‘জনসংখ্যাও বাড়ছে’
সচেতন হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণের নালিশ: মুখ্যমন্ত্রী
তাঁর রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে বলে হইচই করার কিছু নেই। মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে বলেই তাঁরা এখন লজ্জা ভেঙে বেরিয়ে এসে অভিযোগ দায়ের করতে থানায় যাচ্ছেন। ফলে, বেশি বেশি করে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। রাজ্যে ধর্ষণের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমন ব্যাখ্যাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাইয়ের পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অন্যান্য শহরের তুলনায় এ রাজ্যে নারী নিগ্রহের ঘটনা অনেক কম।
পরিবর্তনের জমানায় রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করতে গিয়ে বিরোধীরা প্রত্যাশিত ভাবেই একের পর ধর্ষণের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে শুক্রবারই বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র পার্ক স্ট্রিট এবং কাটোয়া-কাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। জবাবি বক্তৃতায় তাঁর প্রশাসনের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এমন কিছু কথা বলেছেন, যাতে বিতর্কের ইন্ধন পেয়েছেন অনেকেই।
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আপনারা আপনাদের ভাষায় বলেছেন, আমি আমার ভাষায় বলব। ধর্ষণ বাড়ছে বলছেন। জনসংখ্যাও তো বাড়ছে। বিধান রায়ের আমলে যা লোক ছিল, এখনও কি তা-ই আছে? উদ্বাস্তু সমস্যা ছিল ওঁর সময়ে। যা করতে চেয়েছিলেন, বিরোধীরা বাধা দেয়নি। কেউ বিরোধিতা করেনি। এখন লোক বাড়ছে, গাড়ি বাড়ছে, শপিং মল বাড়ছে। নতুন প্রজন্ম আধুনিক হচ্ছে। আধুনিকতাকে তো স্বাগত জানাতে হবে! কিছু কিছু কাগজ ইচ্ছাকৃত ভাবে কী লিখছে, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই!”
মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর বক্তব্যের এই অংশটির দু’রকম অর্থ বার করা হয়েছে কোনও কোনও মহল থেকে। জনসংখ্যা বাড়ছে বলেই ধর্ষণ বাড়ছে, মুখ্যমন্ত্রী এই রকম সরলীকৃত ব্যাখ্যা দিয়েছেন ধরে নিয়ে তাঁর সমালোচনা করেছেন বিদ্বজ্জনেদের একাংশ। আবার আধুনিকতারই একটা উপজাত ফসল হল ধর্ষণ, এই রকম কিছু মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা খণ্ডন করতে গিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, “যা বলা হচ্ছে, ওই রকম কিছু মুখ্যমন্ত্রী বলেননি। যুবদের মধ্যে আধুনিকতার ছাপ পড়ছে, বোঝাতে চেয়েছেন। আর বলেছেন, বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে জনসংখ্যা সামলে নেওয়ার মতো (ম্যানেজেবল) ছিল। এখন জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি।”
বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের বাকি অংশকে এক সঙ্গে বিবেচনা করলে ধর্ষণের ঘটনায় রাজ্য সরকারের ধারাবাহিক অবস্থানের সঙ্গে তা মিলে যায়। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আগে অভিযোগ নথিভুক্ত হত না। মেয়েরাও লজ্জা পেত। এখন তারা বেরিয়ে এসে অভিযোগ নথিভুক্ত করছে। এটা ভাল লক্ষণ। সচেতনতা বাড়ছে। এখন থানায় যাচ্ছে।” তুলনামূলক পরিসংখ্যান দিয়ে মমতার আরও বক্তব্য, “দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ে ধর্ষণ অনেক বেশি। তবে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। আমরা চাই একটাও (ধর্ষণের ঘটনা) হবে না।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই ব্যাখ্যার সঙ্গে সহমত না-হলেও খুব কড়া আক্রমণে যায়নি বিরোধীরা। বামেদের তরফে বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবুর কটাক্ষ, “ধর্ষণ নিয়ে উনি কেতাবি তত্ত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতাদর্শগত অবস্থান এটা হতে পারে, এর সঙ্গে আমাদের মতের কোনও সম্পর্কই নেই। উনি বিধানসভায় এসে এ সব বললে আমরা একটু আলোকিত হই!” কংগ্রেসের বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার মতে, “আমরা এর সঙ্গে একমত নই। জনসংখ্যা বাড়তে পারে। তার সঙ্গে ধর্ষণের কোনও সম্পর্ক নেই। বাম আমলে এই সব ঘটনায় আমাদের রাজ্য দু’নম্বরে ছিল। এখন এক নম্বরে এসেছে!” মানসবাবুর বক্তব্য, অন্যান্য অপরাধও বেড়েছে। বিচ্ছিন্ন ভাবে কোনও অভিযোগ তোলা হচ্ছে না।
রাজ্যপালের ভাষণের উপরে জবাবি বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তথ্য দিয়েছেন, ২০০৭ থেকে ২০১২ এই ছ’বছরে কলকাতায় ধর্ষণের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪, ৩৫, ৪২, ৩২, ৩৮ ও ৪৫। এর মধ্যে ২০১১ সালে দিল্লিতে ৪৫৩, মুম্বইয়ে ২২১, বেঙ্গালুরুতে ৯৭ এবং চেন্নাইয়ে ৭৬টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যের নিরিখে ২০০৫ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ধর্ষণের সংখ্যা যথাক্রমে ১৬৭৩, ১৬৯৩, ২০৬২, ২২২৮, ২২৯৩, ২২৭৯ ও ১৬৫০। আর ২০১২-র নভেম্বর পর্যন্ত ওই সংখ্যাটি ১৮৩৬। পরে বিধানসভার লবিতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যুর সংখ্যা গত দু’বছর ধরে কমছে। জঙ্গলমহলে ২০১২ সালে কোনও মৃত্যুরই খবর নেই।
মুখ্যমন্ত্রীর জবাবের আগে এ দিনের বিতর্কে কংগ্রেসের রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বামেদের তরফে সূর্যবাবু অবশ্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আক্রমণাত্মক ছিলেন। সূর্যবাবুর বক্তব্য ছিল, “মুখ্যমন্ত্রী যখন বলেন, কিছুই হয়নি, তখন বুঝতে হবে কিছু হয়েছে! পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়ায় যেমন হয়েছে। যদি বলেন হয়েছে, তা হলে বুঝতে হবে হয়নি! ধাপায় অমুককে গ্রেফতার করতে হবে বললে তিনি পালিয়ে যাবেন! গ্রেফতার হবেন না!” ধাপায় তৃণমূল কাউন্সিলর এখনও গ্রেফতার না-হওয়া ছাড়াও ত্রিফলা-দুর্নীতি, পশ্চিমবঙ্গ শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের টাকা নয়ছয়ের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন সূযর্বাবু। তাঁর মন্তব্য ছিল, “এই সরকারের সব চেয়ে বড় কৃতিত্ব যা অসম্ভব, তা সম্ভব করার চেষ্টা! আর যা সম্ভব, তা অসম্ভব করে তোলা!” এর জবাব অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী দেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.