মেরিনদের মৃত্যুদণ্ড নয়, আশ্বাস নয়াদিল্লির
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ভারতীয় দুই মৎস্যজীবী খুনে অভিযুক্ত দুই ইতালীয় মেরিনকে ফিরিয়ে আনতে পারায় স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে ইউপিএ সরকার। তবে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেই ম্যাসিমিলানো লাত্তোরে ও সালভাতোর গিরোনেকে ভারতে পাঠাচ্ছে ইতালি। তাঁদের মৃত্যুদণ্ড হবে না বলে ইতালিকে আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
কেরল উপকূলের কাছে দুই মৎস্যজীবীকে খুন করায় অভিযুক্ত মেরিনদের ইতালির নির্বাচনে ভোট দিতে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তাঁরা যে ফিরে আসবেন তা সুপ্রিম কোর্টে মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছিলেন ইতালীয় দূত ড্যানিয়েল মানচিনি। কিন্তু পরে দুই মেরিনকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করে ইতালি। ইতালি সরকার জানায়, মেরিনদের বিচার করার এক্তিয়ার ভারতের নেই। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা প্রয়োজন। |
দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে ইতালির উপ-বিদেশমন্ত্রী স্টাফান ডি মিস্টুরা।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি সলমন খুরশিদ। ছবি: পি টি আই |
এর পরেই তোলপাড় শুরু হয় ভারতের সংসদ ও সংবাদমাধ্যমে। কেন মেরিনদের যেতে দেওয়া হল তা নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ শুরু করে বিরোধী দলগুলি। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় ইতালীয় দূত মানচিনির ভারত ছেড়ে যাওয়ার উপরে নিয়ন্ত্রণ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট।
বহু কূটনৈতিক টানাপোড়েনের পরে মেরিনদের ফেরত পাঠাতে রাজি হয় ইতালি। বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ সংসদে জানিয়েছেন, মেরিনদের মৃত্যুদণ্ড হবে না বলে ইতালিকে আশ্বাস দিয়েছে ভারত। কারণ, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিরলতম অপরাধের মধ্যে পড়ে না। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে ফিরলে মেরিনদের গ্রেফতারও করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারত।
ইতালীয় বায়ুসেনার বিমানে মেরিনদের ভারতে আনা হয়েছে। ইতালীয় দূতাবাসে থাকবেন তাঁরা। নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৈরি ফাস্ট-ট্র্যাক কোর্টে মেরিনদের বিচার হবে। মেরিনদের সঙ্গে ভারতে এসেছেন ইতালির উপ-বিদেশমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে আজ বৈঠকও করেছেন খুরশিদ। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বিষয়টি ইউপিএ সরকারের বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন অনেকে। তবে প্রকাশ্যে এ নিয়ে বেশি হইচই করতে রাজি নয় কেন্দ্র। |
মেরিনদের ভারতে ফেরার অপেক্ষায় দিল্লি পুলিশ। ছবি: এ এফ পি |
আবার সরকারকে পুরো কৃতিত্ব দিতেও রাজি নন বিরোধীরা। বিরোধী দলগুলির দাবি, সংসদে তারা বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় সরকারের উপরে চাপ বেড়েছে। তাই আরও উদ্যোগী হতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তা ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের চাপও ছিল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছেন, “ভারতীয় বিচারব্যবস্থার সম্মান রক্ষা হল। তাতে অবশ্যই আমি খুশি।” বিদেশমন্ত্রী খুরশিদের মতে, বিদেশ মন্ত্রক তার কাজ করেছে মাত্র। কূটনৈতিক পথেই কাজ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সরকার বা বিরোধী-কোনও পক্ষেরই কৃতিত্ব দাবি করা উচিত নয়। তবে অনেক চাপ সত্ত্বেও সরকার ইতালির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বন্ধ করেনি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কটাক্ষ, “এখন বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করলে আমার আপত্তি নেই। তবে মানুষ জানেন কূটনৈতিক ভাবে সরকারই উদ্যোগী হতে পারে।”
বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের মতে, সুপ্রিম কোর্টের চাপ না থাকলে মেরিনরা কোনওদিনই ফিরতেন না। সরকারের তাই কূটনীতির বড়াই করা উচিত নয়। পারলে দাউদ ইব্রাহিমকে দেশে ফিরিয়ে আনুন খুরশিদ। সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত ও সিপিএম সাংসদ কে এন বালাগোপালের বক্তব্য, “এটা দেশের মানুষ, সংসদ ও বিচারবিভাগের মিলিত জয়।”
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, সরকার কী ভাবে বিচারের আগেই মেরিনদের কী শাস্তি হবে তা জানিয়ে দিল। একই প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি নেতা শাহনওয়াজ হুসেনও। মেরিনদের ফিরে আসার খবরে কেন্দ্র ও সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উমেন চান্ডি। |
|