বেশ কিছু দিন ধরেই আলগা হচ্ছিল তাঁর শাসনের বাঁধন। আসন টলমল হওয়ার ইঙ্গিত মিলছিল বিরোধী নেতাদের কথায়। তবে কখনওই আশা করা যায়নি দলের নেতারাই স্বয়ং দলনেত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এত দূর এগোবেন।
বৃহস্পতিবার ক্যানবেরায় পার্লামেন্টে এক অনুষ্ঠান চলাকালীনই চরম অপদস্থ হতে হল অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডকে। প্রকাশ্যেই তাঁর নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টিরই প্রাক্তন নেতা তথা ক্যাবিনেট মন্ত্রী সাইমন ক্রিন। দাবি, সেপ্টেম্বরে পুনর্নির্বাচিত হয়ে ফিরে আসতে হলে অবিলম্বে দলে নেতৃত্ব বদলের প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, লেবার পার্টির নেতার আসনে কেভিন রুডকে ফেরানোর জন্যই এ দিন পার্লামেন্টে এমন হুলুস্থূল কাণ্ড বাধান ক্রিন।
যাঁর প্রত্যাবর্তন চেয়ে এত শোরগোল, তাঁর দাক্ষিণ্যেই শেষমেশ স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। বিনয়ের সঙ্গে কেভিন রুড জানান, কোনও অবস্থাতেই কথার খেলাপ করবেন না তিনি। ক্যানবেরায় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে রুড জানান, ২০১০-এ নেতৃত্ব দখলের লড়াইয়ে পরাজয়ের পরই তিনি গিলার্ডকে জানিয়েছিলেন, জোর করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা তিনি আর করবেন না। চেষ্টা করবেন পার্টি সমর্থকদের যথেষ্ট সমর্থন আদায়ের। অপেক্ষা করবেন নেতার আসন খালি হওয়া পর্যন্ত। রুডের এই বক্তব্যের জেরেই বাড়া ভাতে ছাই পড়ে ক্রিন ও তাঁর অনুগামীদের।
এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্রিনের ছোড়া চ্যালেঞ্জেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রুডের জয়। ক্রিন বলেছিলেন, “গিলার্ডের রাজত্ব এখন রোগগ্রস্ত। লেবার পার্টির সমর্থকদের ভোট নিলে জয়ী হবেন রুডই।” দিনের শেষে তাই ক্রিনের কথা মতো পরীক্ষা দিতে রাজিও হন গিলার্ড। তত ক্ষণে রুড অবশ্য নেতৃত্ব দখলের লড়াই থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বীহীন এই নির্বাচনে জয়ী হন গিলার্ড। সারা দিনের রাজনৈতিক নাটকের শেষে যে প্রশ্নটা দানা বাঁধল তামাম রাজনীতিবিদদের মনে, তা হল, চূড়ান্ত অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে আদৌ আর কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবে লেবার পার্টি? বিরোধী দলনেতা টনি অ্যাবর্ট (লিবারাল ন্যাশনাল কোয়ালিশন)-এর অভিমত, “দেশে এখন গৃহযুদ্ধ চলছে। যত দিন কেভিন রুড ও জুলিয়া গিলার্ড পার্লামেন্টে থাকবেন, তত দিন এই যুদ্ধ চলতেই থাকবে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটাই উপায়, বদল হোক সরকার। যত শীঘ্র সম্ভব নির্বাচন হোক অস্ট্রেলিয়ায়।” এই অনুষ্ঠান আরও একটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে।
এ দিন ক্যানবেরায় প্রকাশ্যেই “ফোর্সড অ্যাডপশন” আইনের জন্য ক্ষমা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী গিলার্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে সত্তরের দশক পর্যন্ত যে আইন দশ হাজারেরও বেশি মায়ের কোল জোর করে খালি করেছে বলে অভিযোগ, সেই আইনের বিরুদ্ধে এই প্রথম মুখ খুললেন কোনও অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী। আইনের দোহাই দিয়ে দীর্ঘ তিরিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে অস্ট্রেলীয় সরকার, গির্জা, হাসপাতাল এমনকী চ্যারিটি সংস্থাগুলিও এই প্রথাকে তোষামোদ করে গিয়েছে বলেই অভিযোগ। যা নিয়ে সরব হয়েছিলেন দেশেরই একটা বড় সংখ্যক মানুষ। এমনকী পার্লামেন্টের সদস্যদের মধ্যেও এই আইনের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠছিল। অভিযোগ ছিল, অসংখ্য অবিবাহিতা, তরুণী মায়ের কোল খালি করে তাঁদের সন্তানদের বিবাহিত দম্পতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই আইনের সাহায্যে। |