সম্পাদকীয় ১...
দুষ্টের পালন
সুশাসন অর্থাৎ ‘গুড গভর্নেন্স’ কাহাকে বলে? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, তিনি যে ভাবে রাজ্য চালাইতেছেন, সেটাকেই। উদাহরণ হিসাবে তিনি বুধবার কলিকাতার ধাপায় দলীয় পুরপিতার হাতে অন্য এক দলীয় কর্মীর মৃত্যু বা হত্যার ঘটনায় পুরপিতা ও তাঁহার সাঙ্গোপাঙ্গদের গ্রেফতারের নির্দেশের উল্লেখ করিয়াছেন। লক্ষণীয়, স্বাভাবিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ হিসাবে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ওই পুরপিতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে নাই বা করিতে সাহস পায় নাই। সে জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে বাঁকুড়ার জনসভার মঞ্চ হইতে প্রকাশ্যে নিজের অভিপ্রায় ও নির্দেশের কথা জানাইতে হইয়াছে। ইহা কেমন সুশাসন, তাহা মুখ্যমন্ত্রীই জানেন। তবে অনেক গণ্ডগোলের মূলে যে তাঁহার দলেরই তোলাবাজদের দাদাগিরি, ইহা আর গোপন নাই।
‘তোলাবাজদের দলে বরদাস্ত করা হইবে না’, এমন হাওয়াই হুমকি মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিকবার উচ্চারণ করিতে শুনা গিয়াছে। তবে তোলাবাজরা হয়তো অভিজ্ঞতায় বুঝিয়াছে, তাহাদের বাদ দিয়া দলের আধিপত্য অচল, তাই ওই হুমকি তাহারা গায়ে মাখে নাই। গোটা শহর, শহরতলি, মফস্সল, গ্রাম-গঞ্জ ব্যাপিয়া তাহাদের দৌরাত্ম্য উত্তরোত্তর বাড়িয়াই চলিয়াছে। কলিকাতারই মুচিপাড়া থানায় এক বৃদ্ধাকে পুরসভার পানীয় জলের সংযোগ পাইতে চাহিলে শাসক দল আশ্রিত তোলাবাজদের ১০ হাজার টাকা নজরানা দিতে হইবে শুনিয়া আদালতের বিচারপতি বিচলিত বোধ করিয়াছেন। কিন্তু নাগরিক মাত্রেই জানেন, এই নজরানা দেওয়াটাই ইদানীং দস্তুর। ‘সিন্ডিকেট’ নামে খ্যাত নির্মাণশিল্পে ব্যবহার্য উপকরণ সরবরাহকারীদের যে সংগঠন পাড়ায়-পাড়ায় গজাইয়া উঠিয়াছে, তাহা তো তোলাবাজদেরই সংগঠন। পুলিশ-প্রশাসনও এই সব সংগঠনকে বৈধতা দিয়া সমাজের মৌলিক কাঠামোটিকেই পরিবর্তিত করিয়া দিতেছে। এই সব সিন্ডিকেট যে শাসক দলের ছত্রচ্ছায়াতেই অধিক পুষ্টিলাভ করে, তাহা আগের জমানাতেও সহজবোধ্য ছিল, এই জমানাতেও সহজবোধ্য। বিভিন্ন পুরসভার কাউন্সিলরদের সহিত স্থানীয় দুর্বৃত্ত, তোলাবাজ ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাসম্পন্ন দুষ্কৃতীদের নিবিড় যোগাযোগ প্রকট হইয়া পড়ে এক-একটি খুনোখুনির ঘটনায়। রাজ্যের সর্বত্রই এই তোলাবাজদের বেপরোয়া দাদাগিরি জনসাধারণের শ্বাস রোধ করার উপক্রম করিতেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজের সরকারকে ‘গুড গভর্নমেন্ট’ বলিয়া শংসাপত্র দিতেই পারেন। অন্য কেহ না দিলে অগত্যা তাঁহাকেই এ ধরনের শংসাপত্র লিখিতে হইবে। তাঁহার পূর্বসূরি মরূদ্যানের খোয়াব দেখিয়া নিজের পিঠ চাপড়াইতে অভ্যস্ত ছিলেন, তিনিও একই পথের পথিক। কিন্তু তিনি আবার এই হুঁশিয়ারিও দিয়াছেন যে, তাঁহার দলের কাহাকেও যদি ‘ফাঁসানো’ হয়, তবে দল সর্বদা তাঁহার পাশে থাকিবে। প্রশ্ন উঠিবে, আরাবুল ইসলাম কিংবা মুন্না ইকবালের পাশে দলীয় কর্মকর্তাদের এমন দৃঢ় ভাবে থাকার কারণ কি তাঁহাদের ‘ফাঁসানো’ হইয়াছে? কে ফাঁসাইল? তাঁহাদের তো পুলিশ গ্রেফতার করিয়াছে গর্হিত অপরাধের অভিযোগে এবং আদালত জেল-হাজতের আদেশ দিয়াছে! তবে কি দলেরই এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীকে ফাঁসাইতেছে? সেটাও অবশ্য বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব অসম্ভব নয়। প্রতিটি জেলায়, বস্তুত প্রতিটি মহল্লায় এই অভিযোগ এখন বহুশ্রুত যে, তোলাবাজির বখ্রা কিংবা সরকারি-বেসরকারি বরাদ্দ কুক্ষিগত করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা শাসক দলে তীব্র গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জন্ম দিয়াছে, যাহার জেরে এমনকী খুনোখুনিও হইতেছে। দলের শীর্ষ নেত্রীর পক্ষেও হয়তো এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া সম্ভব হইতেছে না। তথাপি তিনি সুশাসনের বড়াই করিতেছেন। সুশাসন বলিতে তিনি প্রকৃত রাজধর্ম বোঝেন কি? রাজধর্ম পালনে যে নিরপেক্ষতা বজায় রাখিতে হয়, পুলিশকে দলীয় পক্ষপাত ও আনুগত্যে নত করিলে তাহা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। মাঝেমধ্যে ‘সেমসাইড গোল’ হইয়া গেলে অর্থাৎ দলীয় ভৈরবের হাতে দলেরই নেতা নিহত হইলে কিংবা পুলিশ খুনে অভিযুক্ত হইলে যদি মুখ্যমন্ত্রীকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিতে হয়, তাহাকে, আর যাহাই হউক, সুশাসন বলে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.