জেলকর্মীদের উপরে ভরসা নেই কারা দফতরের। বন্দিদের মোবাইল বন্ধে ফের জেলের মধ্যে জ্যামার বসাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য কারা প্রশাসন। বছর দশেক আগে জ্যামার বসানোয় জেল-সহ আশপাশের বসতি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ত। আলিপুরে জেলাশাসকের বাসভবনেও মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যেত না। এ বার তা যাতে না হয় তাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করে দিল্লির তিহাড় জেলের মডেলের জ্যামার বসানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। কারণ, তিহাড়ে এই জ্যামার ব্যবহারে সাফল্য মিলেছে। তবে এ বার আর জ্যামার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব রাখা হচ্ছে না জেল সুপার এবং কর্মীদের উপরে। যে সংস্থা জ্যামার বসাচ্ছে, তাদের উপরে তা নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে পাঁচ বছরের জন্য এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাঁচ বছর পরে পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলের মধ্যে বন্দিদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে দেদার মোবাইল ফোন। যার সাহায্যে তোলাবাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ জেলের মধ্যে বসেই নিশ্চিন্তে চালিয়ে যাচ্ছে দাগি অপরাধীরা। আমেরিকান সেন্টারে হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আফতাব আনসারি কলকাতার আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মধ্যে বসে ফেসবুক থেকে শুরু করে পাকিস্তানে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা চালিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কারা দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে শুধু কলকাতার তিনটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বিভিন্ন সময়ে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচশোরও বেশি মোবাইল এবং সিম কার্ড উদ্ধার হয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে কারা দফতর। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “জেলের মধ্যে মোবাইল আটকানোর নানা চেষ্টা চালিয়েও সুফল মেলেনি। দেখা গিয়েছে, একমাত্র জ্যামার বসিয়েই জেলের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার পুরো বন্ধ করা সম্ভব।” |
তবে এই উদ্যোগ নতুন নয়। আগের বার জ্যামার বসিয়ে সমস্যা হয়েছিল আশপাশের এলাকার নেটওয়ার্ক নিয়েও। তা ছাড়া, ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খারাপও হয়ে গিয়েছিল জ্যামার। শেষে, এক প্রকার বাধ্য হয়েই সেই জ্যামার তুলে নেয় কারা দফতর।
এ বার তার পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই আশ্বাস দিচ্ছেন কারা দফতরের কর্তারা। তিহাড় জেলে যে দু’টি সংস্থা জ্যামার বসিয়েছিল, এখানেও তাদেরই সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কারা দফতরের এক কর্তা জানান, গত বছর নভেম্বরে দমদম এবং প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পরীক্ষামূলক ভাবে জ্যামার বসানো হয়। তাতে সাফল্য মিলেছে। এর পরেই কলকাতার তিনটি জেলে জ্যামার বসানোর অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে খরচ হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। প্রাথমিক ভাবে অর্থ দফতরের সবুজ সঙ্কেতও মিলেছে বলে খবর। ওই কর্তা বলেন, “সবুজ সঙ্কেত মেলার পরেই দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের একটি দল কলকাতা আসছে। তাঁরা জ্যামার সংস্থাগুলির সঙ্গে তিনটি জেলে ম্যাপিংয়ের কাজ করবেন। তার পরেই জ্যামার বসবে।’’
কারা দফতর সূত্রের খবর, অতীতে জ্যামার রক্ষণাবেক্ষণে জেলকর্মীদের গাফিলতি ছিল বলে অভিযোগ। জেলের মধ্যে মোবাইল পাচারেও জেলকর্মীদের হাত থাকার নজির মিলেছে। তাই এ বার থেকে জ্যামার নিয়ন্ত্রণ করা হবে নির্দিষ্ট ‘সার্ভার’-এর মাধ্যমে। তা থাকবে জ্যামার সংস্থাগুলির অধীনেই। কোনও জায়গায় জ্যামার বিকল হলে, তা-ও ধরা পড়ে যাবে সার্ভার-এ।
শুধু জ্যামার নয়, জেলের নিরাপত্তা বাড়াতে এ বার রাজ্যের তিনটি জেলে ‘ব্যাগেজ স্ক্যানার’ বসানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে। এতে খরচ প্রায় এক কোটি। কারা দফতর সূত্রে খবর, ব্যাগেজ স্ক্যানার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে মেদিনীপুর, আলিপুর এবং প্রেসিডেন্সি জেলে ব্যাগেজ স্ক্যানার রয়েছে। এখন বসানো হচ্ছে দমদম, জলপাইগুড়ি এবং বহরমপুর জেলে। |