বিধায়কের নামে মমতাকে চিঠি দলীয় কর্মীদের
ঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের শিরঃপীড়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে পশ্চিম মেদিনীপুর। রাঢ় বঙ্গের ওই জেলারই বিনপুরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারি জনসভায় লোক হয়নি মঙ্গলবার। যার পিছনে শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বকে অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। আবার সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলারই এক তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন ডেবরা ব্লকের দলীয় নেতা-কর্মীরাই!
অভিযোগ ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি, তাঁর ছেলে অমিত মাইতি এবং দলের ব্লক সভাপতি রতন দে-র বিরুদ্ধে। বিধায়কের নেতৃত্বে কী ভাবে আট মাসের মধ্যে ওই এলাকার ২১৬টি বুথের মধ্যে ১৭৫ জন নেতাকে পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে, কী ভাবে বিধায়কের ছেলে এক বছরের মধ্যে বিপুল টাকার মালিক হয়েছেন সে সবের বিবরণ দিয়ে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, বীতশ্রদ্ধ হয়ে কয়েকশো কর্মী ইতিমধ্যেই সিপিএমে যোগ দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁরা এই নিয়ে দলনেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন বলে জানিয়েছেন।
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ এই অন্তর্দ্বন্দ্বের ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে দলের এক প্রথম সারির সাংসদ-নেতার কথায়, “এই রকম ঘটনা যে ঘটছে, তার খবর আমাদের কাছে আছে। শীর্ষ স্তর থেকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে সমস্যা আরও বাড়বে।”
তৃণমূল সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরের দলীয় বিষয়ে এখন আর শুভেন্দু অধিকারীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। গোটা বিষয়ই দেখভাল করছেন জেলার নেতা দীনেন রায় এবং রাজ্য স্তরে মুকুল রায়। জেলার নেতারা কেউ মন্তব্য করতে চাননি। আর মুকুলবাবুর বক্তব্য, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আগে কিছু বলতে পারবেন না।
বিধায়ক-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে তৃণমূল নেত্রীর কাছে ওই চিঠি পাঠিয়েছেন ডেবরার তৃণমূল নেতা সন্তোষ কর। রাধামোহনপুরে গত ১০ মার্চ তৃণমূলের পাঁচশোরও বেশি নেতা-কর্মী মিলে বৈঠক করেই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার আগে জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানালেও কোনও প্রতিকার হয়নি বলে সন্তোষবাবুর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, ক’মাস আগে ‘অন্যায় ভাবে’ তাঁকে ওই পদ থেকে সরানো হয়েছে। এখন খোদ বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তৃণমূল নেত্রীর কাছে চিঠি পাঠানোর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিড়ম্বনা বেড়েছে দলীয় নেতৃত্বেরও।
দলেরই নিশানায়
কী অভিযোগ
• আর্থিক দুর্নীতি।
• এক বছরেই ছেলের বিপুল টাকা।
• স্বজনপোষণ।
• অপছন্দের নেতা-কর্মীদের তাড়ানো।
যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই বিধায়ক রাধাকান্তবাবু পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “চিঠির বিষয়টি জানি। আমি চাই, তদন্ত হোক। দল বা সরকার যে কেউই তদন্ত করতে পারে। অসুবিধা নেই।” ব্লক সভাপতি রতনবাবু অবশ্য শুধু বলেন, “চিঠি যিনি পাঠিয়েছেন, তাঁকে আগেই সহ-সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই।”
ডেবরা ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব অবশ্য নতুন নয়। রাজ্যে পালাবদলের পর ব্লক সভাপতি অলোক আচার্যকে দল থেকেই বহিষ্কার করা হয়। তাঁর জায়গায় নতুন ব্লক সভাপতি হন রতনবাবু। তিনি আবার ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা। গোড়ায় অলোকবাবুর সঙ্গে রাধাকান্তবাবুর বিরোধ বেধেছিল গত বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হওয়া নিয়েই। অলোকবাবু অবশ্য চিঠির ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
গোষ্ঠী-বিবাদের জেরে যে চিঠি তৃণমূল নেত্রীর কাছে গিয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে: বুথ থেকে ব্লক স্তর পর্যন্ত দলের পদাধিকারী ও জনপ্রতিনিধি মিলিয়ে পাঁচশোরও বেশি নেতা-কর্মীকে দল থেকে বাদ দিয়েছেন বর্তমান নেতৃত্ব। বিধায়কের ছেলে কেশপুরে পেট্রোল পাম্প করেছেন, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের ৮০ লক্ষ টাকার টেন্ডার পেয়েছেন, ডেবরার ২০টি বিদ্যালয়ে ইট সরবরাহ এবং সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের টেন্ডার পেয়েছেন। ওই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিধায়কের বক্তব্য, “প্রয়োজনে কমিশন বসিয়ে তদন্ত হোক। আমিও দলের কাছে তদন্তের আর্জি জানাব।”
এমন ঘটনার জেরে কী দলের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়ছে না? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের কাছে। জেলায় শাসক দলের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে আবার অন্য আশঙ্কায় ভুগছে সিপিএম।
দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের কথায়, “শুধু আমরা কেন, সাধারণ মানুষও উদ্বিগ্ন। দু’পক্ষের মারামারির ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ভবিষ্যতে এমনও দেখা যেতে পারে, ওদের দু’পক্ষের মারামারি হচ্ছে, আর আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নামে মিথ্যে মামলা করা হচ্ছে!” আর কংগ্রেসের এক নেতা বলছেন, “জাতীয় সড়কের ধারে ডেবরায় এমন কাণ্ড! তা হলে গ্রামে-গঞ্জে কী হচ্ছে, সহজেই অনুমেয়!”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.