আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ঐক্য রাখতে জেতা আসন শরিক আরএসপিকে ছাড়ল জলপাইগুড়ি জেলা সিপিএম। ১৯৭৮ সালে রাজ্যে প্রথম ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন শুরুর পরে এই প্রথম জেলায় বাম ঐক্য হতে চলেছে। সিপিএমের জেলা কার্যালয় সুবোধ সেন ভবনে পঞ্চায়েতে আসন রফা নিয়ে বুধবার চতুর্থ বারের জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক হয়। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পরে রফা সূত্র বের হয়েছে।
জেলা পরিষদের ৩৭টি আসনের ২৮টিতে সিপিএম, ৮টি আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসনে লড়াই করবে। এবারে প্রথমেই জেলা পরিষদে ঐক্য তৈরি করে নিচুতলার নেতা কর্মীদের ঐক্যের বার্তা দেওয়া হল বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত।
গত পঞ্চায়েত ভোটে আরএসপিকে ৯টি আসন ছাড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল সিপিএম। আরএসপির দাবি ছিল, ১২ আসন। বারবার বৈঠকেও আসন রফা না হওয়ায় জোট ভেস্তে যায়। সিপিএম একক ভাবে ৩৪টির মধ্যে ২৯টি আসনে জিতে জেলা পরিষদ দখল নেয়। আরএসপি ৩টি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি আসনে জয় পায়। শুধু গতবার নয়, অতীতের সব নির্বাচনেই জেলা পরিষদই বাম ঐক্যের মূল কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ বারে রফা হল কোন সূত্রে। রাজ্যে ক্ষমতায় না থাকায় বামদলগুলির সংগঠনেও প্রভাব পড়েছে। সেই বাধ্যবাধকতাই এ বারে বাম জোটের রাস্তা মসৃণ করে দেয় বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ বারের জোট আলোচনায় ময়নাগুড়ি আসনই রফাসূত্রের কাজ করে।
সিপিএম দখলে থাকা ময়নাগুড়ির জেলা পরিষদ আসন আরএসপিকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সঙ্গে কুমারগ্রাম, আলিপুরদুয়ার, মাদারিহাটে এ বারের নতুন তিনটি জেলা পরিষদ আসন আরএসপিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সিপিএম। ময়নাগুড়ির বিধানসভা আরএসপির দখলে থাকায় আরএসপি সেখানকার জেলা পরিষদের আসন দাবি করে আসছে। নিজেদের জেতা আসন ছেড়ে দিয়ে সিপিএম সেই দাবি মেনে নেওয়ায় বৈঠকে আরএসপিও জেলার পরিষদের ১৫টি আসনের দাবি থেকে সরে ৮টি আসনে রাজি হয়।
জেলা সিপিএম সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “এ দিন বৈঠককে ঐতিহাসিক বলা যায়। জেলায় এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সার্বিক বাম ঐক্য তৈরি হয়েছে।” প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিক সান্যাল এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “জেলা বামফ্রন্টের এ সিদ্ধান্ত এক নতুন পথের দিশারি।” যদিও জেতা আসন ছেড়ে দেওয়ায় সিপিএমের অন্দরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ১৫টি আসনের দাবি ছেড়ে ৮টিতে রফা করলেও, রফা সূত্রে নৈতিক জয় দেখছে আরএসপি। জেলা সম্পাদক সুনীল বণিক বলেন, “বাম ঐক্যের স্বার্থেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা যেমন আমাদের দাবিতে অনড় থাকিনি। তেমন সিপিএম-সহ অন্য শরিকও নমনীয়তা দেখিয়েছে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে জেলা পরিষদে ৩ আসন দাবি করলেও এ দিন ১টি আসনের রফাতেই সন্মতি দেয়। জেলা সম্পাদক প্রবাল রাহা বলেন, “এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি যাতে বামফ্রন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।” |