|
|
|
|
মমতার হাত ধরলেই বিপদ, বার্তা সিপিএমের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সনিয়া গাঁধীর থেকেও দরদ বেশি সিপিএমের! পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নিয়ে ‘চিন্তিত’ হয়ে উঠেছেন সিপিএম নেতারা। রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের সাবধান করে তাঁরা বলছেন, “তৃণমূলের সঙ্গে জোট করবেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে রাজ্য থেকে আপনাদের মুছে দিতে চান।”
ডিএমকে ইউপিএ ছাড়ার পরে গত কাল শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে মমতা কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়ানোর পরেই সিপিএমের উদ্বেগ উথলে উঠেছে। তারা ভয় পাচ্ছে, পাছে পঞ্চায়েত অথবা লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে জোট বা আসন সমঝোতা হয়ে যায়। এমনিতেই বিধানসভা ভোটের দু’বছর পরেও বাম ভোট ব্যাঙ্কে ভাঙন অব্যাহত। সম্প্রতি তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সেটা প্রমাণিত। একটি আসনে তারা জিতেছে স্রেফ কংগ্রেস-তৃণমূল ভোট ভাগাভাগির জেরে। এখন কংগ্রেস-তৃণমূল হাতে হাত মেলালে বামেদের দশা আরও বেহাল হবে।
সিপিএম পলিটব্যুরোর এক নেতার কথায়, “মমতার এই কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানো থেকে যদি নতুন করে পশ্চিমবঙ্গে জোটের রাস্তা তৈরি হয়, তা হলে পঞ্চায়েতে লঙ্কাকাণ্ড বাধবে। বামেদের যেটুকু পাল্টা লড়াই দেওয়ার সম্ভাবনা ছিল, সেটুকুও যাবে।” শুধু মমতার তরফে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ানো নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী গত কাল মমতার সঙ্গে ফোনে কথা বলায় এ কে গোপালন ভবনের চিন্তা আরও বেড়েছে। আর সেই ভয় থেকেই সংসদের সেন্ট্রাল হলের আলোচনায় মমতা সম্পর্কে কংগ্রেস নেতাদের সাবধান করে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন সিপিএম সাংসদরা। |
|
প্ল্যাকার্ড হাতে তৃণমূল নেতা তাপস পাল ও শতাব্দী রায়। বৃহস্পতিবার সংসদে। নিজস্ব চিত্র |
সিপিএম নেতাদের যুক্তি, প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের তেমন বড় মাপের কোনও নেতা নেই। এই সুযোগে মমতা রাজ্যে কংগ্রেসকে গিলে ফেলতে চাইছেন। নিজস্ব অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই কংগ্রেসের উচিত মমতার থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। জাতীয় রাজনীতির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে কংগ্রেস হাইকমান্ড যদি পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে রফা করে, তা হলে ভুল হবে। বরং অধীর চৌধুরী, দীপা দাসমুন্সিরা যে তৃণমূল বিরোধিতা চালাচ্ছেন, সেটাই সঠিক পথ।
মুখে অবশ্য সিপিএম নেতারা বলছেন, জনসমর্থন কমা নিয়ে তাঁরা নন, চিন্তিত আসলে মমতাই। ইয়েচুরির কথায়, “অপশাসনের কারণে মমতা সরকারের জনপ্রিয়তা কমছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন সভায় তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল নেত্রী নিজেই তাই শরিকের সন্ধানে নেমেছেন। ডিএমকে সমর্থন তুলে নেওয়ায় কংগ্রেস বিপাকে পড়েছে। এই পরিস্থিতিটাই কাজে লাগাতে চাইছেন মমতা।”
কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ফাটল যাতে জোড়া না-লাগে সে জন্য গত কয়েক মাস ধরে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দৌত্য চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিএম নেতারা। রাহুলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠখ করেছন ইয়েচুরি। এখন সরকার বিপাকে পড়লে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া বা তৃতীয় ইউপিএ সরকার গঠিত হলে তাকে বাইরে থেকে সমর্থন কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দিচ্ছে না বামেরা। রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে যে বোঝাপড়ায় যাওয়া সম্ভব নয়, সেটা বাম নেতারা বিলক্ষণ জানেন। অথচ রাজনীতির নিয়মেই কংগ্রেস-তৃণমূল সমঝোতা হতে পারে। আর তা বুঝেই সেই সম্ভাবনা সর্বশক্তি দিয়ে আটকাতে চাইছেন বাম নেতারা। তুলে আনছেন তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গ। শ্রীলঙ্কা প্রশ্নে কেন্দ্রের পাশে দাঁড়ানোর যুক্তি হিসেবে মমতা বলেন, “আমাদের দল বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে নাক না-গলানোর নীতি নিয়ে চলে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি কেন্দ্রের উপরেই ছেড়ে দিই।” সিপিআই নেতা পল্লব সেনগুপ্তের পাল্টা প্রশ্ন, “বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তিটাও তো বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন! তা হলে উনি সেটাও কেন্দ্রের উপরেই ছাড়ছেন না কেন?” তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, তিস্তা চুক্তির সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির তুলনা চলে না। তিস্তার ক্ষেত্রে রাজ্যের জল বাংলাদেশে যাবে। রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ বিপাকে পড়বেন। তাই ওই চুক্তির বিরোধিতা করা হচ্ছে। |
|
|
|
|
|