|
|
|
|
|
জঙ্গিকে জেরা করে মিলল অস্ত্র |
দোলেই রাজধানীতে নাশকতার ষড়যন্ত্র ফাঁস
নিজস্ব প্রতিবেদন |
|
হায়দরাবাদের পর কি তবে জঙ্গি নিশানায় ছিল দিল্লির নাম? পুলিশের দাবি, দোলের দিন রাজধানীর একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণের ছক কষেছিল জঙ্গিরা। লিয়াকত শাহ নামে পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত এক হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি ধরা পড়ে দু’দিন আগেই। তাকে জেরা করে আজ দিল্লির জামা মসজিদের কাছে এক অতিথিশালা থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র। তা দিয়ে আর পাঁচ দিন বাদেই জঙ্গিরা একাধিক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর।
যে কোনও সময় দেশ আবার বড় জঙ্গি হানার মুখে পড়তে পারে, এ নিয়ে কিছু দিন আগে পুলিশকে সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। সেই মতো কড়া নজরদারি চলছিল ভারত-নেপাল সীমান্তে। ২০ মার্চ উত্তরপ্রেদেশের গোরক্ষপুর থেকে ট্রেনে দিল্লি আসার সময় পুলিশের জালে ধরা পড়ে সৈয়দ লিয়াকত আলি শাহ নামে এক ব্যক্তি। দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেলের অফিসারদের দাবি, আদতে জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারার বাসিন্দা লিয়াকত ’৯৭ সালে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। সেখানেই দীর্ঘদিন চলে আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ। দ্বিতীয় বার বিয়েও করেন সে দেশেই। শেষে ‘মিশনের’ দায়িত্ব দিয়ে তাঁকে পাঠানো হয় নেপাল। সোজা পথে ভারতে না ঢুকে ঘুর পথে নেপাল সীমান্ত দিয়ে যাতে ভারতে ঢোকা যায়। নির্দেশ মতো করাচি থেকে কাঠমান্ডুর বিমানে উঠে বসেন লিয়াকত। তার পর নেপাল থেকে সীমান্ত পেরিয়ে সোজা ভারতে।
ভারতে ঢোকা ইস্তক লিয়াকতের কাছে পাক-পাসপোর্ট ছিল বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা। কিন্তু ধরা পড়লেই তো পাক যোগসাজশ প্রমাণিত হয়ে যাবে। এই ভয়ে হিজবুলের উপরমহল থেকে নির্দেশ আসে, পরিবার-সমেত ভারতে পা রেখেই নষ্ট করে দিতে হবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট। দিল্লিতে এসে সব থেকে জনবহুল জায়গাগুলো চিহ্নিত করার দায়িত্ব ছিল লিয়াকতের কাঁধে। তবে অস্ত্রশস্ত্র অবশ্য সে সঙ্গে করে আনেনি। মানচিত্র থেকে শুরু করে ঢালাও অস্ত্র- আগে থেকেই জমা হচ্ছিল একে বারে রাজধানীর কেন্দ্রস্থল জামা মসজিদ লাগোয়া এক অতিথিশালায়। পুলিশি জেরায় এই অতিথিশালার ঠিকানা কবুল করে লিয়াকত শাহ।
শুক্রবার তখনও ঘুম ভাঙেনি দিল্লির। ভোর চারটেয় অতিথিশালার দরজায় পৌঁছে যান পুলিশের বিশেষ সেলের অফিসাররা। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার এস এন শ্রীবাস্তব জানান, লিয়াকতের বলে দেওয়া ঘরেই খোঁজ মিলেছে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রের। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২২০ কেজি বিস্ফোরক, তিনটি গ্রেনেড, অত্যাধুনিক একে-৫৬ রাইফেল, সেই সঙ্গে কিছু কাজুবাদাম, আমন্ড আর একটা মেমরি কার্ড। শ্রীবাস্তব এও জানিয়েছেন, জেরায় লিয়াকত স্বীকার করেছে জানুয়ারিতে তাদের জেহাদ কাউন্সিলের বৈঠক বসেছিল। সেখানেই ঠিক হয় আগামী ২৭ তারিখ, দোলের দিন পর পর আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হবে দিল্লিতে। অস্ত্র মজুত করার অপরাধে পুলিশ অতিথিশালার কয়েকজনকে আজ আটক করেছে।
লিয়াকতের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের এই স্পেশ্যাল কমিশনার দাবি করেন, ২০০১ থেকে ’১৩ পর্যন্ত হিজবুল মুজাহিদিনের অন্তত ১৮টি চক্রান্ত বানচাল করে দিতে পেরেছেন তাঁরা। এর আগে শেষ বার বড় জঙ্গি হানার ছক ফাঁস হয়েছিল সেই ২০১১ সালে। এই বারো বছরে ধরাও পড়েছেন ২৮ জন সন্ত্রাসবাদী।
আফজল গুরুর ফাঁসির বদলা নিতেই কি বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা, আজ সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল শ্রীবাস্তবকে। তিনি বলেন, এখনও এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।
তবে লিয়াকত শাহকে ধরার কৃতিত্ব যখন নিজেদের বলে দাবি করছে দিল্লি পুলিশ, তার মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে অন্য বিতর্ক। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের দাবি, সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিয়েছিল লিয়াকত। আত্মসমর্পণ করতেই দিল্লি রওনা হয়েছিল সে।
কুপওয়ারায় লিয়াকতের প্রথম স্ত্রী আমিনা বেগম জানান, পনেরো বছর পর তাঁর স্বামী দেশে ফিরছেন। এ জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল আগেই। ফলে ভিসা, পাসপোর্ট সবই লিয়াকতের সঙ্গে আছে।
জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের দাবি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে তাঁদের অলিখিত চুক্তি আছে, ১৯৯০ সালের পর যাঁরা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল, হানাহানি ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরতে চাইলে সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হবে। রাজ্যকে কিছু না জানিয়ে লিয়াকতকে গ্রেফতার করায় ভবিষ্যতে আর কেউ আত্মসমর্পণ করতে চাইবে না বলেই আশঙ্কা তাঁদের। |
|
|
|
|
|