মাওবাদী হানায় নিহতদের পরিবার
চেক নয়, ক্ষতিপূরণ বাবদ ফোটোকপি বিলি মমতার
মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে যেটা মিলেছে, সেটা চেক নয়, ‘ফোটোকপি’। মাওবাদী হানায় নিহত ১৪ জনের বাড়ির লোকের মধ্যে অনেকের এই উপলব্ধি হয়েছে, ব্যাঙ্কে ‘মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চেক’ ভাঙাতে গিয়ে। এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, কী করলেই বা টাকা পাওয়া যাবে, প্রশাসনের তরফে প্রাপকদের এখনও বলা হয়নি। ফল, চরম বিভ্রান্তি।
গত মঙ্গলবার বিনপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে মাওবাদী হানায় নিহত ১৪ জনের বাড়ির লোকের হাতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ‘চেক’-এ ৩ লক্ষ টাকা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ‘চেক’ নিয়ে এই বিভ্রান্তির খবর জানাজানি হতেই সরব হন বিরোধীরা। কংগ্রেসের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি স্বপন দুবের কথায়, “আগে কেন্দ্রের টাকায় রাস্তা বানিয়ে সিপিএম বলত, ‘আমরা করেছি’। আর এখন সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাফল্য নিজের বলে দাবি করছেন মমতা। এ ভাবে মঞ্চে উঠিয়ে কাউকে চেকের ফটো-কপি দিয়ে নিজের প্রচার হয়তো হয়। কিন্তু প্রাপকের যন্ত্রণা বেড়ে যায়।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “সবেতেই চমক দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইচ্ছে করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
২০০৯-এর এপ্রিলের পর থেকে মাওবাদী হানায় নিহতের পরিবারকে কেন্দ্র এবং রাজ্য ক্ষতিপূরণ দেয়। কেন্দ্র দেয় ৩ লক্ষ টাকা। রাজ্যের ক্ষতিপূরণ বাম-আমলে ছিল ১ লক্ষ টাকা। এখন ২ লক্ষ। রাজ্যের টাকা সরাসরি প্রাপকের নামে চেক কেটে দেওয়া হয়। কিন্তু কী ভাবে মেলে কেন্দ্রের দেওয়া ক্ষতিপূরণ?
চেকের ফোটোকপি হাতে বেলপাহাড়ির লতিকা মণ্ডল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশের তৈরি করা মাওবাদী হামলায় নিহতদের তালিকা থেকে প্রাপক বাছা হয় ব্লক স্তরে। মহকুমা-জেলা স্তর থেকে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর হয়ে নামের তালিকা কেন্দ্রের কাছে যায়। বরাদ্দ টাকা জেলায় এসে পৌঁছয় প্রাপকদের নামে-নামে। তার পরে জেলা ট্রেজারি থেকে প্রত্যেকের নামে চেক ‘ইস্যু’ হয়। লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের দায়িত্ব হল, প্রাপকদের নামে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলে ওই চেক জমা করা। এ ক্ষেত্রে তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকার বিডিও ও ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজারের সাহায্য নেন।
গোটা প্রক্রিয়া মিটলে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ প্রাপককে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ‘আপনার টাকা এসেছে’। পশ্চিম মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেন্দ্র সন্নিগ্রাহীর বক্তব্য, “ক্ষতিপূরণের ৩ লক্ষ টাকা পেতে ফিক্সড ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। প্রশাসন চেক পাঠালে আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দিই।”
এ বার তেমন কিছুই করা হয়নি বলে জানাচ্ছে জেলা প্রসাসনের একটি সূত্র। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) রজতকুমার সাইনি বলেন, “এটা প্রতীকী চেক। দু’-এক দিনের মধ্যে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে। পরে ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট দিয়ে দেওয়া হবে।”
কিন্তু ‘প্রতীকী চেক’ দেওয়ার প্রয়োজন হল কেন?
অতিরিক্ত জেলাশাসক নিরুত্তর। তবে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে এই খাতে কেন্দ্রের থেকে পাওয়া ক্ষতিপূরণের টাকা ‘প্রতীকী চেক’-এর মাধ্যমে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন ব্লকে বিলি করা হয়েছে। করেছে ব্লক প্রশাসন। তবে সে ক্ষেত্রে প্রশাসন প্রাপকদের বলে দিয়েছিল, ওই ‘চেক’ ব্যাঙ্কে জমা না দিতে। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য তড়িঘড়ি করতে গিয়ে বিলি করা ‘চেক’ যে ‘প্রতীকী’, তা প্রাপকদের জানানো হয়নি।
এ বারের ‘চেক’ প্রাপক বেলপাহাড়ি ব্লকের পাঁচ জন এবং ঝাড়গ্রাম ব্লকের ন’জন বাসিন্দার অনেকেই নিরক্ষর। যেমন বেলপাহাড়ির বেলেবেড়া গ্রামের বৃদ্ধা লতিকা মণ্ডল। ২০১০-এ খুন হন লতিকাদেবীর ছেলে সিপিএম নেতা স্বপন মণ্ডল। বৃদ্ধার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে খাম নেওয়ার পরে খাতায় টিপসই দিই। খামে চেক ছিল। সেটা নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। ব্যাঙ্কে বলল, ‘এটা চেক নয়, ফোটোকপি’। কিন্তু কী ভাবে টাকা পাব সেটা কেউ বলেননি।” ২০০৯-র এপ্রিলে মাওবাদী হামলায় স্বামী সঞ্জয় দাসকে হারানো শিলদার বড়শুকজোড়ার পবিত্রা দাসেরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি বলেন, “কবে টাকা পাব, ব্লক প্রশাসনও বলতে পারছে না।”
বেলপাহাড়ির বিডিও সর্বোদয় সাহা এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। ঝাড়গ্রামের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সভার আগের দিন আমার কাছে দ্রুত কয়েক জন ক্ষতিপূরণ প্রাপকের নাম পাঠাতে বলা হয়েছিল। তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর সভায় হাজির করানোর দায়িত্বও ছিল আমার। এর বেশি কিছু জানা নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.