সরকার কবে কিনবে, অপেক্ষায় আলুচাষিরা
লুর ফলন ভাল হলেও মুখে হাসি নেই চাষিদের। কারণ ফলন স্বাভাবিক হলেও আলুর দাম উঠছে না বাজারে। গোটা রাজ্যের মতোই পশ্চিম মেদিনীপুরের চাষিদেরও মাথায় হাত। আলু বিক্রি না করে দাম বাড়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা। রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি বিপণন দফতরে সেই নির্দেশিকাই এসে পৌঁছয়নি।
পশ্চিম মেদিনীপুর কৃষি দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জেলায় আলু চাষ হয়েছিল প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বার সেখানে ৭৫ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অকাল বর্ষণ এবং নানা কারণে বিনপুর-১, গড়বেতা-১, ২, ৩ এবং শালবনি ব্লকগুলির কিছু-কিছু এলাকায় আলুর ধসা রোগ হয়েছিল। তবে বাদবাকি সব জায়গাতেই আলুর ফলন স্বাভাবিক হয়েছে। জেলার কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “ফলন ভাল হচ্ছে ঠিক। তবে সব এলাকায় আলু এখনও তোলা হয়নি। তাই এ বার কত আলু উৎপাদন হয়েছে, এখনই বলা যাবে না।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় ষাট শতাংশ আলু মাঠ থেকে উঠেছে। কিন্তু বাজারে দাম না থাকায় চাষিরা সেই আলু বিক্রি করতে চাইছেন না। হিসাবটা হল সার, খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন কারণে এ বার বিঘা প্রতি চাষিদের খরচ হয়েছে ১৮-১৯ হাজার টাকা। ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি কম-বেশি ৪০ কুইন্টাল। চাষিদের মতে, নিদেনপক্ষে কুইন্টাল প্রতি ৫০০ টাকা দরে আলু বিক্রি হলে লোকসান এড়ানো যাবে। কিন্তু বাজারে আলুর দাম অতটা উঠছেই না। উল্টে দাম প্রতি দিন ওঠানামা করছে। এমনকী আলু তোলার মরসুমের শুরুতে চাষিরা ৩৫০ টাকাতেও আলু বিক্রি করেছেন। এই অবস্থায় জেলার বেশিরভাগ চাষি আলুর দাম বাড়ার অপেক্ষা করছেনকেউ মাঠেই গাদা করে রেখে দিয়েছেন, কেউ বা বাড়িতে এনে রেখেছেন। কিছু চাষি হিমঘরেও আলু রাখতে শুরু করেছেন।
মাঠেই পড়ে রয়েছে আলু। গড়বেতায় নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের আলুচাষিদের একটা বড় অংশই মাঠ থেকে পাইকারদের আলু বিক্রি করেন। তাঁদের কাছ থেকে আবার তা কিনে নেয় হিমঘর। এক মাত্র সম্পন্ন চাষিরাই নিজেরা হিমঘরে আলু রাখতে যান। এ বার গোড়াতেই আলুর দর পড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে হিমঘর মালিক ও ব্যবসায়ীরা বেশি ফলন ছাড়াও অন্তত দু’টি নির্দিষ্ট কারণ দেখাচ্ছেনএক, গত মরসুমে আলু বিক্রির ব্যাপারে সরকারের কড়াকড়ি, ধরপাকড় এমনকী মামলা করা। দুই, এ বার যথেষ্ট ব্যাঙ্কঋ
ণ না পাওয়া। পশ্চিম মেদিনীপুরের হিমঘর মালিক সুনীল রানা বলেন, “গত বছর আলু রেখে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ বারে আবার ব্যাঙ্ক থেকে লোনও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আলু কেনার সাহস পাচ্ছি না। ”
ফি বছর বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগঢ়-সহ ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনে নিতেন। এ বার সেই চাহিদাটাও নেই। কেন? জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “গত বছর ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর সময় সরকারি ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এ বার সেই আতঙ্কে ভিন্ রাজ্যের ব্যবসায়ীরা সে ভাবে আলু কিনছেন না।” তা ছাড়া পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশেও এ বার ভাল আলুর ফলন হয়েছে। ফলে চাহিদা কমেছে।
গোয়ালতোড়ের আমলাশুলির কানন বেরা, পিংবনির সরোজ খান, গড়বেতার সন্ধিপুরের দেবাশিস সাঁতরা, গড়বেতার ধাদিকার শৈলেন মল্লিক, চন্দ্রকোনা রোডের স্বপন সরকার, সুকুমার ঘোষেরা বলেন, “মাঠ থেকে সব আলু তুলে নিয়েছি। কিন্তু দাম না ওঠায় বিক্রি করিনি। ক’দিন আর এই ভাবে আলু রাখতে পারব, বুঝতে পারছি না।” চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ির আলি মহম্মদ খান, ঝাঁকরার হীরা ঘোষেরা বলেন, “এ বারে আমাদের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। প্রথমে হাতে টাকা পেতে কিছু আলু ৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে বিক্রি করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরে দাম বেশি পাব। কিন্তু দিন দিন যে হারে দাম কমছে, তাতে পথে না বসতে হয়।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কৃষি বিপণন দফতর শীঘ্রই প্রশাসনিক উদ্যোগে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
সেই আশ্বাসই যা ভরসা চাষিদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.