জরিমানা বন্দরেরই, যন্ত্র সরাতে
বাধা নেই এবিজি-র
লদিয়ায় এবিজি-জট নিয়ে নিজেরাই মামলা করে হেরে গেল কলকাতা বন্দর। শুধু তা-ই নয়, ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য মামলা ঠুকে নিজেরাই পড়ে গেল চার লক্ষ টাকা জরিমানার মুখে।
চুক্তি ভাঙার অভিযোগ তুলে বন্দর-কর্তৃপক্ষ হলদিয়ার দুই ও আট নম্বর বার্থে এবিজি-র যে-সব যন্ত্রপাতি আটকে রেখেছেন, তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য শুক্রবার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, জাহাজে পণ্য ওঠানো-নামানোর সংস্থা এবিজি হলদিয়া বন্দর থেকে তাদের যন্ত্রপাতি নিজেদের ইচ্ছেমতো জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। প্রয়োজনে সেগুলি বিদেশেও নিয়ে যেতে পারে তারা।
নিজেদের মামলায় বন্দরের হেনস্থা এখানেই শেষ হচ্ছে না। মামলা করে অকারণে হাইকোর্টের সময় নষ্ট করার দায়ে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের চার লক্ষ টাকা জরিমানাও করেছেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। এবিজি-র আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বলেন, বন্দর-কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না-পারা, চুক্তি অনুযায়ী কাজ দিতে না-পারার কথাও রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারপতি। এবিজি যে হলদিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, উচ্চ আদালতের রায়েই সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সমরাদিত্যবাবু।
বন্দর সূত্রের খবর, গ্লোবাল টেন্ডার বা বিশ্ব দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিতে সাড়া দিয়ে সর্বোচ্চ দর হেঁকেই ২০১০ সালের অক্টোবরে হলদিয়া বন্দরে দু’টি বার্থ (দুই ও আট নম্বর) থেকে মালপত্র খালাস করার দায়িত্ব পেয়েছিল এবিজি। তারা ১০০ কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি এনে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ শুরু করে। অন্যান্য বার্থের তুলনায় ওই দু’টি বার্থে এক সঙ্গে প্রায় চার গুণ পণ্য খালাসের কৃতিত্ব দেখায় তারা। বড় বড় জাহাজ আসতে শুরু করে হলদিয়ায়। আয় বাড়ে বন্দরের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলদিয়া বন্দরে এবিজি-র কাজের অভিজ্ঞতা খুব সুখের হয়নি। এবিজি হলদিয়ায় কাজ করতে আসার আগেই তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় সেখানকার নতুন তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, এবিজি হলদিয়ায় কাজ শুরু করার আগেই শুভেন্দুবাবু জনসভায় জানিয়ে দেন, ওই সংস্থার কাজের মেয়াদ যাতে কোনও ভাবেই না-বাড়ে, সেটা তিনি দেখবেন। বন্দর সূত্রের খবর, এবিজি পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পণ্য ওঠানো-নামানো শুরু করায় মালপত্র খালাসের সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সংস্থার স্বার্থে ঘা লাগে। কারণ, তাদের কর্মপদ্ধতি পুরোপুরি শ্রমিক-নির্ভর। তাতে কাজ শেষ হতে সময় লাগে বেশি। জাহাজগুলিকে ওই সব বার্থে গিয়ে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। গুনতে হয় বাড়তি ভাড়া। তাই জাহাজ সংস্থাগুলি এবিজি-র জন্য নির্দিষ্ট দু’টি বার্থকেই বেছে নেয়।
আর এই নিয়েই শুরু হয় গোলমাল। বাড়তি কিছু শ্রমিককে ছাঁটাই করেছিল এবিজি। তাঁদের কাজে ফেরানোর দাবি সামনে রেখে পণ্য খালাসকারী অন্যান্য সংস্থার শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়ে যায় হলদিয়ায়। মূলত স্থানীয় তৃণমূল নেতারাই সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এবিজি-র অফিসে হামলা হয়। শুরু হয় ঘেরাও। এবিজি-কর্তাদের হুমকি দেওয়া হতে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় নিরাপত্তার অভাবে গত সেপ্টেম্বরে কাজ বন্ধ করে দেয় এবিজি। নিরাপত্তা চেয়ে তারা হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়।
এবিজি-কে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ওই সংস্থার অভিযোগ, প্রশাসন বা পুলিশের কাছ থেকে তারা কোনও সহায়তা পায়নি। বন্দর-কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, বিভিন্ন কায়েমি স্বার্থ এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে তারা কাজ করতে পারছিল না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মধ্যেই হলদিয়া সফরে গিয়ে জানিয়ে দেন, ওই বন্দর পুরোপুরি স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি যে বদলায়নি, গত পুজোর পরেই এবিজি-র কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্তাকে অপহরণ করে রাজ্য ছাড়তে বাধ্য করানোর ঘটনায় সেটা প্রমাণিত হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরেই পাকাপাকি ভাবে হলদিয়া থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবিজি।
এই সিদ্ধান্তে বেঁকে বসে কলকাতা বন্দর। তারা জানিয়ে দেয়, এবিজি যে-হেতু চুক্তি ভেঙেছে, তাই তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতিপূরণ না-দিলে এবিজি-র যন্ত্রপাতি অন্যত্র সরাতে দেওয়া হবে না। এবিজি যাতে যন্ত্রপাতি সরাতে না-পারে, তা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে বন্দর।
এবিজি-র অন্যতম আইনজীবী জিষ্ণু সাহা বলেন, হাইকোর্টের এ দিনের রায়ের পরে এবিজি তাদের সমস্ত যন্ত্রপাতি নিজেদের ইচ্ছেমতো দেশ বা বিদেশের যে-কোনও জায়গায় সরিয়ে নিতে পারবে। হাইকোর্ট নিযুক্ত দুই স্পেশ্যাল অফিসারের তত্ত্বাবধানে তারা সরঞ্জাম সরাবে। বন্দর-কর্তৃপক্ষ তাতে কোনও ভাবে বাধা দিতে পারবেন না। রায়ের পরে এবিজি-র চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার গুরপ্রীত সিংহ মালহি লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “আশা করি, যন্ত্র সরানোর ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা আসবে না। তবে রাজ্যের জাহাজ শিল্পে যে-নতুন মাত্রা যোগ করার উদ্যোগ চলছিল, পশ্চিমবঙ্গ সেই সুযোগ হারাল।”
আর কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সূত্রে বলা হয়, হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি চেয়ে তাঁরা আবেদন করেছেন। সেই প্রতিলিপি পেলেই তাঁরা যা বলার বলবেন।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.