অনুত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানোর দাবিতে শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ এবং কয়েক জন শিক্ষককে রাতভর আটক করে রাখল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হুগলির ওই কলেজে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করেছিল। রাতে শিক্ষকদের জানিয়ে দেওয়া হয়, পার্ট-টু পরীক্ষায় অকৃতকার্য ৫০ জনকে পাশ করানোর দাবি না মানলে তাঁদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে না। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য বলেন, “পাশ করানোর প্রশ্নই ওঠে না। আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। কলেজের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।”
গত কয়েক মাসে রাজ্যের কিছু স্কুল-কলেজে পাশ করানোর দাবিতে ঘেরাও আন্দোলন হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বাড়াবাড়ি হয় কলকাতার যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। বেসরকারি কলেজেও শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা ঘেরাও হন। শিক্ষামন্ত্রীর মতে, “এটা সামাজিক ব্যাধি। সিপিএমের আমলে পার্টির সঙ্গে তাদের ছাত্র সংগঠনের সমন্বয় ছিল। তারা ঘেরাও করাত, আবার তুলেও নিত। এ সব ক্ষেত্রে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন খুব সক্রিয় নয়।” |
কলেজে ছাত্রদের অবস্থান।—নিজস্ব চিত্র |
বৃহস্পতিবার থেকে শ্রীরামপুর কলেজে যে অবস্থান-বিক্ষোভ হয়েছে, ছাত্র সংসদে ক্ষমতাসীন তৃণমূল ছাত্র পরিষদই কিন্তু তার নেতৃত্বে ছিল। ছিলেন সংগঠনের জেলা সহ-সভাপতি কৌশিক শীলও। তাঁর বক্তব্য, “কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কোনও কথাই শুনছেন না। আমরা পড়ুয়াদের পাশে আছি।” ছাত্র সংসদের সভাপতি ইন্দ্রনীল রায় অবশ্য বলেন, “আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে আন্দোলন করছি না।”
গোলমালের সূত্রপাত সপ্তাহখানেক আগে। পার্ট-টু পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, কলেজে প্রয়োজনীয় হাজিরা না থাকায় ৫০ জনকে আটকে দেওয়া হয়েছে। তার জেরে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কলেজ গেটে অবস্থান শুরু হয়। কেউ কেউ অনশনও শুরু করেন। কলেজের অধ্যক্ষ লালতুয়াংগ্লিয়ানা খিয়াঙ্গতে বলেন, “আমি কলেজ চত্বরেই থাকি। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের জেরে রাত পর্যন্ত দফতরেই ছিলাম। ওরা আবাসনে ফিরতে বললেও যেতে পারিনি। রাত ১১টার পরে ওরা জানায়, আমাদের পাঁচ-ছ’জনকে ঘেরাও করা হল।”
ছাত্রছাত্রীরা অবশ্য শিক্ষকদের ঘরে ঢোকেননি। কিছুটা দূরে সারা রাত বসে থাকেন তাঁরা। বিএ প্রথম বর্ষের পরীক্ষা থাকায় এ দিন তাঁরা অবস্থান তুলে নেন। শিক্ষকেরাও ছাড়া পান। কিন্তু অনশন চলতে থাকে। এক ছাত্রী অসুস্থও হয়ে পড়েন। তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ছাত্র সংসদের দাবি, সকলকে পাশ করানোর বিষয়টি ভেবে দেখা হবে বলে অধ্যক্ষ কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অধ্যক্ষের বক্তব্য, “এমন কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। ওই ছাত্রছাত্রীরা খুব কম দিনই কলেজে এসেছেন। ফলে ওঁদের দাবির কোনও ভিত্তি নেই।” রাতভর নিজের ঘরে আটকে ছিলেন সহকারী অধ্যক্ষ রত্না দত্তও। তবে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |