বাউড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল
পরিকাঠামোয় রুগ্ণ হাসপাতালে রোগীদের কান ফাটিয়ে কাঠ চেরাই
হাসপাতালে ঢুকে যদি কাঠ চেরাইয়ের শব্দ শোনেন, ঘাবড়াবেন না। হাসপাতালের আশেপাশে বেআইনি কাঠকল নেই। কাঠের কাজ চলছে হাসপাতালের মধ্যেই। তবে হাসপাতালে কাঠের আসবাবের খুব একটা দরকার নেই। প্রয়োজনটা হাসপাতাল লাগোয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসনে। তাই কাঠ চেরাইয়ের শব্দে রোগীদের যতই অসুবিধা হোক, মানিয়ে নিতে হবে। এমনই অভিজ্ঞতা হল হাওড়ার বাউড়িয়ার ফোর্ট গ্লস্টার স্টেট জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে।
দেখা গেল, এক তলার একটা ঘরে বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রে তীব্র শব্দে চলছে কাঠ চেরাই। কাঠের গুঁড়োয় ভরে যাচ্ছে চারদিক। হাসপাতালের মধ্যে এত শব্দসাড়া করে কাঠ চেরাই চলছে কেন জানতে চাওয়া হলে, দৃশ্যতই অপ্রস্তুত দেখায় সুপার ঈশ্বর চট্টোপাধ্যায়কে। পরে তিনি বলেন, “ও কিছু না, আমাদের কর্মী আবাসনের কিছু কাজ চলছে। হাসপাতালের এক ঠিকাদার কাজটা নিয়েছেন। এক তলায় তাঁর স্টোররুমে কাজটা চলছে।” কিন্তু তীব্র আওয়াজে রুগিদের তো প্রচণ্ড অসুবিধা হবে? তখন তিনি বলেন, “একটু অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু কী করা যাবে?”
অসুবিধা নয়, কষ্ট হচ্ছে তাঁদের, জানাচ্ছেন নানা ওয়ার্ডের রোগীরা। তাঁদের অন্যতম বাউড়িয়ার শ্যামল মণ্ডল বললেন, “এখন ভগবানই ভরসা।”
বাউড়িয়ার ময়লাপুকুরের এই হাসপাতালের চত্বর ময়লায় ভরাট। এত ময়লা, যে হাসপাতালের পিছন দিকের একটা দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এমন দশা কেন? সুপারের বক্তব্য, “ময়লা সরানোর ব্যাপারে আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি। কিন্তু পুরসভা বলেছে হাসপাতালের চারপাশে যা ময়লা আছে, তুলে হাসপাতালের পাঁচিলের বাইরে ফেলে দিন। আমরা এসে নিয়ে যাব। সেটা কি সম্ভব?” বাউড়িয়ার পুরপ্রধান দেবদাস ঘোষ বলেন, “হাসপাতালের ভিতরে ময়লা সাফাইয়ের দায়িত্ব পৌরসভার নয়। ওরা যদি একটা জায়গায় ময়লা তুলে জমা করে রাখে, তা হলে আমাদের লোক গিয়ে নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে ময়লা সাফ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
হাসপাতালের মধ্যেই চলছে কাঠ চেরাই। ছবি: সুব্রত জানা।
হাসপাতালের মূল ভবনের পিছনের দিকে একতলা একটা বাড়ি প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সংক্রামক রোগে আক্রান্তদের আলাদা রাখার জন্যেই তৈরি হয়েছিল সেটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের দাবি, রাতের বেলা সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। হাসপাতালে নেই কোনও জেনারেটর। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব। নেই নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স। নেই স্ট্রেচারবাহক। শৌচাগার দেখে আঁচ করা কঠিন নয় যে, তা নিয়মিত সাফাই হয় না।
এ তো গেল পরিকাঠামোর দিক। পরিষেবা নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই রোগী বা তাঁদের আত্মীয়দের। জনা দু’য়েক স্বাস্থ্যকর্মী আর দুই নার্সকে নিয়ে কোনও মতে বহির্বিভাগ সামলাতে দেখা গেল এক জন ডাক্তারকে। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর অভিজ্ঞতা, “পেটে ব্যথার জন্য তিন দিন ধরে ভর্তি হয়ে রয়েছি, কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না।”
হাসপাতালের এত সমস্যার কথা কি জানানো হয়নি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে? সুপারের বক্তব্য, “অবশ্যই জানিয়েছি। রোগী কল্যাণ সমিতির প্রতি বৈঠকেই সমস্যাগুলোর কথা বলা হয়। এমনকী, জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের হাসপাতাল ঘুরিয়েও দেখানো হয়েছে, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি।” সুপার জানান, মহকুমাশাসক (হাওড়া গ্রামীণ) সুজয়কুমার আচার্য এই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনি হাসপাতালে এসেছেন মাত্র এক বার।
ডাক্তার
ওয়ার্ড মাস্টার
ল্যাব টেকনিশিয়ান
এক্স-রে টেকনিশিয়ান
নার্স
সাফাইকর্মী
স্ট্রেচার বহনকারি




১৬

২*
নেই
নেই
নেই


নেই
তথা সাফাইওয়ালা
* (আরও ২ জন বাইরে থেকে আসেন)
মহকুমাশাসক বলেন, “রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বৈঠকে বারবারই হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করার জন্যে এবং হাসপাতাল সাফসুতরো করার ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়েছি। কি হয়েছে না হয়েছে, তা সুপারেরই দেখে নেওয়ার কথা।” তাঁর সংযোজন, “সুপারকে সম্পূর্ণ দোষ দেওয়া যায় না। উনি বেশ কিছু দিন উলুবেড়িয়া হাসপাতাল ও ফোর্ট গ্লস্টার স্টেট জেনারেল হাসপাতালের যুগ্ম দায়িত্বে ছিলেন। সম্প্রতি উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদে যোগ দিয়েছিলেন। এখন ওই হাসপাতালের দায়িত্বে রয়েছেন।” মহকুমাশাসকের আশ্বাস, “বিষয়টা রাজ্য সরকারের নজরে আছে। খুব শিগগিরই হাসপাতালের পরিকাঠামোর উন্নতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “খবর পেয়েছি, হাসপাতালটা প্রায় লাটে উঠে গিয়েছে। সব শুনে মনে হচ্ছে, কোথাও একটা সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। আমি খুব শিগগিরই ওই হাসপাতালে যাব এবং সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।”
ততদিন কী হবে? রোগীরা বলছেন, “গরিবের কোনও উপায় নেই। ভগবানই ভরসা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.