আপনার সাহায্যে...
রইবে কেমনে মুখের হাসি
ছর পঁচিশের যুবক যন্ত্রণায় কুঁকড়ে যাচ্ছিলেন। দাঁত নিয়ে জেরবার। রাতে পেনকিলার দিয়ে কোনও রকমে ব্যথা সামালালেও সকাল থেকে আবার যে কে সেই। “ডাক্তারবাবু আর পারছি না। সব দাঁতই তুলে দিন।” এমন ঘটনা ওই একটিই নয়, সমস্যা প্রায় সকলেরই।
কারও ফুটো দাঁত, কারও বা খোদ আক্কেল দাঁত। নিট ফল যন্ত্রণায় কাজের দফারফা। ব্যথা না হয় পেনকিলার দিয়ে ম্যানেজ হল। কিন্তু মুখের গন্ধ? কারও কারও দাম্পত্য সম্পর্কে ইতি হওয়ারও জোগাড়। তাই অনেকেই দাঁতগুলো উপড়ে ফেলে নকল দাঁত বাঁধিয়ে নিতে চান। ঝামেলা বিদায়।
কিন্তু সত্যি কি তাই? মানলেন না ডেন্টাল সার্জেন কুশল নারায়ণ চক্রবর্তী। অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, “দাঁতের ব্যথা এমনই, যিনি মুখ হাঁ করে দাঁত দেখাতে ভয় পান, তিনিই ব্যথায় বীরের মতো এসে দাবি জানান দাঁত তুলে দিন! কিন্তু দাঁত তুললে ঝামেলা কমে না, বরং বাড়ে ।’’
দাঁত তুলেও ঝামেলা? “মুখের ভিতরের ব্যালেন্সটাই তো নষ্ট হয়ে যায়।” বলছেন প্রস্থোডনটিস্ট ডা. সৌমিত্র ঘোষ। নকল দাঁত কখনই আসল দাঁতের কাজ একশো শতাংশ করতে পারে না। চেবানোর সময়ই ফারাকটা বুঝতে পারবেন।

দাঁত বাঁচাবার দাওয়াই
আলসেমি আর সময়ের অভাব। দুই মিলে অনেকেই রাতে শোওয়ার আগে দাঁত মাজেন না। ‘‘খাবার দাঁতের গোড়ায় ঢুকে রাতভর থেকে অ্যাসিড তৈরি করে জায়গাটা ক্ষইয়ে ফেলে। সকালে ব্রাশ করলেও যা ক্ষতি হওয়ার তা কিন্তু হয়েই যায়।’’ বললেন ডা. চক্রবর্তী। অর্থাৎ আমাদের ধারণা, সকালে ঠিকঠাক ব্রাশ করলেই হল। কিন্তু সেটা ভুল। অথচ ব্যথা না হওয়া পর্যন্ত গরজও নেই। হয়তো খাওয়ার পরেই টুথপিক লাগছে। একটা সময় দেখবেন কুলকুচো করলেই খাবার বেরিয়ে আসছে। আপনি নিশ্চিন্ত। কিন্তু তত দিনে হাড় ক্ষয়ে গিয়েছে।
ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
তা হলে?
আগেভাগে ফিলিং করালে ব্যাপারটা আর ক্যাভিটি পর্যন্ত গড়ায় না। কিন্তু তাতেও কি আর ঝামেলা কাটল? কারও কারও ফিলিং পরে উঠে যায়। মেনে নিলেন ডা. ঘোষ। ‘‘ফিলিং-এর পর কেউ দুধ-ভাত খায় না। পেয়ারার বীজ ঢুকেছে। সেফটিপিন দিয়ে খোঁচানো হল। উঠে এল ফিলিং-এর খানিকটা অংশ। খাবার ঢোকার রাস্তা তৈরি হয়ে গেল। তা থেকে ফিলিং-এর তলায়ও ক্যাভিটি তৈরি শুরু হল। পরে সেটা থেকেই সমস্যা। তাই ফিলিং মাঝে মাঝে চেক আপ করতে হয়।” কিন্তু অনেকেই তা করেন না।

উপায়?
ক্যাভিটি বড় হয়ে নার্ভ পর্যন্ত চলে গেলে ব্যথা বাড়ে। সেক্ষেত্রে আগে দাঁত তুলে ফেলা হত। এখন রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করে দাঁত বাঁচানো হয়। ডা. ঘোষ জানালেন, ‘‘এতে দাঁতের মধ্যের সংক্রামিত নার্ভ ও রক্তজালিকা বের করে দেওয়া হয়। ওপরে ক্যাপের মতো ক্রাউন পরিয়ে দেওয়া হয়। এই দাঁতই আবার আগের মতো ব্যবহার করতে পারবেন। আর বছরে এক বার স্কেলিং করিয়ে নিলে দাঁত খোয়াবার সম্ভাবনা কমবে।’’

