|
|
|
|
জঞ্জাল জমছে পাঁশকুড়া পুরসভায় |
৫৮ লক্ষ খরচ করেও শুরু হয়নি সাফাই |
আনন্দ মণ্ডল • তমলুক |
পুরসভা হওয়ার ১১ বছর পরেও জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থা চালু হল না পাঁশকুড়ায়।
বামফ্রন্ট পরিচালিত প্রথম পুরবোর্ডের আমলে কোনও কাজই হয়নি। তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিচালিত দ্বিতীয় পুরবোর্ড লক্ষ-লক্ষ টাকা খরচ করে যন্ত্রপাতি কেনার পরে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ডে’ নিয়ে যাওয়ার জন্য আলাদা করে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিল। বছর তিনেক আগে কেনা সেই যন্ত্রের উপর জমছে ধুলোর পরত। রাস্তা ফেটে চৌচির। ইতিমধ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূলের পুরবোর্ড। তা-ও প্রায় মাস নয়েক হয়ে গেল। ফের প্রচুর টাকা খরচ করে ভাঙা রাস্তা সারিয়েছে তারা। কিনেছে জঞ্জাল ফেলার ভ্যাট। সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়নি এখনও।
১৭টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট পাঁশকুড়া পুরসভার মধ্যে রয়েছে রেলস্টেশন সংলগ্ন বিশাল বাজার এবং ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সংলগ্ন পুরাতন বাজার ও জনবসতি এলাকা। দোকানপাটের বর্জ্য পদার্থ ছাড়াও পুরসভা এলাকার কয়েক হাজার পরিবারের দৈনন্দিন আবর্জনা স্থানীয় ভাবে নিকাশি খালে বা যত্রতত্র ফেলা হয়। তা পরিষ্কারের কোনও বন্দোবস্ত না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ চারদিকে। বছর ১১ আগে পুরসভা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর পাকা রাস্তা, বাড়ি-বাড়ি পানীয় জলের সংযোগ, জঞ্জাল সাফাইয়ের মতো ন্যূনতম পরিকাঠামো চালু হবে বলে আশা করেছিলেন পুরবাসী। কিন্তু পুরকর নিয়মিত আদায় করলেও জঞ্জাল সাফাই ব্যবস্থা চালু করেনি বামেদের প্রথম পুরবোর্ড। |
|
পুরসভার সামনে সার দিয়ে পড়ে রয়েছে আবর্জনা ফেলার বাক্স। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
২০০৭ সালে দ্বিতীয় পুরনির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের বোর্ড। তারা জঞ্জাল সাফাইয়ের জন্য রাজ্য সরকারের বরাদ্দ অর্থে ২০০৯ সালের শেষ দিকে একটি ট্র্যাক্টর, ৬টি ডাম্পার, দুটি হ্যান্ড-ট্রলি ও একটি লিফটিং মেশিন মিলিয়ে প্রায় ১৯ লক্ষ টাকার সামগ্রী কেনে। সাড়ে তিন বছর আগে কেনা ওই সব যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে পুরসভা অফিসের সামনে।
এ দিকে, জঞ্জাল তুলে ফেলার জন্য পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে মেদিনীপুর ক্যানালের পাশে সেচ দফতরের প্রায় দু’একর খালি জমি চিহ্নিত করা হয় সেই সময়ই। সেচ দফতর ওই ফাঁকা খাসজমি পুরসভাকে হস্তান্তর করে। পুরসভার জঞ্জাল বোঝাই গাড়ি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যানেল বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা পুরসভা পাকা করে দেয় ১৯ লক্ষ টাকা খরচ করে। তবে কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। ভারী-ভারী লরি ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ফলে কিছুদিনের মধ্যেই তা ভেঙে পড়ে। জঞ্জাল সাফাই আর শুরু হয়নি।
গত বছর জুন মাসে পাঁশকুড়া পুরসভায় একক ভাবে ক্ষমতায় আসে তৃণমূলের পুরবোর্ড। জঞ্জাল সাফাই শুরু করার জন্য তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ করে। যেমন, ১৪ লক্ষ টাকা খরচ করে ক্যানেল বাঁধের রাস্তা সারায়। ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে ৬০টি জঞ্জাল ফেলার ভ্যাট কেনে। ওই পর্যন্তই। জঞ্জাল জমছে এখনও। বিশেষ করে ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে যত্রতত্র পড়ে রয়েছে নোংরা-আবর্জন। পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারের চারপাশও অপরিচ্ছন্ন।
আগের পুরবোর্ডের আমলে সাফাইয়ের জন্য অস্থায়ী ভাবে চার জন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। আরও ১৭ জন অস্থায়ী সাফাই কর্মী নিয়োগ করার জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন চেয়েছেন নতুন পুর-কর্তৃপক্ষ। পাঁশকুড়ার পুরপ্রধান জাকিউর রহমান খান বলেন, ‘‘১৭ জন সাফাই কর্মী নিয়োগের জন্য রাজ্য সরকারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জঞ্জাল সাফাইয়ের কাজ শুরু করা হবে।”
বিগত অভিজ্ঞতায় সেই আশ্বাসে ভরসা হারিয়েছেন পুরবাসী। |
|
|
|
|
|