ছেলেধরা সন্দেহে গুজবের জেরে গণপিটুনিতে প্রাণ গেল দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে হাসনাবাদের পশ্চিম বীজপুর গ্রামে। ওই দু’জনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ছেলেধরা সন্দেহে প্রহৃত হন দুই পুলিশ কর্মীও। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের চিকিত্সা চলছে টাকি হাসপাতালে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নিহতদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। কেন এমন উত্তেজনা ছড়াল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই টিঙ্কু দাস নামে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাইলানি বাজারের কাছে বাইলানি রাস্তার ধারে মাটির বাড়ি গোপাল সর্দারের। এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বছর খানেকের ছেলে কার্তিককে শাশুড়ির কাছে রেখে শৌচালয়ে গিয়েছিলেন গোপালের স্ত্রী ঝর্না। তিনি জানান, গত রাতে দুই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি বাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে খড়ের উপরে শুয়েছিল। শাশুড়ির অসর্তকতায় তাদেরই এক জন কার্তিককে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। ঝর্নার চিত্কারে লোকজন জড়ো হয়ে যায়। এ দিন ছিল হাট-বার। বাইলানি বাজার এলাকায় সকাল থেকেই বহু লোকের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। জনতা দুই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে বিদ্যুতের খুঁটিতে পিছমোড়া করে বেঁধে পেটাতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দু’তিন ধরে ওই দুই ব্যক্তিকে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছিল। বছর পঁয়তাল্লিশের এক জনের চেহারা ভবঘুরেদের মতো। অন্য জন তুলনায় প্রকৃতস্থ। কিন্তু কাউকেই কোনও সাফাইয়ের সুযোগ দেয়নি জনতা। চলতে থাকে নৃশংস গণপ্রহার। খবর পেয়ে বেলা ৮টা নাগাদ এগারো কিলোমিটার দূরে ভান্ডারখালি ফাঁড়ি থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছন দুই কনস্টেবল সুনীল রায় ও সঞ্জীব বৈদ্য। তাঁরা ছেলেধরাদের সঙ্গী বলে কে বা কারা রটিয়ে দেয়। একই কায়দায় ওই দু’জনকেও ধরে মারধর শুরু করে উন্মত্ত জনতা। পরে ওসি অনুপম চক্রবতর্ীর্ বাহিনী নিয়ে এসে লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন। তত ক্ষণে মারা গিয়েছে দুই অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। পুলিশ কর্মীদের উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। |