টেস্ট ক্যাপের খবর পেয়ে কেঁদেই ফেললেন রাহানে
তিনি পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। দীর্ঘ দিন চাকরির পর এখন রিটায়ার করে কনসালট্যান্সি করছেন। ক্রেতারা অনেকে যে বাস্তু মানে এবং সে অনুযায়ী বাড়ির কাঠামোগত নানা পরিবর্তন চায়, সেটা ভালই জানেন। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হননি যেখানে লোকে এসে তাঁকে বলছে, আপনার বাড়িটা একটু বদলান। একটু বাস্তু করুন। তাতে হয়তো সুসময় ফিরবে!
অবশেষে টেস্ট দুনিয়ায়। সচিনদের সঙ্গে রাহানে। ছবি: উৎপল সরকার
ইনি অজিঙ্ক রাহানের বাবা। মধুকর রাহানে। গত আঠারো মাসে ভারতীয় ক্রিকেটে যাঁর ছেলের নাম ‘ওয়াটার বয়’। টানা আঠারো মাস ধরে দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে ক্রিকেটারদের জল খাইয়ে গিয়েছেন রাহানে। তাঁর মতো দুর্দশাগ্রস্ত পরিবেশ থেকে উঠে এসে দেশের জন্য খেলার নমুনা ধোনির দলেই স্বয়ং অধিনায়ক-সহ আরও কয়েক জন রয়েছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ রকম করুণ উদ্বোধন আর কারও হয়নি। যেখানে টেস্ট দলে থেকেও চূড়ান্ত এগারোয় কিছুতেই ঢোকা হয়নি। যুবরাজ ফিরে এসেছেন। রায়না ফিরে এসেছেন। মুরলী বিজয় ঢুকে গিয়েছেন। শিখর ধবনতিনিও কোথা থেকে চলে এসেছেন। কিন্তু তাঁর, রাহানের মধ্যিখানে দু’টো ওয়ান ডে ম্যাচ বাদ দিলে আর ভারতীয় দলে ঢোকা হয়নি। চিরআকাঙ্খিত টেস্ট ক্যাপ পাওয়াও হয়নি। রোজ রাত্তিরে বাড়িতে ফোন করে মা-র সঙ্গে কথা বলতেন। বলতেন, “আমি ব্যাট ধরতে পারি, না হাতে জল ধরতে পারি সেটাই ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি।” আর মা বলতেন, “মন দিয়ে যারা খেলছে তাদের খেলা দ্যাখ। সেটাও তো তোর একটা অনুশীলন হবে।”
এ দিন কোটলার দোতলার বক্সে বসে মিসেস রাহানে বলছিলেন, “সবুরে যে মেওয়া ফলল, এটা ভেবেই আনন্দে কেমন দিশেহারা লাগছে।” কাল রাত্তির দশটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে রাহানে জানান, অবশেষে খেলছেন। অবশেষে টেস্ট ক্যাপ পাচ্ছেন। বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন রাহানে। এর এক ঘণ্টার মধ্যে মরাঠি ক্রিকেটারের এজেন্ট ফোন করেন অজিঙ্কের বাবা-মাকে। বলেন, পরিবারের এত বড় আবেগাপ্লুত দিনে আপনাদের অবশ্যই উড়ে আসা উচিত। সিনিয়র রাহানেরা আসতে রাজি হন একটাই শর্তে: ছেলেকে খেলার আগে কিছুতেই বলা যাবে না যে, তাঁরা আসছেন। তা হলে অজিঙ্কের টেনশন বেড়ে যাবে। আর সফরটাও তাঁরা সংক্ষিপ্ত রাখলেন এক দিনে। এলেন, খেলা দেখলেন, রাতের ফ্লাইটে ফিরে গেলেন মুম্বই। ছেলের ওপর কোনও রকম চাপ সৃষ্টি করতে চান না তাঁরা।
গর্বিত। মধুকর ও সুজাতা রাহানে। শুক্রবার কোটলায়। ছবি: অতুল শ্রীবাস্তব
বাবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলে কী হবে, নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা রাহানের। মুম্বইয়ে নামেই থাকেন। আসলে থাকেন মুলুন্দ নামের একটা জায়গায় যা মুম্বইয়ের ক্রিকেটকেন্দ্র থেকে ট্রেনে দু’ঘণ্টা। সেই ট্রেনগুলো এমন ভিড়ে ঠাসা যে, খুদে অজিঙ্ককে সাত-আটটা ট্রেন অনিবার্য ভাবে মিস করতে হত। তার পর দু’ঘণ্টা ক্রিকেট খেলে রাতে আবার বাড়ি। মধুকর রাহানে গল্প করছিলেন, অজিঙ্কের বয়স যখন মাত্র আট, তখন ছিয়ানব্বই বিশ্বকাপ সবে শেষ হয়েছে। প্রথম ক্যাম্পে যেতেই কোচ তাঁকে পকেট থেকে একটা ছবি বার করে বলেছিলেন, এর সঙ্গে খেলবে? তা হলে কিন্তু তপস্যা করতে হবে।
যাঁর ছবি দেখিয়েছিলেন, তাঁর নাম এ দিন মধুকর সহাস্যে বললেন, তিনি সচিন তেন্ডুলকর। মধুকর-পত্নী হেসে বললেন, “আজ সচিন আর ও একই টেস্ট টিমে।” মধুকরও তখন হাসছেন, “আমি জানতাম লড়াইতেই সিদ্ধি হবে। বাস্তু লাগবে না।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.