দু’রকম ভাড়ার সুযোগে প্রতারণা
লোহা বহনে রেলকে ফাঁকি ১৬০০ কোটি
য় বাড়াতে রেলপথে লৌহ আকরিক পরিবহণে দু’রকম ভাড়া চালু করেছিল রেল মন্ত্রক। চার বছর পরে দেখা গেল, দু’রকম ভাড়ার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা প্রতারণা করায় রেলের লোকসান হয়েছে ১৬০০ কোটি টাকা! রেল বোর্ড এই প্রতারণার অভিযোগের তদন্ত করছে। রেলের নিজস্ব তদন্তে সন্তুষ্ট না-হলে সিবিআই-কে তদন্তভার দেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী।
রেল মন্ত্রক ২০০৮-’০৯ সালে সিদ্ধান্ত নেয়, যে-সব সংস্থা দেশের মধ্যে কোনও কাজের জন্য লৌহ আকরিক নিয়ে যাবে, তাদের ভাড়া হবে এক রকম। আর যারা বিদেশে লৌহ আকরিক রফতানি করবে, তাদের দিতে হবে বাড়তি ভাড়া। কতটা বেশি টাকা লাগবে? দেশের মধ্যে লৌহ আকরিক পরিবহণে যে-ভাড়া দিতে হবে, বিদেশে রফতানির ক্ষেত্রে তা হবে ৩১% বেশি।
দেশে ব্যবহারের জন্য, নাকি বিদেশে রফতানির জন্য লোহা বহন করা হচ্ছে, নির্দিষ্ট ফর্মে আগে তা রেলকে জানিয়ে দেওয়াটাই নিয়ম। রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেই ফর্ম পূরণ করেও বেশির ভাগ সংস্থা দেশের মধ্যে সরবরাহের নামে কম ভাড়া দিয়ে লৌহ আকরিক রফতানি করে বিদেশে। বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে প্রাথমিক তদন্তে অন্তত ১০টি সংস্থার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে রেল। তাতেই ওই বিপুল পরিমাণ লোকসান ধরা পড়েছে। ক্ষতি ঠিক কতটা হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তে তা পরিষ্কার হবে। ভাড়া নিয়ে এ ভাবে প্রতারণায় আরও কয়েকটি সংস্থার নাম জড়াবে বলে মনে করছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।
পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে রেল বোর্ড। কমিটিতে প্রতিটি রেল জোনের দু’জন কর্তা আছেন। দু’মাসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রেল মন্ত্রকের কর্তারা জানান, প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ১০টি সংস্থার কাছে বকেয়া টাকা চেয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সূত্রের খবর, প্রতারণার প্রথম অভিযোগ ওঠে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে। তার পরেই দেখা যায়, যে-ক’টি জোনে লোহা পরিবহণ করা হয়েছে, তার প্রায় সর্বত্রই একই অভিযোগ উঠেছে।
রেলের ভিজিল্যান্স বিভাগ সূত্রের খবর, প্রতারণার অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ মেলে মন্ত্রকের নিজস্ব অডিটেই। রেল-কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেন। তাঁরা দেখেন, দু’রকম ভাড়া চালু করার পর থেকে চার বছরে রেলের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৬০০ কোটি টাকা। ভাড়া বাবদ ফাঁকি দেওয়া অর্থ ও জরিমানা যোগ করেই ওই অঙ্ক দাঁড়িয়েছে। তার পরেই সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। বোর্ড সূত্রের খবর, অভিযুক্ত সংস্থাগুলির বেশির ভাগই পূর্বাঞ্চলের। রেলের অডিট ও ভিজিল্যান্স বিভাগের কর্তাদের ধারণা, শেষ পর্যন্ত লোকসানের অঙ্ক আরও বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট সকলের চোখ এড়িয়ে এই প্রতারণা চলছিল কী ভাবে?
রেলকর্তারা বলছেন, তদন্তে সেটাও জানা যাবে। রেল প্রতিমন্ত্রী অধীরবাবু বলেন, “আমাদের কাছে আরও অনেক খবর রয়েছে। প্রতিটি তথ্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের সময় কোনও রাজনৈতিক অনুরোধ গ্রাহ্য করা হবে না।” রেল সূত্রের খবর, প্রতারণার বিষয়টি ইতিমধ্যে সিবিআই-কে জানানো হয়েছে।
উঠেছে অন্য একটি প্রশ্নও। একই পণ্যের ক্ষেত্রে দু’রকম ভাড়া নেওয়ার নিয়ম কতটা যুক্তিযুক্ত? এই নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে রেল বোর্ডে। রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুর বলেন, “একই পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে দু’রকম ভাড়া কতটা কার্যকর হবে, আগেই তা খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।” তিনি জানান, নব্বইয়ের দশকে লবণ পরিবহণের ক্ষেত্রেও দু’রকম ভাড়া নেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে জালিয়াতির খবর আসায় কয়েক মাসেই মধ্যেই সেই ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ বারেও কি তা-ই হবে?
রেল বোর্ড সূত্রের খবর, প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসার পরেই দু’রকম ভাড়ার নিয়মের ব্যাপারে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হবে। কারণ, রেল বোর্ডের একটি অংশ মনে করছে, দু’রকম ভাড়া চালু থাকলে ফাঁকি দেওয়া টাকা মেটানোর নোটিস পাওয়া সংস্থাগুলি আদালতে যেতে পারে। বোর্ডের অন্য অংশ মনে করছে, এমন নিয়ম আদৌ রেল মন্ত্রক তৈরি করতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। সব মিলিয়ে নিজেদের তৈরি দু’রকম ভাড়ার নিয়ম নিয়ে এখন নিজেরাই খানিকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে রেল মন্ত্রক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.