দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বেহাল পরিকাঠামোয় ধুঁকছে প্রাথমিক শিক্ষা
শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হতে চলেছে আগামী এপ্রিলেই। কিন্তু বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচটি মহকুমায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির বেশিরভাগেরই বেহাল অবস্থা এই জেলায় শিক্ষার অধিকারকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার পাঁচটি মহকুমা আলিপুর, বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ ও ক্যানিংয়ে রয়েছে ৫১টি চক্র। সব মিলিয়ে জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ৭১০টি। মোট প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ১ হাজার ১০৪ জন। শিক্ষার অধিকার আইনে নিম্ন প্রাথমিকে ৩০ জন পড়ুয়া পিছু উচ্চ প্রাথমিকে ৩৫ জন পড়ুয়া পিছু একজন শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা থাকার কথা। কিন্তু জেলার মধ্যে শহর এলাকা হিসেবে পরিচিত বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার, সোনারপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনুপাত ঠিক থাকলেও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ এলাকাতেই একজন বা দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়েই চলছে পঠনপাঠন। ৮০ থেকে ৯০ জন ছাত্রছাত্রী পিছু মাত্র এক জন শিক্ষক রয়েছেন এমন ছবিও দেখা গিয়েছে। কোথাও আবার দেড়শো পড়ুয়ার জন্য রয়েছেন দু’ জন শিক্ষক কিংবা শিক্ষিকা।
কয়েক বছর ধরে রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। শিক্ষক সমস্যা মেটাতে জেলার কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই পার্শ্বশিক্ষক নেই।
ভাঙা চালে বৃষ্টি হলেই বন্ধ পড়াশোনা। ডায়মন্ড হারবার মহকুমার
মন্দিরবাজার খাদিপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি তুলেছেন দিলীপ নস্কর।
তা ছাড়া পড়ানোর পাশাপাশি প্রায় সব স্কুলেই শিক্ষককে পালন করতে হয় জনগণনা, মিড-ডে মিল-সহ নানা দায়িত্ব। ফলে পঠনপাঠনে যে তাঁরা সেভাবে নজর দিতে পারেন না এমন কথাও জানিয়েছে বহু শিক্ষক। জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা মিলল এমনই ছবির।
মথুরাপুর-১ ব্লকের পশ্চিম চক্রে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৯টি। এর মধ্যে তেঁতুলবেড়িয়া দক্ষিণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এমন আটটি বিদ্যালয় রয়েছে যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র এক। মথুরাপুর-১ ব্লকের উত্তর চক্রে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে ২১টিতেই শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র এক। মথুরাপুর দক্ষিণ চক্রে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫টি। এর মধ্যে ৩টি বিদ্যালয়ে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। মথুরাপুর পূর্ব চক্রে ৭০টি বিদ্যালয়ের ১৩টিতে রয়েছেন একজন করে শিক্ষক। এই ব্লকের সাতঘরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুব্রত ঘোষ বলেন, “বছর দেড়েক ধরে একাই ১১০ জন ছাত্রছাত্রীকে পড়াচ্ছি। চারটি শ্রেণির নাম ডাকা, পড়ানো, মিড-ডে মিসের তদারকি তো রয়েইছে, তার উপর জনগণনার কাজও করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের দিকে সে ভাবে সময় দেওয়া যায় না।”
মথুরাপুর-২ ব্লকের মথুরাপুর দক্ষিণ চক্রের ১৫টি স্কুলে রয়েছে দু’জন শিক্ষক। অন্যান্য চক্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতেও একই চিত্র। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান সুরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “প্রাথমিকে শিক্ষকের সমস্যা-সহ নানা সমস্যা রয়েছে। চেষ্টা হচ্ছে সমস্যা সামাধানের।”
শিক্ষকের সমস্যার পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামোর অবস্থাও খুবই খারাপ। বেশিরভাগ স্কুলবাড়িরই খারাপ অবস্থা। মন্দিরবাজারের চাঁদপুর-চৈতন্যপুর পঞ্চায়েতের কাদিপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঠনপাঠন চলে টালির চালের তলায়। কিন্তু ভাঙা চালে বৃষ্টি হলে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশুনা। যে কোনও সময় চাল ভেঙে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলছে পঠনপাঠন। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেল, নতুন বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ অনুমোদন হলেও জমিজটে তা আটকে আছে। মগরাহাটের উত্তর বিলন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই সমস্যা। টাকা থাকলেও নেই বাড়ি তৈরির জমি। বাড়ির সমস্যার পাশাপাশি কোথাও রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা, কোথাও নেই শৌচাগার, খেলার মাঠ ও গ্রন্থাগার। অভিযোগ রয়েছে মিড ডে মিলের খাবারের মান নিয়েও। যদিও সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরই একই বক্তব্য, একজন পড়ুয়ার মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৪ টাকা ২২ পয়সা। এত কম বরাদ্দে কাবারের মান ভাল রাখা অসম্ভব।
জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলির সমস্যা খতিয়ে দেখার জন্য রয়েছেন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক। কিন্তু বিদ্যালয়ের সমস্যা দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের হাতে তাঁদের দফতরে গিয়ে দেখা গেল অব্যবস্থা সেখানেও। ভবনের অবস্থা ভাঙাচোরা। অধিকাংশ বিদ্যালয় পরিদর্শককে সামলাতে হয় দু’টি করে চক্রের দায়িত্ব। অথচ একটি চক্রেই রয়েছে ১৫০ বা তারও বেশি বিদ্যালয়। ফলে অনেক বিদ্যালয়েই যাওয়া সম্ভব হয় না তাঁদের। রয়েছে কর্মী সমস্যাও। কাজের চাপে একজন বিদ্যালয় পরিদর্শককে অনেক সময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর কাজও করতে হয় বলে জানালেন এক পরিদর্শক।
মথুরাপুর-১ ব্লকের উত্তর ও পশ্চিম চক্রের পরিদর্শক মুকুল গায়েন ও মথুরাপুর-২ ব্লকের পূর্ব ও দক্ষিণ চক্রের পরিদর্শক পলাশ রায় জানান, নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকের সমস্যা মারাত্মক আকার নিয়েছে। ব্যাঘাত ঘটছে পঠনপাঠনে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) ইরাধর রায়চৌধুরি বলেন, “আগামী ৩১ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা রয়েছে। আশা করা যায়, তারপর সমস্যা অনেকটাই মিটবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.