দাঁত যদি বিদায় নেয়
একান্তই যদি দাঁত বিদায় করতে হয়, অবশ্যই সেখানে নকল দাঁত বসিয়ে নেবেন। দাঁত তোলার পর অনেকেই জায়গাটা ফেলে রাখেন। মনে করেন বাকি দাঁতগুলো তো আছেই চিবানোর জন্য। সমস্যা হল, দাঁত তুলে ফেললে মধ্যের ফাঁকা জায়গায় সামনে-পেছনে-ওপরের দাঁতগুলো এগিয়ে-পিছিয়ে আসতে চায়। পরে ওই তিনটে দাঁতেই সমস্যা তৈরি হয়। গাল ভেতরে ঢুকে আসায় যখন-তখন কামড় পড়ে। “এখন ফিক্স পার্সিয়াল ডেনচার করে দেওয়া হয়। এতে পাশের দু’টো দাঁতের সাহায্য নিয়ে দাঁতকে ফিক্স করা যায়। খুলে রাখার ঝামেলা থাকে না। করা যায় ইমপ্ল্যান্টও। ফাঁকা জায়গাটায় মেটাল টাইটেনিয়াম পোস্ট ঢুকিয়ে তার ওপর ফিক্সড নকল দাঁত বসানো হয়।”

শিরশিরে দাঁত
ভাল করে চিবিয়ে খেতে গিয়েই এই সমস্যা! মাছের কাঁটা, মাংসের হাড় দুরমুশ করতে গিয়ে এনামেলের বারোটা বাজে। শুরু হয় শিরশিরানি। ডা. চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘বাসন মাজার মতো করে লোকে দাঁত মাজে। এতে এনামেল ক্ষয়ে দাঁতের ধার ধারালো হয়। তার থেকেও গালে কামড় পড়ে। গাল ফুটো হয়ে ঘা পর্যন্ত হয়ে যায়। হামেশাই দাঁতে কামড় খেলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। বিজ্ঞাপনে দেখা সেনসিটিভ টুথপেস্ট লাগালে সাময়িক ভাবে শিরশিরানি কমে। মূল সমস্যাটা কিন্তু থেকেই যায়। অথচ দাঁতটা একটু ঘষে দিলেই সমস্যা মিটবে।’’

নিজে ডাক্তারি নয়
দাঁতের চিকিৎসা করতে এসে অনেকেই অন্য শারীরিক সমস্যা বলার প্রয়োজন বোধ করেন না। দাঁতই তো। কী আর হবে! ডা. চক্রবর্তী জানালেন, এর থেকে বড় বিপদ হতে পারে। কোনও ক্ষেত্রে দাঁত তোলার জন্য দরকার হয় সিটি স্ক্যানেরও। তা শুনেই অনেকে পিছিয়ে যান। অথচ সেটা না করলে বোঝা যাবে না দাঁতের তলায় অন্য কোনও সমস্যা আছে কি না। যার জন্য দাঁতটা হয়তো তোলাই উচিত নয়। এ সব ক্ষেত্রে অনেকেই অন্য ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে সমস্যা চেপে দাঁত তুলিয়ে নেন। তার পর ব্লিডিং আর কমে না। এই ঘটনা আকছার ঘটছে।

সাবধান হতেই হবে
• প্রেগন্যান্সির কোনও কোনও স্টেজে দাঁতের ট্রিটমেন্ট করা মুশকিল। সমস্যা থাকলে কনসিভ করার আগে দাঁত দেখিয়ে নেবেন।
• কোনও ওষুধ খেলে বা কোনও রকম শারীরিক সমস্যা থাকলে ডেন্টিস্টকে জানাতে ভুলবেন না।
• কনট্রাসেপটিভ পিল খেলেও ডেন্টিস্টকে জানান। কিছু অ্যান্টিবায়োটিক আছে যারা নিজেরা কাজ করলেও পিলের কাজটা বন্ধ করে দেয়।
• দাঁতের চিকিৎসা খুব খরচ সাপেক্ষ। তাই সমস্যা বেশি দূর বাড়তে দেবেন না।

যোগাযোগ: ডা. কুশল নারায়ণ চক্রবর্তী ৯৮৩০৫১৫৪২৭ এবং ডা. সৌমিত্র ঘোষ ৯৮৩০৫৯৯৭৭১


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.