
জয়রাম পরে সাংবাদিকদেরও বলেন, “রাজনৈতিক ভাবে দু’টি দল লড়াই করতে পারে। কিন্তু দু’টি সরকারকে একসঙ্গে কাজও করতে হবে। জমি বিল পাশের জন্য গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসাবে আমি তৃণমূলের সমর্থন চাইছি। আবার রাজ্যে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের জন্য কেন্দ্রের সাহায্য চাইছে রাজ্য। আগামী ৪ এপ্রিল গ্রামীণ সড়ক সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করতে আসবেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। এর সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলাটা ভুল।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ফোন করে জয়রাম কলকাতায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এ থেকেই অদূর ভবিষ্যতে ফের কংগ্রেস-তৃণমূল জোট-সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে। রায়গঞ্জের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপার অবশ্য বক্তব্য, “এই মুহূর্তে এই সব সাত-পাঁচ নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস যাতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে সেটাই এখন মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।” সূত্রের খবর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য-সহ রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা দলের হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেসের কোনও লাভ নেই। কারণ, জোট করলেও কংগ্রেস যা আসন পাবে, জোট না করলেও সেই সংখ্যক আসন পাবে। বরং জোট হলে তৃণমূল বাড়তি সুবিধা পেয়ে তাদের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে নেবে। কিন্তু লোকসভা ভোটের পর শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কার সঙ্গে যাবে তা স্পষ্ট নয়। বরং কেন্দ্রে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে বামেরাই কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াতে পারে। তাই কংগ্রেসের উচিত হবে রাজ্যের একার ক্ষমতায় লড়া ও নিজেদের সংগঠন বাড়াতে আরও জোর দেওয়া।
রাজনীতির কারবারিরা অবশ্য মনে করছেন, রাজ্য কংগ্রেস যেমন নিজেদের স্বার্থ দেখছে, তেমনই মমতাকে জয়রামের ফোন করার নেপথ্য কারণও রয়েছে। জয়রাম দশ জনপথ ও রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ নেতা। জাতীয় রাজনীতির কথা মাথায় রেখে জয়রামরাও ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প পথ খুলে রাখতে তৎপর রয়েছেন। জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো থেকে শুরু করে পাহাড় সমস্যা সমাধান নিয়ে এক সময় মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জয়রাম। পরে মমতা ইউপিএ ছাড়ার পর সেই তৃণমূল নেত্রীকেই কটাক্ষ করতে ছাড়েনি কেন্দ্রের এই কংগ্রেস নেতা ও মন্ত্রী। এখন আবার মমতার সঙ্গে সম্পর্ক শোধরানোর চেষ্টা শুরু করেছেন তিনি। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, আসলে সবাই নিজের-নিজের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে পা ফেলছেন। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে তৃণমূলের পক্ষে ভাল কি না সেটা মমতা তাঁর মতো করে বুঝছেন। তেমনই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডকেও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পুরনো বন্ধুদের জোটে ফেরানোর পথ খোলা রাখতে হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.