পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জাতীয় সড়ক অবরোধের ঘটনায় বনগাঁয় নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ ও যানচালকেরা। বসিরহাটেও দু’টি স্কুলে পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গোলমালের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুরের পাশাপাশি, বোমাও ফাটানো হয় বলে অভিযোগ।
শুক্রবার দুপুরে বনগাঁয় যশোহর রোড অবরোধের কারণ হিসাবে উঠে এসেছে পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়া নজরদারি নিয়ে ছাত্রদের আপত্তি ও তা নিয়ে শিক্ষকদের প্রতিবাদ। যদিও এ ব্যাপারে পরীক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে অবরোধ ওঠে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বনগাঁর কেশবলাল বিদ্যাপীঠে উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। সেখানে সিট পড়েছিল বনগাঁ হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ দিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কয়েকজন বহিরাগতকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের কয়েকজন সহপাঠীকে মারধর করে। তার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের ধরার দাবিতেই তাঁরা বাটার মোড়ে যশোহর রোডে দুপুর আড়াইটে নাগাদ অবরোধ শুরু করেন। অন্যদিকে, কেশবলাল বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পরীক্ষায় কেন কড়া ‘গার্ড’ দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশে কটূক্তি করা হয়। এমনকী কয়েকজন শিক্ষককে হেনস্থাও করে কিছু পরীক্ষার্থী। ক্লাসে ভাঙচুরও চালায়। প্রধান শিক্ষক নারায়ণ ঘোষ বলেন, “স্কুলের প্রায় ১৫-২০ হাজার টাকার সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে। আমাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেওয়া হয়।” যদিও পরীক্ষার্থীদের পাল্টা দাবি, পরীক্ষা চলাকালীন স্কুলের এক শিক্ষাকর্মী এক ছাত্রকে নকল সরবরাহ করছিলেন। তাঁদের এক সহপাঠী প্রতিবাদ করায় পরীক্ষা শেষ হলে তার ‘বদলা’ নিতে তাঁদের মারধর করা হয়। একজন ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নারায়ণবাবু অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন।
বনগাঁর সেন্টার ইনচার্জ দিলীপ ঘোষ বলেন, “খবর পেয়ে বনগাঁ হাইস্কুলের কয়েকজন শিক্ষক কেশবলাল বিদ্যাপীঠে যান। সেখানে দু’পক্ষের আলোচনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।”
অন্যদিকে বসিরহাটের হাড়োয়ায় সোনাপুকুর বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলে গত কয়েকদিন ধরে কড়া গার্ড দেওয়া নিয়ে এ দিন পরীক্ষার শেষে গোলমাল বাধে। সোনাপুকুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার মণ্ডলের অভিযোগ, “পরীক্ষায় কড়া গার্ড থাকার কারণে নকল করতে না পারায় কিছু পরীক্ষার্থী পরীক্ষার শেষে স্কুলে ভাঙচুর করে। স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রদের মারধর করে। বোমা ফাটায় ও অ্যাসিড ছোড়ে। তাতে চার জন ছাত্র জখম হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশকে জানানো হয়েছে।” যদিও পুলিশের কাছে পরীক্ষার্থী এবং অভিভাবকেরা জানিয়েছেন, পরীক্ষাকেন্দ্রে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের সহযোগিতা না করায় বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।” একই ভাবে কড়া গার্ড দেওয়ার প্রতিবাদে হাসনাবাদের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাইস্কুলেও গোলমাল হয়। পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অসমঞ্জ ভট্টাচার্য বলেন, “স্থানীয় চারটি স্কুলের সিট পড়েছে আমাদের স্কুলে। এ দিন ১০ নম্বর ঘরের কিছু পরীক্ষার্থী নকল করতে দেওয়ার দাবি তোলে। তাদের তা করতে না দেওয়ায় পরীক্ষার শেষে তারা স্কুলে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশও আসে।” অভিযোগ অস্বীকার করে পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, পরীক্ষার হলে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় বিক্ষোভ দেখায় কিছু ছাত্র। |