শিক্ষার অধিকার আইন
সঠিক তথ্য জানতে পরিদর্শনে জোর
জেলা জুড়েই প্রাথমিক স্কুলগুলি ধুঁকছে। কোথাও ঘুপচি ক্লাসরুমে গাদাগাদি করে বসে পড়ুয়ারা, কোথাও বা গোটা স্কুলে এক জন মাত্র শিক্ষকই সম্বল। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার অধিকার আইন রূপায়ণে নতুন করে তৎপর হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। মূলত দু’টি বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। ১) পরিদর্শন, ২) সর্বশিক্ষা দফতরের সঙ্গে সমন্বয় স্থাপন। এই দুই ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকায় সঠিক তথ্য সামনে আসছে না বলে মনে করেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা চেয়ারম্যান স্বপন মুর্মু। তাঁর কথায়, “এ বার আমরা পরিদর্শনের উপর জোর দিচ্ছি। যাতে সঠিক তথ্য উঠে আসে। যে তথ্য নিয়ে সর্বশিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করতে হবে। তাহলে সমস্যা সমাধানে খুব একটা সমস্যা হবে না।”
এ ক্ষেত্রেও অবশ্য প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এতদিন পরিদর্শন প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ছিল। হঠাৎ কী ভাবে তাতে গতি আসবে? শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরি থেকে স্কুল, শিক্ষক, ছাত্র বা অভিভাবক সকলের সঙ্গে সমন্বয় তৈরি বা সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর ও সাব ইন্সপেক্টরদের। প্রতিটি চক্রে একজন করে একজন করে সাব ইন্সপেক্টর থাকার কথা। অর্থাৎ পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬৯টি চক্রের জন্য ৬৯ জন সাব ইন্সপেক্টরের পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই পদে রয়েছেন মাত্র ৪২ জন আধিকারিক রয়েছেন। বাকি ২৭টি পদ শূন্য! প্রতিটি ব্লকে একজন করে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর থাকার কথা। জেলার ২৯টি ব্লক। অথচ অ্যাসিস্ট্যান্ট ইন্সপেক্টর রয়েছেন ১৮টি ব্লকে। যেখানে পর্যাপ্ত সংখ্যক আধিকারিকই নেই, সেখানে সুষ্ঠু ভাবে পরিদর্শনের কাজ হবে কী করে? কী ভাবেই বা উপযুক্ত নথি পাওয়া যাবে? চেয়ারম্যানের অবশ্য বক্তব্য, “বর্তমানে যাঁরা রয়েছেন তাঁদের দিয়েই যতটা সম্ভব পরিদর্শন করানো হবে। এছাড়াও যাতে শূন্য পদে আধিকারিক নিয়োগ করা যায় সে জন্যও রাজ্য সরকারকে জানিয়েছি।”
স্কুল পরিদর্শন যে গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কোনও স্কুলে শিক্ষকেরা নিয়মিত আসছেন কিনা, স্কুল সম্পর্কে অভিভাকদের কোনও অভিযোগ রয়েছে কিনা, স্কুলভবনের অবস্থা কেমন, শৌচালয়, পানীয় জল-সহ অন্য পরিকাঠামো বেহাল কিনা সবই সহজে জানা যায়। কিন্তু পরিদর্শন না করলে স্কুলের দেওয়া তথ্যের উপরেই নির্ভর করতে হয় সংসদকে। এর ফলে কিছু স্কুল, যাঁদের প্রধান শিক্ষকেরা সক্রিয় বা যে সব স্কুল শহর লাগোয়া তাঁরাই একাধিক বিষয়ে বরাদ্দ পেয়ে যান। একথা অবশ্য স্বীকারও করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। ডেবরার বালিচক প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকের দেওয়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়-সহ সম্প্রতি তাঁর কাছে ২০টি স্কুলের তালিকাও পৌঁছেছে। যে সব স্কুলের বাড়ির অবস্থা খুবই খারাপ। তবু অতিরিক্ত ক্লাসঘরের বরাদ্দ মেলেনি। চেয়ারম্যান বলেন, “পুরনো নথি দেখে নয়, এ বার থেকে পরিদর্শনের পর স্কুলগুলিকে অতিরিক্ত ক্লাসরুম দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সর্বশিক্ষা দফতরের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয়ও রাখা হবে। যাতে কোনও স্কুল বঞ্চিত না হয়।”
শুধু এটাই নয়, এখনও অনেক স্কুল রয়েছে যে সব স্কুল ভাড়া বাড়িতে চলে বা আটচালায়। আবার একটি ক্লাসরুম রয়েছে এমন স্কুলও রয়েছে। যদিও এই ধরনের স্কুলগুলি বেশি পুরসভা এলাকাতেই রয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা সব পুরসভার পুরপ্রধানদের আবেদন জানিয়েছি, তাঁরা যাতে জমি দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।” সরকারি জমি হোক বা কোনও ব্যক্তি যদি জমি দানে ইচ্ছুক থাকে এ রকম নথি সংগ্রহের জন্যই পুরসভাগুলিকে আবেদন জানানো হয়েছে। চেয়ারম্যান বলেন, “জমি পেয়ে গেলে সর্বশিক্ষার মাধ্যমে আমরা স্কুলের ভবন তৈরি করে দেব।”
মার্চ মাস শেষ হলেই শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়ে যাবে। তার আগে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি যে একেবারেই অসম্ভব তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে সংসদের এই উদ্যোগ আন্তরিক হলে সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিমত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.