|
|
|
|
উত্তর তাজপুর বিদ্যাসাগর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র |
অনুমোদনের আট বছর পরেও হয়নি নিজস্ব ভবন |
অমিত কর মহাপাত্র • এগরা |
অনুমোদনের পর পেরিয়ে গিয়েছে আট-আটটা বছর। এখন নিজস্ব ভবন হল না এগরা ২ ব্লকের বিবেকানন্দ গ্রাম পঞ্চায়েত উত্তর তাজপুর বিদ্যাসাগর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের। পঠন-পাঠন তাই হয় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোতলার দু’টি ঘরে। পঞ্চম থেকে অষ্টম চারটি শ্রেণি। বরাদ্দ দু’টো কক্ষ। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম শ্রেণির ক্লাস হয় এক জায়গায়। অষ্টম শ্রেণি অবশ্য একাই একটা ঘর পেয়েছে। সব মিলিয়ে একশোরও বেশি ছাত্রছাত্রী নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালন সমিতির সম্পাদক পূর্ণচন্দ্র পাত্র বলেন, “আট বছর পরেও পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় দু’টি ঘরে ঠাসাঠাসি করে বসতে হয় পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের। ক্লাস ঘর নেই বলে মিলছে না নবম ও দশম শ্রেণির অনুমোদন। ফলে শিক্ষাকেন্দ্র সম্পর্কে আগ্রহ হারাচ্ছেন অভিভাবকরাও।” তাঁর দাবি, “অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি হতে হচ্ছে দূরের হাইস্কুলে। এর জেরে স্কুলছুটের সমস্যাও বাড়ছে।” অথচ, শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য সাংসদ তহবিল থেকে বরাদ্দ হওয়া ৯ লক্ষ টাকা জেলাশাসকের দফতরে দু’বছর ধরে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল রাজনৈতিক স্বার্থে শিক্ষাকেন্দ্রের উন্নয়ন আটকাচ্ছে, এমনই অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস ও সিপিআই নেতৃত্ব। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব ও প্রশাসন। |
বিপন্ন শিক্ষার অধিকার |
|
একই কক্ষে তিন শ্রেণি। উত্তর তাজপুর বিদ্যাসাগর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে কৌশিক মিশ্রের ছবি। |
স্থানীয় তাজপুর, নিমকবাড়, ছোট নলগেড়িয়া-সহ কয়েকটি গ্রাম থেকে কাছের হাইস্কুলের দূরত্ব তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার হওয়ায় ২০০৫ সালে চালু হয় উত্তর তাজপুর বিদ্যাসাগর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র। তফসিলি জাতি-উপজাতি ছাত্রছাত্রী নিয়ে গঠিত এই শিক্ষাকেন্দ্রটি ‘মডেল’ স্বীকৃতিও পেয়েছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা হলেও শিক্ষাকেন্দ্র চালুর পর থেকেই পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কয়েক বছর আগে পঞ্চায়েত এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে অফিস ঘর তৈরি করে দেয়। পরে শিক্ষাকেন্দ্রটি মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ায় পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে কলাকেন্দ্র হিসাবে একটি ঘর, কম্পিউটার, আলমারি বেঞ্চ ও অন্যান্য উপকরণ কেনা হয়। কিন্তু, শ্রেণিকক্ষের সমস্যা থেকেই গিয়েছে। ওই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সুজিত সুর, ছাত্রী কাকলী বর বলে, “পাশাপাশি তিনটি ক্লাস একসঙ্গে হওয়ায় শিক্ষকরা কী বলছেন শুনতে সমস্যা হয়। ছাত্রদের কথাও অনেক সময় শিক্ষকদের কানে পৌঁছয় না।”
এগরার এই ব্লক মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অর্ন্তভূক্ত হওয়ার পর সাংসদ সিপিআইয়ের প্রবোধ পণ্ডা জেলাশাসকের কাছে শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের জন্য ৯ লক্ষ টাকা দেন। কিন্তু, একাধিকবার তদ্বির করেও সেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। শিক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য সম্প্রসারক তথা কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি প্রণব মাইতি বলেন, “সিপিআই সাংসদ টাকা দিয়েছেন এবং আমি এই শিক্ষাকেন্দ্রের মুখ্য সম্প্রসারক হওয়ায় সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে নানা অজুহাতে ওই টাকা আটকে রেখেছে তৃণমূল।”
তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি মামুদ হোসেন অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এক্ষেত্রে দলের কোনও ভূমিকা নেই। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে দেখা হবে আসল সমস্যা কোথায়।” পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অজয় পাল অবশ্য বলেন, “ওই সাংসদ প্রকল্প জমা দিয়েছেন অথচ টাকা দেওয়া হয়নি, এমন ঘটনা জানা নেই।” |
|
|
|
|
|