প্রশ্নের মুখে নামনি সুবনসিরি বাঁধ প্রকল্প,
উদ্বেগে যোজনা কমিশনের কমিটিও
গেরুকামুখের গোড়াতেই গলদ! এমনটাই মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ সি ডি থাট্টে ও এম এস রেড্ডি। নামনি সুবনসিরির বিতর্কিত নির্মীয়মাণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে যোজনা কমিশনের গড়া থাট্টে-রেড্ডি তদন্ত কমিটির জমা দেওয়া রিপোর্ট সাফ দেখাচ্ছে, অতি ভূকম্পপ্রবণ এলাকায় বেলে পাথরের ভিত্তির উপরে গড়ে ওঠা এই বাঁধের ভিত ও গঠন আদপেই সন্তোষজনক নয়।
২০০০ মেগাওয়ট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রস্তাবিত নামনি সুবনসিরি বাঁধ নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক চলছে। তবু পরিবেশ দফতর, কেন্দ্রীয় জল আয়োগ ও অন্যান্য সমস্ত বিভাগের ছাড়পত্র পেয়ে এনএইচপিসি, গেরুকামুখে বৃহৎ নদীবাঁধ গড়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। ২০০৯ সালের বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট ও তারপর অসম বিধানসভার বিশেষ কমিটির রিপোর্টে বাঁধের নির্মাণকাজের ধরন ও নক্শা নিয়ে সমালোচনা করা হলেও কাজ থামেনি। বরং মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রদ্যোৎ বরদলৈ বিশেষজ্ঞদের মত মানার ‘প্রতিশ্রুতি’ দিয়েও নাগাড়ে বাঁধ গড়ার পক্ষে সওয়াল করে গিয়েছেন। শেষ অবধি গত বছর কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, আসু, অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ-সহ প্রায় ৫০টি সংগঠন একত্রে আন্দোলন ও অবরোধে নামলে এনএইচপিসি কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। ততদিনে বাঁধ ও প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ। ইতিমধ্যে গত বছর জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় যোজনা কমিশনের গড়া দুই সদস্যের বিশেষ তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দেয়। বিশেষজ্ঞ সি ডি থাট্টে ও এম এস রেড্ডি বাঁধের নক্শা, স্থানীয় ভূপ্রকৃতি, নদীর প্রকৃতি, প্রাণী-জগৎ, অববাহিকা অঞ্চলের জনবসতি-সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে বর্তমান বাঁধের বিপক্ষেই মত দিয়েছেন। রিপোর্টটি আট মাস পরেও কেন্দ্র বা রাজ্য জনসমক্ষে আনেনি। এমন কী তথ্য-অধিকার আইনের ভিত্তিতে রিপোর্টটি চাইলে যোজনা কমিশন তা দিতে অস্বীকার করে। সম্প্রতি, কেএমএসএস নেতা অখিল গগৈ দাবি করেন, রিপোর্টটি রাজ্য সরকারের হাতে এসেছে। তারপরে প্রদ্যোৎ বরদলৈ রিপোর্ট পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। শেষ পর্যন্ত যোজনা কমিশন থেকেই ফাঁস হয়ে গিয়েছে থাট্টে-রেড্ডি কমিটির ওই রিপোর্ট।
কর্মযজ্ঞ। আপাতত থমকে আছে সুবনসিরির এই নির্মীয়মাণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। —নিজস্ব চিত্র
কী রয়েছে রিপোর্টে?
থাট্টে ও রেড্ডির মতে, যে পাথরের বুকে বাঁধ গড়া হয়, নিয়মমতো সেই পাথরের চরিত্র, বাঁধের কংক্রিটের সমান বা তার থেকে বেশি মজবুত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু গেরুকামুখের বাঁধ গড়ে উঠেছে নিতান্তই দুর্বল বেলে পাথরের উপরে। যা দুর্বল হতে বাধ্য। কমিটি বলছে, “এই এলাকায় এমন ধরনের বাঁধ গড়ার অনুমতি এবং বাঁধের ভিত নির্মাণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় জল নিগম (সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন)-র সবুজ সংকেত কখন এবং কী ভাবে মিলেছে—এনএইচপিসির রিপোর্ট বা অন্য কোনও বিভাগের প্রাপ্ত নথিতে সে বিষয়ের উল্লেখই নেই।” তদন্তের সময় থাট্টের সঙ্গে থাকা নির্মাণ বিশেষজ্ঞ জে এন খাতানিয়ার বলেন, “বাঁধের নির্মাণকাজ দেখে থাট্টে ও রেড্ডি আদপেই সন্তুষ্ট নন। বাঁধ ভাঙলে কী হতে পারে, তার কোনও মূল্যায়ণ এনএইচপিসি করেনি। সাম্প্রতিক ভূকম্পের ভিত্তিতে কম্পনপ্রাবল্যের সীমা পরিমাপ করা হয়েছে। অথচ অসমে ১৯৫০, ১৮৯৭ সালে যে ধরণের ভূমিকম্প হয়েছে তা মাথায় রেখে, কম্পন অভিঘাতের সহনক্ষমতা অনেকটা বাড়ানো উচিত ছিল। তদন্তের সময় ব্রহ্মপুত্র বোর্ড জানায়, ভিত গঠনের জন্য মাটির ১৬ মিটার নীচে শক্ত পাথরের স্তর রয়েছে। অথচ এনএইচপিসি পরে দাবি করে, মাটির মাত্র ৮ মিটার নীচেই শক্ত পাথর পেয়ে তারা ভিত গড়েছে। যা হতে পারে না।” রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালে ভূকম্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা ও বিশেষজ্ঞদের জমা দেওয়া নেতিবাচক রিপোর্টের পরেও এনএইচপিসি কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো কাজ চালিয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের মত সরাসরি অমান্য করা হয়েছিল। রিপোর্টে ভূমিকম্পের অভিঘাত প্রসঙ্গের পাশাপাশি, ধসের প্রাবল্য নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি রিপোর্ট বলছে, এই ধরনের বাঁধ গড়ার আগে, বাঁধ নক্শা মূল্যায়ন প্যানেল (ডিডিআরপি) গড়া নিয়ম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এনএইচপিসি তার তোয়াক্কা করেনি। গেরুকামুখের বাঁধ গড়ার প্রস্তাব যখন মঞ্জুর হয়, তখন এটি বহুমুখী বাঁধ হিসাবে স্বীকৃত হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বর্তমান বাঁধটি কেবলই বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। নির্মাণকালে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বা অববাহিকার অন্যান্য প্রয়োজন মেটাবার কথা সে ভাবে ভাবাই হয়নি। থাট্টে-রেড্ডির মতে, রাজ্যের ব্রহ্মপুত্র বোর্ড এই বিষয়টি নিয়ে কার্যত চোখ বন্ধ করে ছিল।
অবশ্য রিপোর্ট বলছে, ডলফিনের বসতি বা মাজুলির উপরে এই বাঁধের কোনও প্রভাব পড়বে না। থাট্টে ও রেড্ডি কেন্দ্রকে পরামর্শ দিয়েছেন, যেন অবিলম্বে সুবনসিরি অববাহিকার প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের উপরে বাঁধের প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা করা হয়। সুবনসিরি অববাহিকার জন্য স্বচ্ছ, নিরপেক্ষা স্বতন্ত্র ‘ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ গড়া হোক। গড়া হোক নিশ্চিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.