ধানের দাম চেয়ে বিক্ষোভ কালনায়
তিন মাস আগে ধান বিক্রি করে এখনও দাম না মেলায় ব্লক অফিসে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন চাষিরা। শুক্রবার কালনা ব্লক অফিসে গিয়ে জনা পঞ্চাশ চাষি দাবি করেন, দাম না দেওয়া হলে ধান ফেরত দেওয়া হোক। দফায় দফায় বৈঠক শেষে প্রশাসনের তরফে সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে দাম মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে চাষিরা বাড়ি ফিরে যান।
চাষিদের অভিযোগ, মাস তিনেক আগে মেদগাছি, মোড়াগাছা, ন’পাড়া টাকপুকুর গ্রামের মোট ১২২ জন চাষি মেদগাছি কৃষি সমবায়ের কাছে ৪১২৩ বস্তা ধান বিক্রি করেন। সেই সময়ে বস্তা পিছু সাড়ে সাতশো টাকা দরে ধান কিনছিল সরকার। তখন ওই চাষিদের দাম দেওয়া হয়নি। তাঁদের ক্ষোভ, পরে বারবার সমবায়ে গিয়ে দাম চাওয়া হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, যে চালকলে ধান পাঠানো হয়েছে, তারা এখনও দাম মেটায়নি। তাই টাকা দেওয়া যাচ্ছে না।
ওই সমবায় সমিতির তরফে জানানো হয়, তারা প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকার ধান কিনেছিল। সরকারের তরফে ধান কেনার নানা আনুষঙ্গিক খরচ ধান চালকলে পৌঁছনোর গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রায় চার লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। ছাড়া আর কোনও টাকা না পাওয়ায় চাষিদের ধানের দাম মেটানো যায়নি। শেষে দিন বিকেল ৪টে নাগাদ সমবায়ের কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে একটি ট্রাক্টরে করে ব্লক অফিসে পৌঁছন চাষিরা। বিডিও অলিভিয়া রায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তাঁরা।

কালনা ব্লক অফিসে চাষিদের সঙ্গে কথা বলছেন বিডিও। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
চাষিরা জানান, বৈঠকে বিডিও তাঁদের জানান, প্রথমে সরকারের গুদাম খালি ছিল না। কিন্তু এখন তাঁরা জেনেছেন, গুদামে চাল ঢুকতে শুরু করেছে। বিডিও শীঘ্রই দাম মেটানোর আশ্বাস দেন। চাষিরা দাবি করেন, তিন মাস আগে যখন তাঁরা ধান বিক্রি করেন, তখন বাজারে ধানের দর ছিল ৬৮০ -৬৯০ টাকা বস্তা। সরকার তখন বেশি দাম দেওয়ায় তাঁরা সমবায়ে ধান দিয়েছিলেন। প্রত্যেককেই বস্তা পিছু দু’কেজি করে ধান বেশি দিতে হচ্ছিল। তবু তাঁরা ধান দিয়েছিলেন। আর তা করেই তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। চাষিদের আরও দাবি, এখন বাজারে ৭২০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। কবে টাকা দেওয়া হবে, নির্দিষ্ট ভাবে বলা হোক, অথবা ধান ফেরত দেওয়া হোক। বিডিও অবশ্য নির্দিষ্ট তারিখ লিখিত ভাবে জানাতে চাননি। তার পরেই বিক্ষোভ শুরু হয়।
চাষিদের ক্ষোভ, টাকা না পাওয়ায় অনেকেই বার বোরো চাষ করতে পারেননি। সংসার চালাতেও অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছে। মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের কিছু চাষি প্রায় এক বছর পরে ধানের দাম পেয়েছেন। তাঁদের ক্ষেত্রেও তেমন ঘটনাই ঘটবে কি না, সে নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন অনেকে। আজিম মণ্ডল নামে এক চাষির ক্ষোভ, “বারো দিন পরে আমার মেয়ের বিয়ে। তিন মাস আগে ধান বিক্রি করেছি। এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা পাওনা আছে। এখনও দেওয়া হচ্ছে না।” মোড়াগাছার বাসিন্দা জাহাঙ্গির শেখ বলেন, “আমি কুড়ি বস্তা ধান বিক্রি করেছিলাম। এখনও দাম পাইনি। পরে চাষ করতে গিয়ে দেনা করতে হয়েছে। এখনও টাকা না দেওয়া হলে বিপাকে পড়ব।”
খবর পেয়ে বিকেল ৫টা নাগাদ মহকুমা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে ব্লক অফিসে পৌঁছন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট চিরন্তন প্রামাণিক। ফের বৈঠক শুরু হয়। ঘণ্টা দুয়েক ধরে আলোচনা চলাকালীন চাষিরা মাঝে -মধ্যেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শেষে চিরন্তনবাবু আশ্বাস দেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সবার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। চাষিরা অনুরোধ করেন, যত শীঘ্র সম্ভব অন্তত পক্ষে আজিম মণ্ডলের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হোক। তা শুনে বিডিও যে চালকল ধান কিনেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে শীঘ্র আজিমের টাকা মেটাতে বলেন। শেষ পর্যন্ত সাড়ে ৬টা নাগাদ বিক্ষোভ থামে। চাষিরা ফিরে যান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.