জার্সি বদলায়। কিন্তু জাত মরে না। র্যান্টি মার্টিন্সরা সবসময়ে সেরা। ‘সুপার ক্লাস ম্যাচ উইনার!’
বিশ্ব ফুটবলে এমন উদাহরণ ঢের রয়েছে। যেমন জুয়ান মাতা। রিয়াল মাদ্রিদ, ভ্যালেন্সিয়া হয়ে চেলসিতে এসেও তিনি একই রকমভাবে হিট। আবার সের্জিও আগুরো, আটলেটিকো মাদ্রিদে পাঁচ বছর খেলার পর এখন ম্যান সিটির জার্সি গায়েও ফুল ফোটাচ্ছেন।
প্রয়াগের নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারও ডেম্পোতে আট বছর কাটিয়েছেন। পাঁচটি আই লিগ দিয়েছেন। তবু খিদে কমেনি এতটুকু। কলকাতায় এসেও একইরকম ভাবে সফল তিনি। তাঁর হাত ধরেই স্বপ্নপূরণ প্রয়াগ ইউনাইটেডের।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর যখন ড্রেসিংরুমে কার্লোস, সংগ্রাম, রফিকরা মেতে উঠেছেন সেলিব্রেশনে তখন এক কোণে চুপ করে দাঁড়িয়ে র্যান্টি। কাছে গিয়ে দেখা গেল চোখ ছলছল করছে। ধরা পড়ে যেতেই হেসে ফেললেন। বললেন, “আমার ছেলেমেয়েদর কথা দিয়ে এসেছিলাম গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করব। ওঁদের কথা রাখতে পেরেছি। এটা খুশির অশ্রু।”
|
র্যান্টির দিন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
এই জয়টা কিভাবে সেলিব্রেট করতে চান র্যান্টি? পুরোদস্তুর ‘ফ্যামিলি ম্যান’-এর মতোই তাঁর জবাব, “পরিবারের সঙ্গে জয়ের এই আনন্দটা ভাগ করে নিতে চাই। স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করব, মজা করব।” পরে অবশ্য র্যান্টির স্ত্রী তিতিলায়ো ফোন করে নির্দেশ দেন, “তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো। আমি তোমার পছন্দের খাবার তৈরি করে রেখেছি।” গিন্নির নির্দেশ না মেনে উপায় নেই! সঙ্গে সঙ্গে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে দিলেন র্যান্টি। স্ত্রীর ফোন রেখে লাজুক মুখে বললেন, “তিতিলায়ো খুব ভাল রান্না করে। ওর হাতের রান্না অসাধারণ। আজ নিশ্চয়ই আমার পছন্দের নাইজিরিয়ান ডিশ তৈরি করে রেখেছে।”
এরই মধ্যে কার্লোস এসে র্যান্টিকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানালেন। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারকে পাশে নিয়ে কোস্তারিকার বিশ্বকাপার বলে দিলেন, “র্যান্টির কাছে আমরা সবাই কৃতজ্ঞ।” বুধবারের এই ছবি দেখার পর কে বলবে, শিলিগুড়িতে ক’দিন আগে পেনাল্টি মারা নিয়ে প্রয়াগের দুই তারকার মধ্যে তুমুল ঝামেলা হয়েছিল। শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রয়াগ ইউনাইটেড প্রকৃত অর্থে ইউনাইটেড হয়ে উঠল এ দিন। জেমস সিংহের ছেলে নেলসন এ দিন বাবার খেলা দেখতে মাঠে এসেছিল। অলিভার কানের মত গোলকিপার হওয়ার স্বপ্নে বুঁদ ছোট্ট নেলসন এ দিন র্যান্টির গোল দেখার পর বলে দিলেন, “আমি র্যান্টি আঙ্কেলের মতো স্ট্রাইকার হতে চাই।”
প্রয়াগ শিবিরেও পুরো উচ্ছ্বাসটা ছিল র্যান্টিকে ঘিরে। বোতলের জল দিয়েই র্যান্টিকে ভিজিয়ে দিলেন বেলোরা। সংগ্রাম, দীপকরা বলছিলেন, “র্যান্টির জন্যই আমরা বদলা নিতে পারলাম। এই জয়টা ওকেই উৎসর্গ করলাম।” রফিক, লালকমলদের এই উচ্ছ্বাসকে দ্বিগুণ করে দিলেন কর্তারা। জেতার পুরস্কার ২৫ লক্ষ সহ আরও ১২ লক্ষ টাকা ফুটবলারদের মধ্যে ভাগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। |